আসসালামু আলাইকুম,
আমার নাম সানজিদা৷ আমি তালাকের সন্দেহ নিয়ে আপনাদের থেকে সমধান চাচ্ছি৷ প্লিজ হুজুর আমাকে তাড়াতাড়ি উত্তর টা দিয়েন৷ অনেক রিকোয়েস্ট করতেছি আমাকে একটু বুঝায় দেন প্লিজ৷
আমাদের বিয়ের বয়স প্রায় ২ বছর৷ আমার স্বামী আমাকে উঠিয়ে নেননি৷ তার নানান সমস্যার কারনে। এই জন্য আমাদের মধ্যে অনেক বেশী ঝামেলা হয়৷ আমাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাই আমার রাগ প্রকাশ পায় তালাক চাওয়ার মাধ্যমে। আমি ঝগরা হলেই হাজার বার বলি আমাকে ছেড়ে দেন। আমি আর পারছি না৷
আমি নিজেও কখনো আলাদা হতে চাই না। আমার স্বামীও আমাকে হাজারবার বলেছে আমকে সে কখনোই ছাড়বে না৷ তালাক দিবে না।  কখনোই দিবে না৷ আমি শুধু সে যেন আমাকে আর কষ্ট না দিতে তুলে নেয় সেজন্য বারবার বলি আমাকে ছেড়ে দেন৷ ডিভোর্স দেন৷
আমি যখনই বলি সে আমাকে উত্তর দেন আমি তালাক দিব না৷ না মানে না৷
আমরা সদ্য দ্বীনে ফেরা মানুষ ছিলাম। আমরা শুধু জানতাম যে তালাক শব্দ যেভাবে বলুক তালাক হয়ে যায়৷ আর তেমন কিছু জানতাম না৷ পরে জেনেছিলাম যে অন্য শব্দতেও নিয়ত থাকলে তালাক হয়৷ কিন্তু কি শব্দ কেমন কি কিছু জানতাম না৷ আমার স্বামীর তালাকের বিষয়ে কোন জ্ঞান ই ছিল না৷
১/এমন একদিন আমি বলছিলাম মেসেজে যে তাইলে আমকে ছেড়ে দেন৷ চলেন কাজী অফিস যাই৷  সে আমাকে বলছিল যে না আমি  দিব না৷ পরে  আমি ভাবলাম যে দেখা করি তাহলে ঝগড়া মিটে যাবে৷ তাই বললাম দেখা করেন৷ সে ভাবতেছিল আমি তালাক দেবার জন্য দেখা করতে বলছি৷ তো সে আমাকে বলতেছে " না আমি দেখা করব না, বের হব না, মন থেকে তো হয়েই গেছে,  এরপর ও যদি চান তাহলে নামাজ কালাম ছেড়ে দিব যেন আপনার জন্য হারাম হয়ে যাই, তবুও আমি এটা বলব না।
পরে আমি প্রশ্ন করলাম মন থেকে হয়ে গেছে?  সে আমাকে প্রশ্ন করছে " আপনি এত লাখবার বলছ, ৩ বার হইছে না? এটা সে আমার বলাতে হইছে এটা বুঝায়ছে। (কিন্তু আমার কথায় তো হয় না)
পরে আমি বললাম আল্লাহরেও ভয় কর না৷ নামাজ বঊ সব ছাড়বা।
বলল" আপ্নারে মুক্তি দিলাম, আপনি তো এটাই চাইছেন আমারে আমার মত পুরতে দেন৷ আপনি ভালো থাকেন।"
 পরে সে আমাকে দেখা করতে ডাকে। আর আমরা ঝামেলা মিটমাট করি৷ এখানে সে এসব কথা বলার মধ্যেও এটাই বলছে বারবার যে সে তালাক বলবে না।
তাই এসব কথায় যে তালাক হইতে পারে তা আমাদের মাথায় ও আসে নাই৷ আমরা এটা নিয়ে আর ভাবিও নাই৷ কারণ কারোই তালাক দেওয়ার নিয়ত ছিল না বা আলাদা হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না৷
