আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
148 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (37 points)
সন্তান কে জুদি নামায আর অন্যান্য যেসব ফরজ ওয়াজিব সুন্নাত কাজের কথা বলার পর ও জুদি না শোনে আর করে  তাহলে সেই ক্ষেত্রে কি সেই সন্তান যে এসব  ফরজ ওয়াজিব সুন্নাত কাজ করছে না সেই ক্ষেত্রে কি বাবা মা কি গুনাহ গার হবে সন্তান এর এই কাজ গুলো না করার জন্য ?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالغَيْبِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَمَن تَزَكَّى فَإِنَّمَا يَتَزَكَّى لِنَفْسِهِ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ

কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন। (৩৫:১৮)

من عرض نفسه للتهمة فلا يلومن من أساء الظن به)) منها ما أخرجه ابن أبي الدنيا في الصمت من طريق عكرمة،

হযরত উমর/আলী রাযি বলেন,যে ব্যক্তি নিজেকে তুহমতের জায়গায় নিক্ষেপ করলো,তার ব্যাপারে লোকজনের ধারণা মন্দ হলে,সে যেন নিজকে ব্যতীত অন্যকে দোষারোপ না করে। (ইবনে আবি দুনিয়া)

সন্তানদেরকে ইসলামী সভ্যতা  (তাহযীব) শেখানো, দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক বিষয়াদি শেখানো এবং একজন দ্বীনদার-নামাযী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

হাদীস শরীফে এসেছে- ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ -সহীহ বুখারী ১/২২২ হাদীস ৮৯৩

সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া তেমনি সন্তান যদি দ্বীন ও শরীয়তের অনুগত না থাকে, দুর্নীতি ও গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে উভয় জগতেই মা-বাবার জন্য বিপদ। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পেরেশানির কারণ। আর কবরে থেকেও মা-বাবা তার গুনাহর ফল ভোগ করতে থাকবে। আখিরাতে এই  আদরের দুলালই আল্লাহ তাআলার দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে আপিল করবে যে, তারা আমাকে দ্বীন শেখায়নি। তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাই এই আমানতের হক আদায়ের প্রতি খুবই যত্নবান হতে হবে।

সুতরাং আপনি যদি আপ্রান চেষ্টা করেন দ্বীনের পথা চলানোর জন্য,তারপরেও সন্তা না শোনে,তাহলে পিতামাতার কোনো গুনাহ হবেনা কবরে গিয়ে তারা গুনাহের ভাগিদার হবেনা। 

কুরআন শরীফে এসেছেঃ 

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ  

আল্লাহ তায়ালা  কাহারো গুনাহের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেননা। (সুরা ফাতির ১৮)

ইসলাম বাবা-মার উপর দায়িত্ব দিয়েছেন যে, তারা যেন সাত বছর বয়স থেকে তাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দেয়, দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য প্রহার করে। কোন পিতামাতা যদি তাদের সন্তানদেরকে শৈশবকাল থেকে এভাবে নামাযে অভ্যস্ত করে তোলে তাহলে আশা করা যায়, তাদের সন্তানরা কখনো বেনামাযী হবে না।

সেই সাথে প্রতিটি পিতামাতার উপর ফরজ দায়িত্ব হল, সন্তানদেরকে দ্বীনী শিক্ষা প্রদান করা এবং ইসলামী জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা।

এভাবে কাজ করলে আশা করা যায়, সন্তানরা বড় হয়েও নামাযী, সচ্চরিত্রবান, সুানগরিক, ও ভালো মানুষ হিসেব গড়ে উঠবে। এত কিছু করার পরও যদি বড় হয়ে কোন সন্তান বেনামাযী হয় বা ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হয় তাহলে সেই এর দায় দায়িত্ব বহন করবে; পিতামাতা নয়।

পক্ষান্তরে পিতামাতা যদি সন্তানের উপর তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার কারণে সন্তান বেনামাযী হয় বা সন্তান অনৈসলামিক কর্মে লিপ্ত হয় তারা কেউই এ গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে না।

কিন্তু যদি এমন হয়, বাবা-মা প্রথম জীবনে ভালোভাবে ইসলাম পালন না করার কারণে সন্তানদেরকে ইসলামের উপর গড়ে তোলেননি কিন্তু পরবর্তীতে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করেছে এবং ইসলাম অনুযাযী তাদের জীবন সাজিয়েছে তাহলে এখন তারা তাদের সন্তানদেরকেও তওবা করে ইসলামের পথে ফিরে আসার জন্য নির্দেশ দিবে। আর সন্তাদের জন্য অপরিহার্য হল, অতীত জীবন থেকে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করা এবং ইসলামের পথে ফিরে আসা।

