بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
যদি মালিকের পক্ষ থেকে যদি
ফল কুড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রকার বাধা বা নিষেধ করা না হয়,
তাহলে ওইসব গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল কুড়িয়ে
খাওয়া জায়েয হয়েছে। অবশ্য কখনো যদি এ ব্যাপারে মালিকের অসম্মতি বা অসন্তুষ্টি বোঝা
যায়, তখন
পড়ে থাকা ফলও কুড়িয়ে নেওয়া জায়েয হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ৪/২৮৪;
ফাতাওয়া খানিয়া : ৩/৩৯১;
আলমুহিতুল বুরহানি : ৮/৫৪;
আন-নাহরুল ফায়েক : ৩/২৮৪)
কোনো অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি এমন
ফল খেতে পারবে কিনা এ সংক্রান্ত হাদিসে এসেছে- আমর ইবনে শোয়াইব তার পিতার মাধ্যমে তাঁর
দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)- কে গাছে ঝুলন্ত ফলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস
করা হলো। তিনি (সা.) বললেন, যদি
কোনো অভাবগ্রস্ত তা থেকে কিছু খায়, তাতে কিছুই নেই; যদি আঁচলে ভরে কিছু না নিয়ে যায়। হ্যাঁ,
যদি কিছু নিয়ে যায়,
তাহলে তার ওপর দুই গুণ দণ্ড বর্তাবে,
তারপর শাস্তিও হবে। আর শস্য মাড়াইয়ের স্থানে
বা শস্য উঠান শুকানোর জন্য রাখার পর যে সেখান থেকে একটি ঢাল পরিমাণ মূল্যের কিছু চুরি
করবে, তার
হাত কাটা যাবে। উল্লেখ্য যে, আমর (রা.)-এর দাদা হারানো উট ও ছাগলের বর্ণনা করেন,
যেভাবে অন্যরা উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও বলেছেন যে,
আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে হারানো জিনিস সম্পর্কেও
জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি (সা.) বললেন, যা চলমান পথে-ঘাটে অথবা ঘনবসতি এলাকায় পাওয়া যায়,
তবে তার জন্য সে এক বছর প্রচার করবে। তারপর
যদি তার মালিক পাওয়া যায়, তবে
তো তা তাকে দিয়ে দেবে। আর যদি এর মালিক না আসে, তবে তা তোমার (অধিকার) হবে। আর যা জনমানবহীন জায়গায় পাওয়া
যায়, তখন
সেটা এবং মাটিতে প্রোথিত গুপ্তধনের এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে (সরকারি কোষাগারে) দিতে
হবে। (আর অবশিষ্টটা তোমার হবে)। [আবু দাঊদ, হাদিস : ১৭১০, সহিহ আল-জামি, হাদিস : ৫৬৫৮, নাসায়ি, হাদিস : ৪৯৫৮]
অনুমতি ছাড়া জায়েজ হবে না- এছাড়া অন্যক্ষেত্রে গাছের
নিচে পড়ে থাকা ফল মালিকের অনুমতি ছাড়া খাওয়া বৈধ হবে না। যদি মালিকের পক্ষ থেকে অনুমতি
থাকে, তাহলে
খাওয়া বৈধ হবে। চাই অনুমতি প্রত্যক্ষভাবে থাকুক বা পরোক্ষভাবে থাকুক। (রদ্দুল মুহতার
: ৬/৪৪৪; ফাতাওয়ায়ে
হিন্দিয়া : ৫/৩৯৩; মাজমাউল
আনহুর : ২/২৫৬, ফাতাওয়ায়ে
মাহমুদিয়া : ২৩/৩৭৯)
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায়
যদি উক্ত ফলের মালিকের অনুমতি প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে থাকে,
তাহলে আপনার জন্য এই ফলগুলো খাওয়া জায়েয
আছে। প্রসঙ্গত, প্রশ্নে
উল্লিখিত ছোট থাকার অবস্থায় যেহেতু আপনার জ্ঞান হয়নি,
তাই তখনকার বিষয় আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে
দেবেন ইনশাআল্লাহ।
আর যদি মালিকের পক্ষ থেকে মালিকের অসম্মতি বা অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায় কিংবা
বোঝা যায়, তাহলে
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে যতগুলো ফল খেয়েছেন; সেগুলোর জন্য ফলগুলোর মালিকের কাছে গিয়ে যেকোনোভাবেই হোক-
মূল্য পরিশোধ করতে হবে বা মাফ চেয়ে নিতে হবে। এই দুইটির কোনোটি নিতান্ত জরুরি। কারণ,
বান্দার হক ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয়। ফলে যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা ক্ষমা করবে না, ততক্ষণ তা আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। এমনকি কোনো আমলের মাধ্যমেও
তা মাফ হবে না।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই/বোন!
