আসসালামু আলাইকুম,
আমি এবং আমার স্বামী নিজেদের পছন্দেই নিক্বাহ করি।এরপর তা পারিবারিকভাবে গোপন রাখি।গুনাহ থেকে বাঁচতে এই কাজ করি।এরপর, জনাব পারিবারিকভাবে নিক্বাহ করতে চায়। তখন আমার পরিবার আর্থিকভাবে এবং মানসিকভাবে এমন অবস্থায় ছিলো যে, জনাবদের চাহিদা মাফিক নিক্বাহ অনুষ্ঠান করানোর অবস্থায় ছিলো না। কারণ সে সময় আমার বাবা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং লোকসান হয়।এরপর, পারিবারিক দুর্ঘটনায় আমার মা মারাত্মক অসুস্থ থাকতেন।আমরা ভাই-বোনেরা পালাক্রমে তাকে পাহাড়া দিতাম কারণ রাত ২/৩/৪/৫টা বাজেও অসুস্থ হয়ে যেতেন।তখনই আমরা ডাক্তারের কাছে ছুটে যেতাম।জনাবকে বহুবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে আমার অবস্থা কিন্তু তিনি বুঝতে নারাজ ছিলেন। এর মাঝেও সব দিকেই সম্পর্ক অটুট ছিলো। জনাব ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত।হঠাৎ করেই ওয়াসওয়াসাজনিত কথা বলেন। এর মাঝে বলি রাখি, আমাদের মাঝে কুফু সংক্রান্ত সমস্যা নেই।
এর সাথে, জনাবের একজন মেয়ে বান্ধবী আছেন।যিনি উস্কানিমূলক কথা বলতেন এবং জনাবের নামে বিভিন্ন কথা বলতেন। জনাবকে প্রমাণ হিসেবে উপাত্ত দেওয়ার পরেও জনাব, সেই মহিলাকেই সাধু বলেন এবং আমাকে খারাপ বলেন। এরপর থেকে সে মহিলার জন্য অনেক তর্ক-বিবাদ হলেও আমাদের সম্পর্ক নিজেরাই জোড়া লাগায়। এতো কিছুর পরেও জনাব, আমার সাথে পারিবারিক ভাবে এক হতে চাইছিলেন কিন্তু আমাদের আর্থিক সংকটে তা সম্ভব হয়নি।
এরপর ২০২০সালে জনাব ওয়াদা করেন, সে মহিলার সাথে কোনো দূরের ট্যুর দিবেন না। মহিলার সাথে তার প্রেমিক যেতেন সাথে আমার জনাবসহ আরো ২/৩জন।এই নিয়ে আমার চরম আপত্তি ছিলো।
২০২০সালের ফেব্রুয়ারিতে জনাব আমাকে না জানিয়েই সে মহিলার সাথে গ্রুপ ট্যুর দেয়। জনাবকে বহুবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও বলেননি। এই নিয়ে বিবাদ বাড়তে থাকে।এরপর রমজানের সময়, জনাব বলেন তিনি সে মেয়ের সাথে গিয়েছিলেন। তখন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে, জনাব বলে থাকতে ইচ্ছা হলে থাকবা এইরকম।তখন, আমি অতিরিক্ত কষ্ট পেয়ে ২০দিন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এর মাঝে, ১০দিন আমি এতেক্বাফে ছিলাম। তা জনাব জানেন।
এরপর জনাব, যোগাযোগ করছি না দেখে বাসায় এসে সিনক্রিয়েট করেন।আমি তখন বিয়ের কথা অস্বীকার করি।কারণ জনাব আমার থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আমি যেন এই কথা কোনো মতেই যেন ফাঁস না করি।আমি সে মোতাবেক স্বীকার করি না।
এরপর অনেক রাগারাগি চলতে থাকে ১.৫মাস।এরপর পারিবারিক ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক হয়। এর মাঝে সে মহিলা সংক্রান্ত বিরোধ চলতে থাকে।আমি অনেক রাগারাগি করি এবং জিদ-অভিমান দেখায় সাথে চিল্লাচিল্লি করি অনেক। পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেই, সেপ্টেম্বরে জনাব বিয়ের অনুষ্ঠান ভেঙে দেয় এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।এরপর জনাবের, ২জন বন্ধুকে কল দেয় এবং তারা আমাকে চাপ প্রয়োগ করে ছেড়ে দিতে।।এরপর, জনাবের পরিবারে যোগাযোগ করলে জনাবের বড় দুলাভাই ছাড়া কেউই কল ধরে না।তিনি কি কি কথা হয়েছে তা সম্পূর্ণ কথা জনাবকে জানায়নি।এই ঘটনার পর জনাব, তার দাড়ি কেটে ফেলে,টাখনুর নিচে প্যান্ট পড়া ছেড়ে দেয় এবং নামাজ ত্যাগ করে।
