بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
কোনো নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে।
নামাজী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা গুনাহের কাজ। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব
দিয়ে কিংবা নামাজির সামনে কোনো কিছু দিয়ে আড়াল করে— নামাজিকে
অতিক্রম করা যাবে। নামাজির সামনে কোনো রেখে যাওয়ার বস্তুকে ‘সুতরা’ বলে।
নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নামাযীর
সামনে সুতরা দেয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। নামাজী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমের ব্যাপারে
হাদিসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাদীসটি হল-
عن أبي هريرة قال قال النبي صلى الله عليه و
سلم ( لو يعلم أحدكم ما له في أن يمر بين يدي أخيه معترضا في الصلاة . كان لأن
يقيم مائة عام خير له من الخطوة التي خطاها (سنن ابن ماجه، كتاب الصلاة، باب
المرور بين يدى المصلى، رقم الحديث-946)
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নামাজির সামনে
দিয়ে অতিক্রম করে, সে যদি
জানত (এর গুনাহ কিংবা শাস্তি কতটা ভয়াবহ)— তাহলে নামাজরত ব্যক্তির সামনে
দিয়ে এ পদক্ষেপের তুলনায় তার কাছে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে হতো।’ (সুনানে ইবনে
মাজাহ, হাদিস : ৯৪৬; কানজুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল
আফআল, হাদিস : ১৯২৫২)
তবে প্রয়োজনে নামাজির সামনে সুতরার ব্যবস্থা করে অতিক্রম করা
যাবে। এক হাত বা তার চেয়ে দীর্ঘ কোনো বস্তু যেমন- চেয়ার, টুল ও কাঠের স্ট্যান্ড ইত্যাদি সুতরা হিসেবে
ব্যবহার করা যাবে। নামাজির সামনে তা দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯৯)
এছাড়াও অন্যান্য হাদিসে নবীজি নামাজ শুরু করার আগে সুতরা সামনে
রেখে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা জেনে নেয়া
উচিত।
যদি নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমের জন্য সুতরা না থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো- নামাজির
সামনে যদি সুতরা না থাকে এবং মসজিদ বেশ বড় ও অনেক প্রশস্ত হয়; তাহলে নামাজি ব্যক্তির দুই কাতার সামনে
দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। তবে বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে এভাবে অতিক্রম না করা উত্তম। (খুলাসাতুল
ফাতাওয়া : ০১/৫৯)
মসজিদ যদি বড় হয় অর্থাৎ
মসজিদের প্রশস্ততা চল্লিশ হাতের বেশি হয় তাহলে উক্ত মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার
সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। পক্ষান্তরে চল্লিশ হাতের চেয়ে ছোট মসজিদ হয়, সেক্ষেত্রে নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে
‘সুতরা (প্রতিবন্ধক) ব্যতীত’ অতিক্রম করা জায়েজ হবে না। সুতরা সামনে রেখেই প্রয়োজনে
অতিক্রম করতে পারবে। (ফাতহুল কাদির : ১/৩৫৪; ফতওয়ায়ে শামি : ১/৬৩৭; আল-বাহরুর রায়েক : ২/১৭)
তবে নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে যদি অন্যদের যাতায়াতের সম্ভাবনা
থাকে, তাহলে নামাজ শুরু করার পূর্বেই
সামনে ‘সুতরা’ রেখে নামাজ শুরু করা সুন্নত। আর সুতরার, সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো- এক হাত হওয়া।
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.)-কে সুতরার পরিমাণ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করা হলে— তিনি বললেন, ‘হাওদার লাঠির মতো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫০০)
এর ব্যাখ্যায় হজরত আতা (রা.) বলেন, হাওদার লাঠির দৈর্ঘ্য হলো- এক হাত বা তার
চেয়ে একটু বেশি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৬৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১০৪; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬৮)