১. চুরির কারণে হাত কাটার ক্ষেত্রে মালের পরিমাণ লক্ষণীয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন যে,
একটি ঢালের মূল্যের চেয়ে কম পরিমাণ চুরি
করলে হাত কাটা যাবে না ৷ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বর্ণনা অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে একটি ঢালের মূল্য ছিল দশ দিরহাম,
ইবনে উমরের বর্ণনা অনুযায়ী তার মূল্য ছিল
তিন দিরহাম, আনাস
ইবনে মালিকের বর্ণনা অনুযায়ী পাঁচ দিরহাম এবং হযরত আয়েশার বর্ণনা অনুযায়ী ছিল অর্ধ
দিনার ৷ সাহাবীদের এ মতবিরোধের কারণে চুরির সর্বনিম্ন নিসাব অর্থাৎ কমপক্ষে কি পরিমাণ
চুরি করলে হাত কাটা হবে এবং ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে ৷ ইমাম আবু
হানীফার মতে এর সর্বনিম্ন পরিমান দশ দিরহাম ৷ ইমাম মালেক,
ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদের মতে এক-চতুর্থাংশ
দীনার ৷ (সে যুগের দিরহামে থাকতো ৩ মাসা ১ রতি পরিমাণ রূপা এবং এক-চতুর্থাংশ দীনার
হতো ৩ দিরহামের সমান ৷) আবার এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো চুরি করলে হাত কাটার শাস্তি
দেয়া যাবে না ৷ যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ (আরবী) (অর্থাৎ
ফল ও সবজী চুরি করলে হাত কাটা যাবে না) (আরবী) (অর্থাৎ খাদ্যবস্তু চুরি করলে হাত কাটা
যাবে না) ৷ হযরত আয়েশা (রা) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন-
“তুচ্ছ ও নগণ্য
বস্তু চুরির অপরাধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলে হাত কাটা হতো না ৷”
হযরত আলী ও হযরত উসমানের ফায়সালা
ছিল (আরবী) (অর্থাৎ পাখি চুরি করলে হাত কাটা যাবে না) এবং সাহাবীগণের মধ্য থেকে কেউ
এ ব্যাপারে মতবিরোধ প্রকাশ করেননি ৷ তাছাড়া হযরত উমর ও আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা
বাইতুলমাল থেকে কেউ কোন বস্তু চুরি করলে তার হাত কাটেননি ৷ এ বাপারেও কোথাও সাহাবায়ে
কেরামের কোন মতবিরোধের উল্লেখ নেই ৷ এসব মৌল উৎসের ভিত্তিতে ফিকাহর বিভিন্ন ইমাম
কিছু নির্দিষ্ট বস্তু চুরি করার অপরাধে হাত কাটার দণ্ড না দেবার কথা ঘোষণা করেছেন
৷ ইমাম আবু হানীফার মতে শাক-শবজি, ফল, গোশত
রান্না করা খাবার, যে
শস্য এখনো স্তূপীকৃত করা হয়নি এবং খেলার সরঞ্জাম ও বাদ্যযন্ত্র চুরি করলে হাত কাটার
শাস্তি দেয়া হবে না ৷ এ ছাড়াও তিনি বনে বিচরণকারী পশু ও বাইতুল-মালের জিনিস চুরি করলে
তাতে হাত কাটার শাস্তি নেই বলে ঘোষণা করেছেন ৷ অনুরূপভাবে অন্যান্য ইমামগণও কোন কোন
জিনিস চুরির ক্ষেত্রে এ শাস্তি কার্যকর নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন ৷ কিন্তু এর অর্থ এ নয়
যে, এ
চুরিগুলোর অপরাধে আদতে কোন শাস্তিই দেয়া হবে না ৷ বরং এর অর্থ হচ্ছে,
এ অপরাধগুলোর কারণে হাত কাটা হবে না ৷
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্
‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
গাছের ফল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
مَنْ أَصَابَ
بِفِيْهِ مِنْ ذِيْ حَاجَةٍ غَيْرَ مُتَّخِذٍ خُبْنَةً ؛ فَلَا شَيْءَ عَلَيْهِ،
وَمَنْ خَرَجَ بِشَيْءٍ مِنْهُ ؛ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ
وَالْعُقُوْبَةُ، وَمَنْ سَرَقَ مِنْهُ شَيْئًا بَعْدَ أَنْ يُؤْوِيَهُ
الْـجَرِيْنُ فَبَلَغَ ثَمَنَ الْـمِجَنِّ ؛ فَعَلَيْهِ الْقَطْعُ، وَمَنْ سَرَقَ
دُوْنَ ذَلِكَ ؛ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوْبَةُ.
