আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
104 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম শায়েখ। আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে আমার ৫ বছরের খালাতো বোন এর জন্য কি মাদ্রাসা উত্তম হবে কিনা বর্তমান পরিস্থিতিতে।
আমার খালামণি বর্তমানে তিন সন্তানের জননী কিন্তু তার স্বামী গত বছর মারা গিয়েছে। আল্লাহর রহমতে কোনভাবে সংসার চলছে। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে দুজন বড়, স্কুলে পড়ালেখা করছে। তবে বেশিরভাগ সময় ফোনে গেম খেলে।বোন কোথায় পড়লো তা নিয়ে তাদের কোনো ধরনের চিন্তা নেই। তবে আমার খালামণি ইসলামিক অনলাইন মাদ্রাসায় দ্বীনি পড়ালেখা করছে। সে যথাসম্ভব পর্দা করে চলে। বাসায় এই চারজন মিলেই এখন সংসার। দীনি পরিবেশ খুব যে আছে তা নয় আবার নেই তাও  নয়।খালামণি চাচ্ছে মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়াতে । মেয়ে আকারে তার বয়সের তুলনায় কিছুটা ছোট। এখন আমার প্রশ্ন,
১. বাসার পরিস্থিতি ও ভাই-বোন এর সম্পর্ক বিবেচনা করে, মেয়েকে মাদ্রাসায় দেয়া কি উত্তম হবে?
২. মাদ্রাসায় পড়লে বাসার পরিস্থিতির কারনে কি কোনো সমস্যা হতে পারে?
৩. বাসার পরিবেশ কিরুপ হওয়া দরকার?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

https://ifatwa.info/3341/      নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,  ইসলামে দু’ ধরণের খেলাধুলাকে বৈধ রেখেছে দু’র্ত সাপেক্ষে। যে দুই ধরণের খেলা জায়েজ-

১-শারিরীক উপকার নিহিত। যেমন দৌড়, ফুটবল ও ক্রিকেটও হতে পারে।

২-দ্বীনের শত্রুর বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণমূলক খেলা। যেমন তীরন্দাজী, ঘোড় দৌড় ইত্যাদি।

এসব খেলা জায়েজ থাকার জন্য শর্ত দু’টি। যথা-

১- ফরজ ও ওয়াজিব কোন ইবাদতে বিঘ্ন না হতে হবে।

২-এর সাথে আর কোন গোনাহের বিষয় মিলিত না হতে হবে। যেমন জুয়া, বেপর্দা ইত্যাদি।

এছাড়া বাকি সব খেলাই অহেতুক হওয়ায় মাকরূহ বা নাজায়েজ।

পাবজি খেলা সহ যাবতীয় ভিডিও গেম এ অনর্থক খেলার মাঝে শামিল। যেহেতু এর দ্বারা শারিরিক কোন উপকার নেই। অহেতুক সময় নষ্ট করা, তাই এটি অপছন্দনীয়। কিন্তু বর্তমানের ভিডিও গেমগুলোতে নানা ধরণের হারাম মিউজিক থাকে।যা সম্পূর্ণই নাজায়েজ। আর এসব মারামারি দৃশ্যগুলো বড়দের সহ বাচ্চাদের মন মগজে খুবই খারাপ প্রতিক্রিয়া  সৃষ্টি করে থাকে। বাচ্চাদের প্রতিহিংসা পরায়ন, প্রতিশোধী মনোভাবাপন্ন বানিয়ে দেয়।

আমাদের ধারণা এসব ভিডিও গেম এবং সিনেমাগুলোর এ্যাকশন দৃশ্যগুলোর কুপ্রভাবে বড়রা সহ কম বয়সী বাচ্চাদের দ্বারাও বড় বড় অপরাধমূলক কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এসব অহেতুক ভিডিও গেম থেকে বিরত রাখাই জরুরী।

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে  

وكره كل لهو لقوله عليه الصلاة والسلام كل لهو المسلم حرام إلا ثلاثة: ملابعة اهله، وتأديبه لفرسه، مناضلته بقوسه… ألخ

وقال ابن عابدين- كره كل لهو أى كل لعب وعبث (رد المحتار، كتاب الحظر والإباحة-6/395،

যার সারমর্ম হলো প্রত্যেক অনার্থক খেলা ধুলাই নিষেধ।

তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম গ্রন্থে আছেঃ    

وأما ما لم يرد فيه (اى فى اللهو) النص عن الشارع، وفيه فائدة وصلحة للناس، فهو بالنظر الفقهى على نوعين: الأول ما شهدت التجربة بأن ضرورة أعظم من نفعه، ومفاسده أغلب على منافعه، وأنه من اشتغل بها ألهاه عن ذكر الله وحده، وعن الصلوات الله والمساجد، إلتحق بذالك بالمنهى عنه لإشراك العلة، فكان حراما أو مكروها، (تكملة فتح الملهم-4/434-435)

যার সারমর্ম হলো যেই খেলা খেলার দ্বারা শারীরিক উপকার হয়,এবং ইসলামেএ বিধান পালন করতে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে,তাহলে সেটা জায়েজ।  অন্যথায় সেটা জায়েজ নয়।    