২/তার প্রায় ১ বছর পরে আবার এমন এক ঝামেলার সময় আমি রাগের শেষ সীমায় চলে যাই, আমি তাকে অনেক ভয় দেখাই৷ বলি আমি বাসা থেকে বের হইতেছি৷ আমি নিজে গিয়ে কাগজে সাইন করে তালাক দিব। আর বের হয়ে যাই৷ সে অনেক ঘন্টা আমাকে বুঝাবার চেষ্টা করে আর বলতে থাকে যে আমি ছাড়ব না৷ তালাক দিব না৷ পরে আমি বের হয়ে গেছি দেখে আমাকে ফোন দিয়ে বলে "বাসায় যাও আমি দিবনে।"  পরে বাসায় এসে আমি আরো ১ ঘন্টা তারে অনেক কিছু বলি৷ আর বলতে থাকি বলেন বলেন বলে দেন বলে দেন৷ বলেন না কেন, সে না পারতে আমাকে বলে 'মুক্তি দিলাম' আমি বলি ১ বার হইছে (যদিও আমি জানি যে এসব কথায় তালাক হয় না৷ তারে ভয় দেখাইতে বলতেছি), আবার বলেন৷ সে বলে 'মুক্তি' বলে ফোন রেখে দেয়। পরে আমি তাকে নানানভাবে জোর করতে থাকি, বলি যে স্পষ্ট করে বলেন৷ ৩বার বলেন (এগুলো মেসেজে)। তারে বলি ভয় পান নাকি। বলে "হ্যা ডিভোর্স ভয় পাই"।  পরে আমি অনেক গুলো মেসেজ বলি৷ বলি যে ২ তালাক দিয়ে দিছেন হেনতেন৷  সে উত্তর দেননা বা হুম বলেন, পরে আমি কয়েকবার বলি ২ তালাক ও হয়ে গেছে, এসব বলে বলে তাকে কথা শুনাইতে থাকি যে সে কেমনে বলল।   সে আমাকে প্রশ্ন করে" আপনি এত জালাইছেন আমারে,  আমি বলছি, এখন আমাকেই সুনাচ্ছেন ২ বার বলছি"? wow!.
মনে মনে আমিও জানি আর সেও যে সে নিয়ত নিয়ে বলে নাই৷ আর এসব কথায় তালাক হয় না।
এমন ঝামেলায় ৭ দিন কাটার পর যখন দেখা হয় মিটমাট হয় পরে আমি জিজ্ঞেস করি, সে বলে আমার এমন কোন নিয়ত ছিল না৷ পরেও জিজ্ঞেস করায় বলে আমি তো তালাক দেই নাই৷ আমি না থামাইলে নিযে বের হয়ে যাইতা দিতে, তাই ভয় দেখাইতে অইটা বলছি। তোমাকে ছাড়ার কোন নিয়ত আমার কখনো ছিল না৷ আমি তো কয় লাখ বার বলছি আমি তালাক দিব না৷ অইসময় আমি আর যাই ই বলি তুমি তো শান্ত হইতা না৷ শান্ত করা বা ভয় দেখানো উদ্দেশ্য ছিল৷ ফোন কাটলেও তুমি আরো খারাপ কিছু করতা৷ তাই অইসময় আর কি ক্লিয়ার করে বলব ?
তারপর এটা নিয়ে আর ভাবিনি আমি৷
এছাড়াও আরো অনেক বার আমি চাইছি সে মানা করছে৷ আমাকে বলছে আপনি এসব ছাড়েন। আর বইলেন না৷ কখনো বলছে আগেই হয়ে গেছে বা ৩ বার হইছে আগেই( আমার কথার কারনে হইছে তাই বুঝায়ছে)
৩/তারপর ৫ মাস পরে আবার বড় ঝামেলা হয়।  আমাকে এখনো নিতেছে না তাই আমি বলছি হয় অক্টোবর এ আসবেন নাহয় আমাকে ছাইড়া দেন৷ আর পারব না৷ এই ঝগড়া ৪ ঘণ্টা চলে সেও আমকে বলতে থাকে আমি ছাড়ব না৷ আমার আর একটু সময় লাগবে৷ ছাড়বে না ছাড়তে চায় না দিবে না তালাক এটা ২০০ বার বলছে৷ কিন্তু আমি ভয় দেখাই যে আপ্নারা আসবেন নাহয় আমি আপনার মাকে বলে দিব৷ নাইলে আমাকে ছারেন( তার পরিবার জানে না)।
সে ভয় পায় তার মাকে বললে সে মরে যাবে৷ তাও বলে না যে আসবে৷ বলে যে একটু সময় দেও৷  আমি বলতে থাকি তাইলে ছাড়েন ছাইড়া দেন৷ আর খুব গালিগালাজ করি৷ আমার রাগ তখন আমার কন্ট্রোলে নাই৷ অনেক বার মানা করার পরে সে বলে যে "আপনি যা চান তাই" আমি শুনি নাই, পরে বলতেছে " বলছি আপনি যা চান তাই"। বললাম আমি কি চাই! আমি তো চাই আপনি আমাকে নেন নাহয় ছেড়ে দেন৷ ঠিক করে বলেন৷ স্পষ্ট করে বলেন৷ সে বলল "এতই সহজ? "। অনেক তুই তুকারির পরে বলে "আপ্নারে ছেড়ে দিলাম যান৷" পরে আমি বলি একবার হইছে আরো ২বার। সে বলে যে " বলছি যা বলার৷ ৩ বার বলা লাগে না বা আর পারব না (স্পষ্ট মনে নাই)।