‘‘কেউ
প্রয়োজনের খাতিরে সাথে কিছু না নিয়ে (কারোর কোন ফলগাছের ফল) শুধু খেলে তাকে এর জরিমানা
স্বরূপ কিছুই দিতে হবে না। আর যে শুধু খায়নি বরং সাথে কিছু নিয়ে গেলো তাকে ডবল জরিমানা
দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যে ফল শুকানোর জায়গা থেকে চুরি করলো
এবং তা ছিলো একটি ঢালের সমমূল্য তখন তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে। আর যে এর কম চুরি
করলো তাকে ডবল জরিমানা দিতে হবে এবংযথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে’’। (আবূ দাউদ ৪৩৯০;
ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৫ নাসায়ী ৮/৮৫;
হা’কিম ৪/৩৮০) (আংশিক সংগৃহীত)
সুতরাং অসচ্ছল/অসহায় ব্যক্তির ক্ষেত্রে
উক্ত হাদীসটি প্রযোজ্য হয়েছে। হয়ত চুরির পরিমাণ এত স্বল্প যে, তা দশ দেরহামের চেয়ে
কম। বিধায় হাত কাটা নিষেধ। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে,
এই চুরিগুলোর অপরাধে আদতে
কোন শাস্তিই দেয়া হবে না ৷ বরং এর অর্থ হচ্ছে,
এ অপরাধগুলোর কারণে হাত কাটা হবে না ৷
২-৪. ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত গত গাছের ফলের বিধান একই রকম। অর্থাৎ
যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গাছের ফলমুল ভক্ষণ করা জায়েজ নয়। তাই
এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। অনুরুপ ভাবে গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল
মালিকের অনুমতি ছাড়া খাওয়া বৈধ হবে না। যদি মালিকের পক্ষ থেকে অনুমতি থাকে,
তাহলে খাওয়া বৈধ হবে। চাই অনুমতি প্রত্যক্ষভাবে
থাকুক বা পরোক্ষভাবে থাকুক। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৪৪৪; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩৯৩;
মাজমাউল আনহুর : ২/২৫৬,
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ২৩/৩৭৯)
যদি মালিকের পক্ষ থেকে যদি ফল কুড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারে
কোনো প্রকার বাধা বা নিষেধ করা না হয়, তাহলে আপনার জন্য ওইসব গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল কুড়িয়ে
খাওয়া জায়েয হয়েছে। অবশ্য কখনো যদি এ ব্যাপারে মালিকের অসম্মতি বা অসন্তুষ্টি বোঝা
যায়, তখন
পড়ে থাকা ফলও কুড়িয়ে নেওয়া জায়েয হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ৪/২৮৪;
ফাতাওয়া খানিয়া : ৩/৩৯১;
আলমুহিতুল বুরহানি : ৮/৫৪;
আন-নাহরুল ফায়েক : ৩/২৮৪)
৫. এটি এমন কোনো বিষয় নয়,
যা জানার উপর শরীয়তের কোনো আমল নির্ভরশীল
এবং আকীদাগত কোন বিষয়ও নয়, যা
জানা জরুরি ৷ তাই এ জাতীয় বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়।
কাফের-মুশরিকদের নাবালেগ সন্তান
মারা গেলে তাদের সাথে কি আচরণ করা হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন মত আছে। যেমন কেউ বলেন জান্নাতে
যাবে ৷ কেউ বলে জাহান্নামে যাবে ৷ কেউ বলে আ’রাফে থাকবে ৷ কেউ বলে জান্নাতীদের সেবক-সেবিকা
হবে ৷ তবে জান্নাত যাবে- এ মতটি অধিক শক্তিশালী। এর সঠিক ফয়সালা আল্লাহ তাআলাই ভালো
জানেন। (লামিউদ দারারী ২/১৩৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৫/৫০২; রদ্দুল মুহতার ২/১৯২; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫২ )
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এই বিষয়ে
তাওক্কুফ করেছেন। জান্নাত জাহান্নাম কোনো মতের দিকে যাননি।
আরো জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/85771/