بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
খালেস তাওহিদ প্রতিষ্ঠার লক্ষে
ইসলাম-ধর্মে শিরকের পাশাপাশি শিরক প্রবেশের দরজা-জানালাও চিরতরের জন্য বন্ধ করে দেয়া
হয়েছে। একারণে কবর সংক্রান্ত যে সব বিষয় রাসূলুল্লাহ ﷺ শিক্ষা দিয়েছেন (যথা যিয়ারত, সালাম ও দুআ) সেগুলো ছাড়া অন্য কোনো কিছু করার বিন্দুমাত্র অবকাশ
ইসলামে নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে কবর-মাজারকে সম্মানসূচক সিজদা করা,
গিলাফ চড়ানো,
চুমু খাওয়া,
তাতে বাতি জ্বালানো,
তার সামনে মাথা নোয়ানো-এগুলো বড় গুনাহ
ও শিরকী কাজ। এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে অনেক দলীল রয়েছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি দলীল
রেফারেন্সসহ পেশ করা হল।
১. কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা
বলেন- وَّ اَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ
اللّٰهِ اَحَدًاۙ
নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহের
মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না। (সূরা জিন ১৮)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ
তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবায়ের, আতা,তলক
ইবনে হাবীব প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আয়াতের সিজদার স্থানসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য সিজদার
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ। অতএব এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে
সিজদা করো না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১)
২. সহীহ বুখারির হাদিসে এসেছে,
রাসূল ﷺ বলেছেন,
لَعَنَ
اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى، اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর
লা’নত হোক। কারণ, তারা
নিজেদের নাবীগণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। (সহীহ বুখারী ১৩০৭)
৩. সহীহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে,
حَدَّثَنِي
جُنْدَبٌ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ قَبْلَ أَنْ يَمُوتَ بِخَمْسٍ، وَهُوَ
يَقُولُ: ……أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ
أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ
مَسَاجِدَ، إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ
হযরত জুনদুব রাযি. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
রাসূল ﷺ মৃত্যুর
পূর্বে পাঁচটি বিষয় বলেছিলেন, [এর মাঝে]…… বলেন,
তোমাদের পূর্ববর্তী কত উম্মত স্বীয় নবী
ও বুজুর্গদের কবরকে সেজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সেজদার স্থান বানিও
না। আমি তোমাদের তা হতে বারণ করছি। (সহীহ মুসলিম ৫৩২)
তাদের প্রথমে বিদ'আত ও শিরিক এবং তাওহিদ কার নাম,সেটা নিয়ে বুঝাবেন।তাদের সাথে তাওহিদ সম্পর্কে আলোচনা
করবেন।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আগমন ও দাওয়াতি কাজ এবং সাহাবাদের দাওয়াতি কাজের অংশ বিশেষ
সময়ে সময়ে তাদের সামনে তুলে ধরবেন।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আবির্ভাবের
পূর্বে মানুষরা কিভাবে শিরিকে লিপ্ত ছিলো,রাসূলুল্লাহ সাঃ কিভাবে শিরিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন,সবিস্তারে তাদের সামনে ফুটিয়ে তুলবেন।
বিশেষ করে বিদ'আত কি? ও
তার শাস্তি কি হতে পারে? এগুলো
তাদের সামনে ফুটিয়ে তুলবেন।
বিদ'আত কাকে বলে? এসম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/75005/
আরো জানুন: https://ifatwa.info/4570/
** শুধু ঐ মৃতের জানাযা
পড়তে হবে, যিনি
মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মুসলমান পরিবারের কোনো সদস্য যদি নাস্তিক হয়,
যদি সে আল্লাহ-রাসূলকে অস্বীকার করে অথবা
আল্লাহ রাববুল আলামীন, রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কুরআন মজীদ বা শরীয়তের অকাট্য অন্য কোনো বিধিবিধান নিয়ে
কটূক্তি, কটাক্ষ
করে তবে সে কাফের; বরং
মুসলিম-পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বা জীবনের একটি অংশে মুসলমান থেকে পরবর্তীতে অবিশ্বাসী
হওয়ায় সে নিকৃষ্টতম কাফের। শরীয়তের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘মুরতাদ।’ এদের শাস্তি
কাফেরদের চেয়েও বেশি। এ সকল অবিশ্বাসী ও মুরতাদের জানাযায় অংশ গ্রহণ করা,
তাদের জানাযায় ইমামতি করা সুস্পষ্ট হারাম।
এমনকি তাদের নিকটতম মুসলমান আত্মীয়দের জন্যও এদের জানাযা পড়া জায়েয নেই। এমনিভাবে
যারা প্রকাশ্যে নিজেদেরকে মুসলমান বলে, কিন্তু বাস্তবে সে কাফের ও অবিশ্বাসী,
এরা হল মুনাফিক। আর মুনাফিকের অবিশবাসের
বিষয়টি যদি প্রকাশ পেয়ে যায় তবে তার জানাযা পড়ারও সুযোগ নেই।
কাফের,
মুশরিক, অবিশ্বাসী নাস্তিক, মুরতাদ তথা অমুসলিমের জানাযার নামায হারাম হওয়ার বিষয়টি
শরীয়তের সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَا
تَقُمْ عَلَى قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ
فَاسِقُونَ.