পাবজি গেম খেলা হারাম হওয়ার ব্যাপারে অনেক মুসলিম দেশের মুফতী সাহেব গন স্পষ্ট আকারে ফতোয়া প্রদান করেছে।

জনপ্রিয় অনলাইন গেম প্লেয়ার আননোন’স ব্যাটলগ্রাউন্ডস (পাবজি) ইসলাম ধর্মের জন্য অবমাননাকর বলে দাবি করেছে ইন্দোনেশিয়ার উলামায়ে কেরাম।

ইরাক এবং নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই গেম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে ফতোয়া দিয়ে ওই দাবি করা হয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার আঁচে প্রদেশের উলামা কাউন্সিল এমন ফতোয়া জারি করেন। গেমটি নিষিদ্ধ করার জন্য তারা স্থানীয় সরকারকেও আবেদন জানিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এই ফতোয়া অন্য কয়েকটি গেমের ওপরও জারি করা হয়েছে। তবে সেগুলোর নাম প্রকাশ করেনি উলামা কাউন্সিল।

আচেঁ উলামা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান ফয়সাল আলী বলেন, আমাদের ফতোয়াতে বলা হয়েছে, পাবজি ও এ ধরনের গেম হারাম। কারণ এগুলো সহিংসতা ছড়ায় এবং মানুষের আচরণে পরিবর্তন আনে।

তিনি আরও বলেন, পাবজি ইসলামকে অবমাননা করে। আমরা দেখেছি শিশু, এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও এই গেমটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং তারা এটা তাদের মোবাইল ফোনে সর্বত্র খেলছে। বিষয়টি আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ছে।

মুসলিমপ্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় একমাত্র আঁচে প্রদেশে ইসলামি শরীয়া আইন কার্যকর আছে। এর আগে ইরাক, নেপাল ও ভারতের গুজরাট রাজ্যে বাস্তব জীবনে সহিংসতার আশঙ্কায় গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে

পাবজি গেম আপনাকে দেখায় সবাই শত্রূ, এদের মেরে ফেলো। খেলে উঠে আশেপাশের সবাইকে অনেক সময় শত্রূ মনে হয়। আবার রেগে গেলে মনে হয় হাতে কিছু থাকলে গেমের মত সবগুলোকে যদি শেষ করতে পারতাম?

গেমের একটা রেশ থেকেই যায়। কখন আপনি মারমুখো হয়ে গেছেন কখন কার সাথে কী শুরু করেছেন সেই নিয়ন্ত্রন যদি না থাকে তার মানে আপনি হারাম কাজে ডুবে গেছেন, শয়তানের পথে হাটছেন।

যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয় আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করি। অতপর সে তার সঙ্গী হয়।’ (সুরা যুখরুফ : আয়াত ৩৬)

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: মহামহিম আল্লাহ্ বলেন,

আদম সন্তান সময়কে গালি দেয়। অথচ আমিই সময় এবং কাল, রাত-দিন আমারই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। [সহীহ মুসলিম হাদিস- ৫৬৯৭]

টীকা: “আমিই সময়”-এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা হচ্ছেন বিশ্বের সময় জ্ঞাপক শক্তি। বরং এর অর্থ হচ্ছে রাত-দিনের আগমন-নির্গমন, রাতের পেছনে দিন ও দিনের পেছনের রাতের আগমন, ঋতুর পরিবর্তন, সবকিছুই আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনিই সময়কের নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব কিছুই তাঁর হুকুমের অধীন।

তার মানে আল্লাহ সময়কে সৃষ্টি করেছেন তাকে কে বিশ্বাস করে সময় দিয়ে পরীক্ষা করতে। এই সময়কে যখন আপনি নষ্ট করেন, অবহেলা করেন অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করেন- আল্লাহকেই আপনি অসম্মান করেন। কারণ সময়টা তাঁর বিশেষ নেয়ামত।

     সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. বাচ্চার মা যেহেতু নিজে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছেন বিধায় তিনি নিজে মেয়েকে দ্বীন শিক্ষা দিবেন এবং তাকে স্থানীয় ভালো পরিবেশ অবস্থিত কোন মহিলা মাদ্রাসায় অনাবাসিক হিসেবে দিতে চাইলেও দেওয়া যাবে। তবে তার যত্নের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। যেহেতু তার বয়স কম।

২. আশা করা যায় সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।

৩. বাসায় দ্বীনি পরিবেশ ও ইবাদতের প্রতি মা ও সন্তানদের সকলকেই যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে নিকটাত্নীয় কোন দ্বীনদার ব্যক্তির (দাদা,নানা,চাচা ইত্যাদী) তত্বাবধানে চলা উচিত। তাদেরকে মোবাইলের আসক্তি থেকে বের করার চষ্টা করতে হবে। স্থানীয় ভালো কোন আলেমের সোহবতে থেকে দ্বীন জানার ও বুঝার চেষ্টা করবে। মাঝে মাঝে তাদেরকে দ্বীনী হালাকা বা তাবলীগে পাঠানো যেতে পারে। আশা করা যায় এভাবে চললে পরিবারের জন্য কল্যান হবে ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...