মাঝে মাঝে মসজিদে কিছু মুসল্লিকে দেখা যায়, তারা দ্রুত বের হওয়ার জন্য নামাজরত ব্যক্তির
সামনে দিয়ে রুমাল বা হাতে থাকা জায়নামাজ সুতরা হিসেবে ব্যবহার করে হাঁটতে থাকে। নামাজি
ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার জন্য এই ধরনের ‘চলমান সুতরা’— সুতরা
হিসেবে যথেষ্ট নয়। তাই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। (বাদায়িউস সানায়ি : ১/৫০৯; শরহুল মুনিয়াহ পৃষ্ঠা : ৩৬৭)
কেউ যদি অজ্ঞতাবশত নামাজি
ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে তাকে হাত দিয়ে কিংবা একটু উচ্চস্বরে তাসবিহ পড়ে সতর্ক
করাও জায়েজ আছে। তবে নামাজি ব্যক্তির জন্য এমন না করাই উত্তম। তবে হ্যাঁ, তার সামনে দিয়ে কারও অতিক্রম করার আশঙ্কা
থাকলে, নামাজ শুরু করার আগেই সুতরা
সামনে রাখা সুন্নত। (আল-বাহরুর রায়িক : ২/১৮; আল-মুহিতুল বুরহানি : ২/২১৩; ফাতহুল কাদির : ১/৩৫৫; বাদায়িউস সানায়ি : ১/৫০৯)
অনেক সময় দেখা যায়— কোনো মুসল্লি নামাজরত ব্যক্তির
সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করে। এরপর আরেক জনের সামনে সুতরা রেখে আবার অতিক্রম করে।
এইভাবে সে একাধিক ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে মসজিদ থেকে বের হয়। এইভাবে অতিক্রম করা
জায়েজ, এতে অসুবিধা নেই। তবে এতে
নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ বিনষ্ট হতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা থেকে বিরত থাকতে
হবে। অবশ্য এরূপভাবে অতিক্রম করলেও অতিক্রমকারীর গুনাহ হবে না। তবে নামাজি ব্যক্তির
উচিত— মানুষ যাতায়াতের স্থানে সুতরা সামনে রেখেই নামাজে দাঁড়ানো।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১০৪; ফাতাওয়া
তাতারখানিয়া : ১/৬৩১)
★
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
কেউ যদি নামাজি ব্যক্তির সামনে উপবিষ্ট থাকে, তাহলে তার জন্য সেখান থেকে চলে যাওয়া বা
অন্যত্র সরে যাওয়ার সুযোগ আছে। এতে তার কোনো অসুবিধা হবে না, এটি নাজায়েজ নয়। কারণ, হাদিসে অতিক্রম করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আর সামনে থেকে চলে যাওয়া অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত হয় না।
অবশ্য নামাজরত মুসল্লির সামনে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিনা প্রয়োজনে
উঠে আসা অনুচিত। এতে তার নামাজের খুশুখুজু (একাগ্রতা ও আল্লাহভীরুতা) বিনষ্ট হতে পারে।
এছাড়াও অন্যান্য মুসল্লিরা তার সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। তাই নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত
যথাস্থানে বসে থাকা উত্তম। বিভিন্ন ছুরত বিস্তারিত উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ৪০ দিনের ইবাদত নষ্ট হয় মর্মে
সুস্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। নিম্নোক্ত হাদীসটি পাওয়া যায়: আবু
হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নামাজির সামনে
দিয়ে অতিক্রম করে, সে যদি
জানত (এর গুনাহ কিংবা শাস্তি কতটা ভয়াবহ)— তাহলে নামাজরত ব্যক্তির সামনে
দিয়ে এ পদক্ষেপের তুলনায় তার কাছে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে হতো।’ (সুনানে ইবনে
মাজাহ, হাদিস : ৯৪৬; কানজুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল
আফআল, হাদিস : ১৯২৫২)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী
যদি জানত— এতে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে, তাহলে চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও
ভালো মনে করতো।’ আবুন নাজর বলেন, আমার জানা নেই— হাদিসে চল্লিশের কী অর্থ।
চল্লিশ দিন, চল্লিশ
মাস, নাকি চল্লিশ বছর? (আবু দাউদ, হাদিস : ৭০১; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৬; সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৪১৭)