(তরজমা) কখনো তাদের কেউ মারা গেলে তুমি তার জানাযা পড়ো
না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িও না (দুআ-ইস্তিগফারের জন্য বা দাফন-কাফনের জন্য)। তারা
তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং না-ফরমান অবস্থায় মারা গেছে।-সূরা
তাওবা (৯) : ৮৪), তরজমা
: তাফসীরে উসমানী, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন)
তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ.
আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেন-
هٰذَا نَصٌّ
فِيْ الامْتِنَاعِ مِنَ الصَّلاٰةِ عَلىٰ الْكُفَّار
অর্থাৎ এটি সকল কাফেরের জানাযা
নিষিদ্ধ হওয়ার সুস্পষ্ট দলিল।-আলজামি’ লিআহকামিল কুরআনিল কারীম ৮/১৪০
এ জন্যই এ ব্যাপারে উম্মতের
সকল ফকীহ একমত। কোনো মাযহাবেই এ বিষয়ে ভিন্নমত নেই। (দ্রষ্টব্য : হানাফী ফিকহের জন্য
: কিতাবুল আছল ১/৪১১; আলমাবসূত,
সারাখসী ২/৫৪;
মালেকী মাযহাবের জন্য : আলমুদাওয়ানাহ
১/১৬৩; মাওয়াহিবুল
জলীল ৩/৭০; আলবয়ান
ওয়াত তাহসীল ২/২৭৭
যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায়
মৃত্যুবরণ করেছে একমাত্র তার জন্যই দুআ করা যাবে। এছাড়া অন্য কোনো ধর্মের লোক বা অবিশ্বাসী-মুরতাদদের
জন্য কোনোক্রমেই দুআ করা যাবে না, অন্য কাউকে দুআ করতে অনুরোধও করা যাবে না। এটা সুস্পষ্ট হারাম।
আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে তার নবীদেরকে কাফের-মুশরিকদের জন্য
দুআ-ইস্তিগফার করতে সুস্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন। এমনকি যদি ঐ মৃত কাফের নবীর পিতা
বা পুত্রও হয়। (দ্রষ্টব্য : সূরা তাওবা (বারাআহ) (৯): ৮০,
১১৩, ও ১১৪; সূরা হুদ (১১) : ৪৫, ৪৬, ৪৭)
মুসলিম উম্মাহর কোনো ফকীহ
বা আলেমের এ বিষয়ে ভিন্ন মত নেই।-(আলমাজমূ ৫/১২০)
সুতরাং কোনোক্রমেই কাফের,
মুশরিক বা বে-দ্বীন মুরতাদের জন্য দুআ
করা বা দুআর জন্য অনুরোধ করা যাবে না। এমন দুআ কবুলের কোনো সম্ভাবনা তো নেই-ই;
বরং দুআকারী এবং তাকে অনুরোধকারী উল্টো
হারাম কাজ করার গুনাহয় লিপ্ত হবে। কেউ যদি না জেনে বা না বুঝে এমনটি করে ফেলে তবে
অবিলম্বে আল্লাহর দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করে নিবে।
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে তাদের কর্মকান্ড থেকে শিরকের বিষয়টি স্পষ্ট
যে, তারা শিরকে লিপ্ত। তওবা করা ছাড়া গায়রুল্লাহকে সিজদা করা অবস্থায় যদি কেউ ইন্তেকাল
করে তাহলে সে মুশরিক। সন্তানের উচিত পিতাকে বুঝানো। সাধ্যের সবটুকু দিয়ে
বুঝানো। কিন্তু পিতার সাথে বিআদবী করা যাবে না। কটুকথা বলা যাবে না। দরদের সাথে,
মোহাব্বতের সাথে বুঝানো। নিজের চেষ্টা
অব্যাহত রাখা। আল্লাহর কাছে হেদায়াতের জন্য দুআ করতে থাকা। খেয়াল রাখতে কিছুতেই পিতার
প্রাপ্য হক থেকে পিতাকে বঞ্চিত করা যাবে না। তাকে ইজ্জত,
সম্মান যথার্থই করতে হবে।
যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম
তার মুশরিক পিতাকে বুঝিয়েছেন। দাওয়াত দিয়েছেন। যথাসাধ্যভাবে। কিন্তু বেআদবী করেননি।
একইভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আপন চাচা আবু তালেবকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত দাওয়াত দিয়ে গেছেন।
কিন্তু কখনোই তার সাথে রূঢ় আচরণ করেননি। তার হকও নষ্ট করেননি।
সুতরাং আপনার বাবা চাচাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এই শিরক ও ঈমান বিদ্ধংসী কাজ থেকে বিরত
রাখার চেষ্টা করবেন। ধর্য্য সহকারে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার
চেষ্টা করবেন। আল্লাহ অবশ্যই এর জন্য আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করবেন।