আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
470 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (-1 points)
আসসালামু আলাইকুম,
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকিদা হলো নবীদের দ্বারা কোনো প্রকার গুনাহ হয় না, নবীরা মাসুম। কিন্তু নবীদের দ্বারা ভুল হয়।

প্রশ্ন: এ ভুল কোন ধরনের ভুল? শরীয়তের বিষয়ে ভুল নাকি দুনিয়াবি ব্যাপারে ভুল?
যদি দুনিয়াবি ব্যাপারে তাদের ভুল হয়, তাহলে কয়েকটি ভুল উল্লেখ করবেন।

1 Answer

0 votes
by (567,180 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


মূল প্রশ্নের উত্তরের পূর্বে আমরা কিছু তথ্য জেনে নেই।
  
আমাদের সাথে রাসূল সাঃ এর সাথে শুধু এতটুকু মিল রয়েছে যে, তিনিও আমাদের মত মাটির তৈরী মানুষ। তিনিও সাধারণ মানুষের মতই পিতা-মাতা থেকে জন্ম নিয়েছেন। তিনিও সাধারণ মানুষের মতই বিবাহ করেছেন। তিনিও সাধারণ মানুষের মত পারিবারিক জীবন যাপন করেছেন। সামাজিক জীবন যাপন করেছেন। তিনিও বাজারে যেতেন। কষ্ট পেতেন। খুশি হতেন। রাগ হতেন। দুঃখবোধ করতেন। এককথায় মানুষের স্বভাবজাত যা কিছু রয়েছে আমাদের পেয়ারা নবী সাঃ এর মাঝে সবই ছিল। তাই তিনি এক হিসেবে একজন সাধারণ মানুষ।
,
কিন্তু তিনি আসলে সাধারণ মানুষ হলেও মূলত অসাধরণ মানুষ। মানুষ গোনাহ করে কিন্তু আমাদের পেয়ারা নবী সাঃ কখনোই গোনাহ করেননি। নবী হবার আগেও না পরে করারতো কোন প্রশ্নই উঠে না। মানবিক কোন দুর্বলতা তার মাঝে ছিল না। মানুষের মাঝে যেসব দোষণীয় বিষয় আছে এমন কোন দোষের আঁচড়ও ছিল না আমাদের পেয়ারা নবীর মাঝে। 
,
অনেক পার্থক্য আছে আমাদের ও আমাদের পেয়ারা নবী সাঃ এর মাঝে। যা পয়েন্ট হিসেবে উদ্ধৃত হল-
১-
রাসূল সাঃ নিষ্পাপ ছিলেন। কখনোই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কোন গোনাহ করেননি।
২-
মানবিক সকল দোষত্রুটি থেকে তিনি ছিলেন মুক্ত।
৩-
আল্লাহ তাআলার পর সবচে’সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।
৪-
সৃষ্টির মাঝে সবচে’সেরা ও উত্তম সৃষ্টি।
৫-
বংশ ছিল সর্বোত্তম। আখলাক ছিল বেনজীর। এক কথায় কোন মানুষের সাথে তার মানুষ হিসেবে তুলনা চলে না।
৬-
তার মত ইবাদতগুজার আর কেউ নেই।
৭-
খোদাভীরুও কেউ নেই।
৮-
এত বড় বীরও কেউ ছিল না ও হবে না।
৯-
খোদ আল্লাহ তাআলা তাঁকে সর্বোচ্চ আসনে সমাসিন করিয়েছেন।
১০-
তিনি শুধু মানব নন মহামানব ছিলেন।
১১-
তিনি আল্লাহ তাআলার প্রেরিত নির্ধারিত ও নির্বাচিত মহান ব্যক্তিত্ব।
১২-
তিনি সমস্ত নবীদেরও নবী।
১৩-
আল্লাহ তাআলা রাব্বুল আলামীন মানে সমস্ত জগতের প্রতিপালক। আর আমাদের পেয়ারা নবী সাঃ হলেন রাহমাতাল্লিল আলামীন মানে সমস্ত জগতের জন্য রহমাত। আর আমাদের নবীর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে সেটি হল হুদাল্লিল আলামীন তথা সমস্ত জগতের জন্য হেদায়াত।
১৪-
এমন মহান ব্যক্তিত্ব ও বান্দা না কোন গত দেখেছে না কোনদিন দেখতে পাবে।
এক কথায় সাধারণ মানুষ হয়েও অসাধারণ। মানব কিন্তু মূলত মহামানব। মানুষ কিন্তু সকল দোষত্রুটি মুক্ত এক পবিত্র ব্যক্তিত্ব। রাসূল সাঃ এর শানে কি বলবো আর? শুধু এতটুকু বলাই মনে হয় যথেষ্ট হবে যে, তিনি আল্লাহ তাআলার পর সবচে’সম্মানিত। সবচে’সম্মানী ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী বান্দা।
এর চেয়ে আর কিছু বলার মত শব্দ আমাদের কাছে নেই।
,
টাইলস বানানোর জন্য ব্যবহৃত পাথরও পাথর আবার হাজরে আসওয়াদও পাথর। কিন্তু এ দুই পাথরের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তেমনি আমরাও মাটির তৈরী মানুষ আবার রাসূল সাঃ মাটির তৈরী মানুষ। কিন্তু এই দুই মানুষের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। নর্মাল পাথর ও পাথর আবার হিরের টুকরোও পাথর। কিন্তু দুইয়ের মাঝে যেমন যোজন যোজন দূরত্বের পার্থক্য। তেমনি আমরাও মানব আর রাসূল সাঃ ও মানব কিন্তু দুই মানবের মাঝে এমনি যোজন যোজন পার্থক্য।
আরো বলা যায়, আমরা যদি দুনিয়ার মাটি দিয়ে তৈরী, তাহলে রাসূল সাঃ হলেন জান্নাতের মাটি দিয়ে তৈরী। দুনিয়ার মাটি আর জান্নাতের মাটির মর্যাদার মাঝে যেমন পার্থক্য তেমনি রাসূল সাঃ ও আমাদের মত সাধারণ মানুষের মাঝে পার্থক্য।
,
এ কারণে রাসূল সাঃ কে আমাদের মত দোষে গুণে মানুষ বলা বেআদবী হবে। কারণ আমাদের নবী রাসূলে আরাবী সাঃ এর মাঝে শুধু গুণই ছিল। কোন দোষ ছিল না। তাই এ মহান ব্যক্তিত্বকে দোষে গুণে মানুষ না বলে মহান গুণান্বিত মানুষ বলাই শ্রেয়।
,
وَقَالُوا مَالِ هَذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ لَوْلَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيرًا (7
তারা বলে, এ কেমন রসূল যে, খাদ্য আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে? তাঁর কাছে কেন কোন ফেরেশতা নাযিল করা হল না যে, তাঁর সাথে সতর্ককারী হয়ে থাকত? {সূরা ফুরক্বান-৭}
,
مَا أَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُونٍ (2) وَإِنَّ لَكَ لَأَجْرًا غَيْرَ مَمْنُونٍ (3) وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ (4
আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহে আপনি উম্মাদ নন। আপনার জন্যে অবশ্যই রয়েছে অশেষ পুরস্কার। আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।{সূরা কলম-২-৪}