 পরে আমি বলি যে হয়ে গেছে হেনতেন ।  ১০ মিনিট এর মধ্যে সে বলে যে না আমি তো তালাক দেই নাই । আমার নিয়ত ছিল না৷ আমি কি তালাক বলছি নাকি৷
পরে আমি ঘেটে দেখলাম যে না এটায় হয়ে যায়। পরে আমার মনে আগের গুলো নিয়ে সন্দেহ হলো এবং আমি রিসার্চ করা শুরু করলাম।  এটাই দেখলাম যে আরো অনেক শব্দে হয়ে স্বামীর নিয়ত থাকলে৷
আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, সে বলে আমি কি কখনো বলছি আমি তালাক দিব বা দিতে চাই? আমি সবসময় তোমাকে নিষেধ করছি৷ আমার কোন কথাতেই কখনো নিয়ত ছিল না যে আমি তোমাকে তালাক দিব৷ আমি জিজ্ঞেস করছি কসম করে বলতে পারবেন৷ সে বলছে পারব৷
কারন আমার নিয়ত ছিল না আমার কোন সন্দেহ নাই৷ আর আমি কি বলছি কখোন বলছি তোমার কথায় এগুলা আমার মনেও নাই তো নিয়ত কি করে আসবে?  আমি যতবার যা বলছি তোমার জিদ উঠলে তুমি থাম না তাই থামাইতে বলছি। সে বলে আমি যদি এসব শব্দে হয় এমন জানতাম তাইলে এগুলাও কোনদিন বলতাম না৷ আমি লাখবার নিষেধ করছি এগুলা বলবা না আমি দিব না৷ এগুলা দেখোনা তুমি?
আমি মুফতি সাহেবদের সাথে কথা বলছি, তারা সবাই বলছে আমার কোনভাবেই ৩ তালাক হয় নাই৷
আমি বসুন্ধরা রিসার্চ সেণ্টারে ফতোয়া নিতে যাই৷ তারা আমাকে জানায় প্রথম বারেই ১ তালাকে বায়েন পতিত হইছে৷ পরের গুলো পতিত হয় নাই৷ কারন সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে৷
এই ফতোয়ার পরেও হুজুর আমি মানসিক শান্তি পাইতিছি না৷ আমার খালি মনে হইতেছে ৩ তালাক হয়ে গেছে কিনা৷ কারন আমি এত ফতোয়া পড়ছি ভিডিও দেখছি৷ আমার মনে হয় আমি হয়ত সব খুলে বলতে পারি নাই৷ বুঝায় লিখতে পারি নাই৷ আমি এখন মানসিক ভাবে ভেংগে পরছি৷ যতই যা দেখি নতুন নতুন জিনিস মাথায় আসে।  নতুন করে মনে হয় কিছু হল কিনা।
আমি এই সম্পর্কে নতুন ভাবে বিয়ে করলেই হালাল থাকবে কিনা এই সন্দেহে পাগল হয়ে যাচ্ছি৷ আমার মাথায় সারাক্ষণ এগুলা ঘুরে৷ খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়৷ কিছুই করতে পারি না৷ সারাক্ষন এগুলা দেখি আজকে প্রায় ২ মাস৷
আমার স্বামী আমার কথা মানতে নারাজ৷ সে মানেই না কোন তালাক হইছে কারন সে কোনদিন আমাকে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবে নি। তবুও আমার কথায় সে আমাকে নতুন করে বিয়ে করবে৷
কিন্তু আমি তার সাথে পর্দা করি এখন৷ কথা বলতে চাই না তেমন৷ সে আমার উপর নারাজ৷
আমি কি তার হক নষ্ট করতেছি নাকি একসাথে থেকে হারাম করব৷ আল্লাহ এর কাছে কোন দায় থাকবে কিনা৷ এই দোটানার অশান্তি থেকে আমাকে মুক্তি দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব৷
আমি আমার যা কিছু আগে পরের মনে আছে সব খুলে বলার চেষ্টা করছি৷