এখন যদি পিতামাতা নামায-রোযা ও ইসলামের পথে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়ার পরও তারা নামায-রোযা না করে বা ইসলামে ফিরে না আসে তাহলে পিতামাতা গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কিন্তু সন্তানরা তাদের কৃতকর্মের জবাবদাহী করবে

সন্তানের বয়স ১০ বছর হলে হাদীস শরীফে নামাযের জন্য শাসন করার কথাও এসেছে। সাত বছর থেকে নামাযের জন্য এমনভাবে গড়ে তুলবে যেন ১০ বছর বয়সে সন্তান নামাযে পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফিকাহবিদগণ বলেন, ‘রোযার হুকুমও একই।’ অর্থাৎ ৭-৮ বছর বয়সী সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তাদেরকে ধীরে ধীরে রোযার প্রতি অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এরপর ১০ বছর বয়সে উপনীত হলে যদি স্বাস্থ্যগতভাবে দুর্বল না হয় তাহলে প্রয়োজনে রোযার জন্য শাস্তিও দেওয়া যাবে। -ফাতাওয়া শামী  ২/৪০৯

সাহাবায়ে কেরাম রা. তাঁদের সন্তানদেরকে রোযা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। সাহাবিয়া রুবায়্যি বিনতে মুআওয়াজ রা. বলেন, ‘আমরা নিজেরা আশুরার রোযা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোযা রাখাতাম। তাদের জন্য পশমের তৈরি খেলনা রাখতাম। যখন বাচ্চাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদত তখন তাকে খেলনা দিতাম, এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত।’ -সহীহ বুখারী ১/২৬৩

শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুলে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে পারবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৫০৯৪)

এ ছাড়া শিশুর জীবনের গতিপথ নির্ধারণে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, শিশু মা-বাবার কাছে আমানত এবং তার অন্তর মূল্যবান মণিমুক্তাতুল্য। তা শূন্য ক্যানভাসের মতো পবিত্র ও নির্মল। তা যে কোনো চিত্রের জন্যই উপযোগী এবং তাকে যে দিকে ইচ্ছা ফেরানো যায়। তাকে যদি ভালো কাজ শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে সে দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্যবান হবে।

আর যদি তাকে মন্দ কাজে অভ্যস্ত করা হয় বা পশুর মতো অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করা হয়, তবে সে হতভাগ্য ও ধ্বংস হবে। শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ হলো তাকে আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও উন্নত চারিত্রিক গুণাবলি শিক্ষা দেওয়া। (ইউসুফ আল হাসান, আল ওয়াজিজ ফিত-তারবিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-২)

সন্তান বালেগ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নামাজের নির্দেশ দিতে বলেছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। তাদের বয়স ১০ বছর হওয়ার পর (প্রয়োজনে) নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, সন্তান যখন ডান ও বাঁ পার্থক্য করতে শেখে, তখন তাকে নামাজ শেখাও। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৫০৪)

সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করতে ইসলামী শরিয়তের কিছু নির্দেশনাও রয়েছে। যার কয়েকটি হলো

১. নিজে নামাজে যত্নবান হওয়া : শিশুরা বড়দের দেখে শেখে। তাই সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করার প্রথম শর্ত মা-বাবা ও অভিভাবক নিজেরা নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। নতুবা শুধু উপদেশ খুব বেশি ফলপ্রসূ হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা যা করো না, তোমরা তা কেন বলো? তোমরা যা করো না তোমাদের তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক।’ (সুরা : সফ, আয়াত : ২-৩)

 ২. নামাজ পড়ার সময় সন্তানকে পাশে রাখা : মা-বাবা যখন নামাজ আদায় করবে সন্তানকে পাশে রাখবে। যেন সন্তান তার অনুকরণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সময় হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে সঙ্গে রাখতেন বলে হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায়। কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কন্যা জয়নব ও আবুল আসের কন্যা উমামাকে কোলে নিয়ে নামাজ আদায় করেছিলেন। যখন তিনি সিজদা দিতেন তাকে নামিয়ে রাখতেন এবং দাঁড়ালে তাকে কোলে নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৬)

৩. বুঝমান সন্তানকে মসজিদে নেওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে বালেগ ও অবুঝ উভয় ধরনের শিশুকে মসজিদে নেওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে এক শিশুর কান্না শুনলেন, যাকে তার মা নিয়ে এসেছিল; ফলে তিনি তার কিরাত ছোট করলেন বা ছোট সুরা পড়লেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৭০)

সুনানে নাসায়ির অপর বর্ণনায় পাওয়া যায়, হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বার থেকে নেমে আসেন। (নাসায়ি, হাদিস : ৫০)