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا (46

হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। {সূরা আহযাব-৪৫-৪৬}

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ (28

আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। {সূরা সাবা-২৮}

 
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ (107
 
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। {সূরা আম্বিয়া-১০৭}

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (56

আমি আপনাকে সুসংবাদ ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। {সূরা ফুরক্বান-৫৬}

قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً (93) وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُواْ إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولاً (94) قُل لَّوْ كَانَ فِي الأَرْضِ مَلآئِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاء مَلَكًا رَّسُولاً (95

অনুবাদ-বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’প্রেরণ করতাম। {সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (110

অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। {সূরা কাহাফ-১১০}

وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ (34

অনুবাদ-আপনার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? {সূরা আম্বিয়া-৩৪}

عن أمها أم سلمة قالت سمع النبي صلى الله عليه و سلم جلبة خصام عند بابه فخرج عليهم فقال ( إنما أنا بشر وإنه يأتيني الخصم فلعل بعضا أن يكون أبلغ من بعض أقضي له بذلك وأحسب أنه صادق فمن قضيت له بحق مسلم فإنما هي قطعة من النار فليأخذها أو ليدعها (صحيح البخارى-كتاب الأحكام،  باب القضاء في كثير المال وقليله، رقم الحديث-6762

অনুবাদ-হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমিতো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো েেপ্ষ অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৭৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৭২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫৬৮০,  মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৩১১৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০৩২১}

ولكن إنما أنا بشر مثلكم أنسى كما تنسون فإذا نسيت فذكروني (صحيح البخارى، كتاب الصلاة،  باب التوجه نحو القبلة حيث كان، رقم الحديث-392

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও। 
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২৭১}

جابر بن عبد الله يقول سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول « إنما أنا بشر وإنى اشترطت على ربى عز وجل أى عبد من المسلمين سببته أو شتمته أن يكون ذلك له زكاة وأجرا (صحيح مسلم، كتاب البر والصلة والآدب،  باب من لعنه النبى -صلى الله عليه وسلم- أو سبه أو دعا عليه وليس هو أهلا لذلك كان له زكاة وأجرا ورحمة، رقم الحديث-6790

অনুবাদ-হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৬০}
 
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ مُوسَى كَانَ حَيًّا، مَا وَسِعَهُ إِلَّا أَنْ يَتَّبِعَنِي
কসম ঐ সত্বার, যার হাতে আমার প্রাণ! হযরত মূসা আঃ ও যদি জীবিত থাকতেন, তবে আমার অনুসরন না করে তাঁরও কোন উপায় থাকতো না। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫১৫৬}
 
নবীর প্রশসায় আসলে কারো কলমই সুবিচার করতে পারবেন না। কি প্রশংসা করবো? কি বিষয়ে বলবো। যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন-
أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ (1) وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ (2) الَّذِي أَنْقَضَ ظَهْرَكَ (3) وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ (4
আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি? আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা, যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ। আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। {সূরা ইনশিরাহ-১-৪}