৪. হাতে-কলমে নামাজ শিক্ষা দেওয়া : সন্তান সাত বছর বয়সে উপনীত হলে তাকে হাতে-কলমে নামাজ শিক্ষা দেবে মা-বাবা। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের হাতে-কলমে নামাজ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ আদায় করতে দেখো, সেভাবে নামাজ আদায় করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০০০৮

৫. নামাজের জন্য পুরস্কার দেওয়া : সন্তান যেন নামাজের প্রতি যত্নবান হয়; এ জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে। ফজরের নামাজের জন্য উঠলে, মসজিদে নামাজের জামাতে হাজির হলে, নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় দোয়া, তাসবিহ ও সুরা মুখস্থ করলে তাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। এ ধরনের উৎসাহমূলক পুরস্কার প্রদানে ইসলাম উৎসাহিত করে। সম্প্রতি তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে।

৬. নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরা : সন্তানের সামনে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরা প্রয়োজন। ইসলামী শরিয়তে নামাজের গুরুত্ব, নামাজ আদায়ের সুফল, নামাজ না পড়ার কুফল, শাস্তি ইত্যাদি বর্ণনা করা যেতে পারে। যেমনরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অন্ধকারে মসজিদে গমনকারীর জন্য কিয়ামতের দিন পূর্ণাঙ্গ আলো লাভের সুসংবাদ দাও।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫৬১)

 ৭. নামাজ সম্পর্কিত ঘটনা শোনানো : নামাজ কিভাবে ফরজ হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের প্রতি কতটা যত্নবান ছিলেন, সাহাবিরা যুদ্ধের ময়দানেও কিভাবে নামাজ আদায় করেছিলেন এবং বুজুর্গ আলেমরা নামাজের মাধ্যমে কিভাবে জীবনের বিভিন্ন সংকট মোকাবেলা করেছেনসেসব ঘটনা শিশুদের শোনালে তারা নামাজে উৎসাহী হবে।

৮. নামাজের জন্য জবাবদিহি : সন্তান ঠিকমতো নামাজ পড়ছে কি না সেদিকেও মা-বাবাকে লক্ষ রাখতে হবে এবং নামাজে অলসতা করলে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আমার খালা মায়মুনার কাছে রাতে অবস্থান করছিলাম। সন্ধ্যার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এসে জিজ্ঞেস করলেন, এই শিশু কি নামাজ পড়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৫৬)

৯. প্রয়োজনে শাস্তি দেওয়া : মা-বাবা ১০ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে উৎসাহ ও মৃদু শাসনের মাধ্যমে নামাজে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করবে। ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরও তারা নামাজে অবহেলা করলে তাদের প্রতি কঠোর হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তি দেবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। তাদের বয়স ১০ বছর হওয়ার পর নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)

১০. নামাজি হওয়ার জন্য দোয়া করা : সন্তান যেন নামাজের প্রতি যত্নবান হয়এ জন্য মা-বাবা দোয়া করবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ কায়েমকারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্যে থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪০)

যারা সন্তানকে নামাজের নির্দেশ দেবে এবং তাদের নামাজে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইসমাইল (আ.)-এর প্রশংসা করে বলেছেন, ‘সে তার পরিবারকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল আল্লাহর সন্তোষভাজন বান্দা।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫৫)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর আনুগত্যে অবিচলতা ও পরিবারকে তার নির্দেশ দেওয়ার কারণেই আল্লাহ এই উচ্চতর প্রশংসা করেছেন।’

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘যে বড় ব্যক্তির অধীনে কোনো ছোট মানুষ থাকে, হোক সে মালিকানাধীন দাস বা এতিম অথবা নিজের সন্তান এবং সে যদি ছোটকে নামাজের নির্দেশ না দেয়, তবে তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে এবং কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হয়েছে।’ (আল ফাতাওয়াল কুবরা : ২/৩২)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

শরীয়ত যাদেরকে অভিভাবকের দায়িত্ব অর্পন করেছেএবং যে অভিভাবকত্ব সম্পর্কে আল্লাহ কিয়াতের ময়দানে লোকদিগকে জিজ্ঞাসা করবেন, তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করে, তাহলে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।

মাতাপিতা যদি সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা না দেয়, তাহলে এ ত্রুটির জন্য তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত করা হবে। যদি মাতাপিতা সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার পর ও গুনাহের কাজ থেকে বাধা দেওয়ার পরও সন্তান গোনাহের কাজে জড়িয়ে যায়, ফরজ ও ওয়াজিব আহকাম আদায় না করে তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতা দোষী সাব্যস্ত হবেন না। বাবা মায়ের আমল নামায় গোনাহ লিখিত হবে না। তবে তারা যদি  দায়িত্ব আদায় না করে তাহলে কেন আদায় করল না? সেজন্য তাদেরকে কাঠগড়ায় দাড় করানো হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...