(ফাতাওয়া বিভাগ -তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।)
,

কিন্তু যেহেতু আল্লাহপাকের দরবারে নবীগণের স্থান ও মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চে এবং যেহেতু মহান ব্যক্তিবর্গের দ্বারা ক্ষুদ্র ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হলেও তাকে অনেক বড় মনে করা হয়, সেহেতু কোরআন হাকিমে এ ধরনের ঘটনাবলীকে অপরাধ ও পাপ বলে অভিহিত করা হয়েছে। যদিও সেগুলো প্রকৃতপক্ষে আদৌ পাপ নয়।

,
★দারুল উলুম দেওবন্দ এর 40122 ফতোয়াতে বলা হয়েছে যে নবীদের দুনিয়াবি বিষয়ে  কিছু ইজতিহাদী ভুল হতে পারে।
তবে সেটি শরীয়তের পরিভাষা অনুযায়ী  গুনাহ নয়।
,
★জামিয়া বিন নুরি পাকিস্তানের 143704200012 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ

কুরআন ও পবিত্র হাদিসগুলি সহ অনেক প্রকারের ওহী রয়েছে।
এগুলি ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের অন্যান্য বিষয় যেমন মানব বিষয়াদি, পার্থিব বিষয়াদি ইত্যাদির উপর নির্দেশনা জারি করতেন, যার ধর্মতত্ত্বের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না। তাদের মধ্যে ইজতিহাদ ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তবে যেহেতু নবীগণ (সাঃ) ত্রুটিযুক্ত, তত্ক্ষণাত তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা দ্বারা সংশোধন করে দিয়েছেন। নবীগণ (সাঃ) তাদের ইজতেহাদ ত্রুটির সাথে আঁকড়ে থাকেন না।
,
এক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রাক্তন গ্র্যান্ড মুফতি মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহঃ) এর রচনা উদ্ধৃত করা হয়েছে।

''অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের কথা বানিয়ে আল্লাহর কাছে এটি গুণায়িত করা সম্ভব নয়, বরং আপনি যা বলছেন তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওহী। 

একটি প্রকার হ'ল যার অর্থ এবং কথাগুলি সর্বশক্তিমান দ্বারা প্রকাশিত হয়, যার নাম কুরআন, এবং অন্যটি হ'ল সর্বশক্তিমান কর্তৃক কেবল অর্থগুলি প্রকাশিত হয়। এটি হাদীস ও সুন্নাহর নাম। 

ভুল করা সম্ভব হয়েছে।তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণের বৈশিষ্ট্য হ'ল যে কোন বিধি-বিধান থাকলে তাদের ইজতিহাদে যে বিধি বিধান রয়েছে।যদি এটি ঘটে তবে তা আল্লাহ তাআলার মাধ্যমে ওহীর মাধ্যমে সংশোধন করা হয়েছে।তারা তাদের ভুল ইজতিহাদের উপর দাঁড়াতে পারে না।আজিব ও মুজতাহিদের বিপরীতে যদি তারা ইজতিহাদে কোন ভুল করে থাকে তবে তারা তাতে দাঁড়াতে পারে। বিপরীতে, তারা ধর্ম বোঝার জন্য তাদের নিবেদিত শক্তির জন্য একটি পুরষ্কার পেয়েছে। (মাআরিফ-কুরআন, ৮/১৯৫)

তবে পার্থিব বিধিবিধানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশাবলীর মর্যাদার দিক থেকে বর্ণনাকারীরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। 
,
পার্থিব বিধিবিধানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেম যে আমি একজন পরামর্শদাতা হিসাবে আমার মতামত প্রকাশ করেছি, এবং এই মতামতটি তোমরা চাইলে মানতেও পারো,নাও মানতে পারো। 
 
তিনি বলেছিলেন, "আমি একজন মানুষ, আমি যখন তোমাদেরকে ধর্ম সম্পর্কে বলি তখন তোমাদের এটি মেনে চলা উচিত এবং যখন আমি তোমাদেরকে নিজের মতামত থেকে কিছু বলি তখন আমিও একজন মানুষ।"

অন্যান্য সমস্ত আদেশে সেগুলি ধর্মের সাথে সম্পর্কিত হোক না কেন, তাদের সকলের মধ্যেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করা প্রয়োজন।


প্রশ্ন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পার্থিব বিষয়ে উম্মতকে ক্ষমতা দিয়েছেন?
উত্তর: যে সমস্ত জাতীর বিশুদ্ধরূপে পার্থিব মর্যাদা রয়েছে এবং যেভাবেই তারা শরীয়তের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত না, তাদের নিজেদের জন্য যা খুশি তা বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। (কিফায়াত-উল-মুফতি ১/86))

 আরও তথ্যের জন্য শায়খ-উল-ইসলাম মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের কিতাব "হুজ্জিয়াতে হাদিস" পৃষ্ঠা 90-98 দেখুন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...