এরপর অক্টোবরে, আমার আর জনাবের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায় এবং আমরা ভালো থাকি।নভেম্বরে, আমি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায় এবং লিউকেমিয়া ধরা পরে।এরপর জনাবকে জানায় এবং অনুরোধ করি, আমার মাকে না জানাতে কিন্তু তাও সে জানিয়ে দেয়।লিউকেমিয়া ধরা পরার পর, আমি সিদ্ধান্ত নেয় জনাবের সাথে আর সম্পর্ক রাখবোনা কারণ আমার চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং এতে জনাবের জীবন কষ্টকর হবে এইভেবে।কিন্তু জনাব বিচ্ছেদ ঘটাতে চাই না এবং আমাকে নিয়ে ফেরত আসে।এর মাঝে জনাব আমার চিকিৎসা খরচ নিয়ে আমাকে খোঁটা দেয়।এই জন্যই আমি তাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। এরপর আমি একজন কাজির কাছে যায় এবং বলি, ইসলামিকভাবে বিচ্ছেদের নিয়ম।তিনি আমার অসুস্থতার কথা শোনার পর জানান যে ইসলামিকভাবে এই বিচ্ছেদ হবে না এবং তা হারাম। এরপর চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার একজন আলেম আমাকে বিস্তারিত বুঝান যে, এইটা গুনাহ এবং আমার আগ্রহে আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। মাদ্রাসায় যাওয়ার আগে, আমি জনাবের সাথে তর্কাতর্কির সময় কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দেয় এবং রাগারাগি করি। কারণ হলো জনাব আমাকে সময় দেয় না এবং সময় চাইলে অজুহাত দেখায়। তিনি আমাকে কিংবা আমার মন বুঝতে কখনই চান না। যাই বলি তাতেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। তার ওয়াসওয়াসার জন্যই এইসব ঘটে।
এরপর, আমি জানতে পারি গালি দেওয়ার শাস্তি সম্পর্কে। উক্ত আলেমের কথা মোতাবেক, আমি গালি দেওয়ার জন্য একটা রোজা রাখি (নিজ থেকে) এবং দুই রাকাআত তাওবার নামাজ আদায় করি।এরপর সকল সাগীরা এবং কবীরাহ গুনাহের লিস্ট বের করে, প্রতিটি গুনাহ যা করেছি তার জন্য তাওবার নামাজ আদায় করা শুরু করি। এইসবের মাঝেও জনাবের সাথে যোগাযোগ বন্ধ।
জনাবের সাথে যোগাযোগ হলে, আমি জনাবকে বলি শান্তভাবে যে,
আমি তার ঘরে যাওয়ার পর শুধুই তার কথা এবং তার মায়ের কথা শুনবো, তাছাড়া কারো কথা শুনবোনা। কারণ আমি তার সংসার করবো, আর কারো না। আমি তার পরিবারের বড়দের দ্বারা কষ্ট পেয়েছি কিন্তু কখনোই বলিনি জনাবকে কারণ পারিবারিক কলহ আমি চাইনি।আমি তার পরিবারের সাথে খারাপ আচরণ করিনি কখনো।
এরপর জনাব, সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং আমার সাথে সংসার করবে না বলে জানায়। ডিসেম্বরের ১২তারিখ থেকে এখনো সে বাহানা দেখায় যাচ্ছে। সে বলছে মরে গেলেও সংসার করবেনা।তার পরিবার আমার উপর অসন্তুষ্ট না।আমার সাথে কোনো মতবিরোধ হয়নি কখনো।
বর্তমানে জনাব নামাজ আদায় করে না, মাদক সেবন করে।অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে এবং ওয়াসওয়াসাপূর্ণ কথা বলে।
এখন দুইটা জিনিস দেখিয়ে জনাব বিচ্ছেদ চাইছে,
১)আমি তাকে গালি দিয়েছি মানে তার মৃত বাবাকে গালি দিয়েছি।
২) আমি জনাব এবং তার মা ছাড়া ; তার বড় দুই বোন-জামাই+বড় ভাই-ভাবীর এবং তাদের পরিবারের কথা শুনবো না বলায়।
এই দুই কারণে সে বিচ্ছেদে ঘটাতে উতলা।
ইসলামে এই কারণে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে না যতটা জানি।
আমি অর্থসহ ক্বোর'আন পড়ে, আমি আমার জীবনের সকল মানুষকে ক্ষমা করে দিয়েছি। অতএব, আমার স্বামী কিংবা সে মহিলা অথবা শ্বশুর বাড়ির বড় কারো প্রতিই আমার রাগ-ক্ষোভ কিছুই নাই৷ আমি আমার স্বামীকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং আপোষ করতে প্রস্তুত।
আমি একবার ওই মহিলার জন্য রাগ করে বলেছিলাম, বিয়ের দশ বছর পরেও যদি সন্তান থাকে তখনও যদি জানি তার পরকীয়া আছে সে মহিলার সাথে তবে তাকে ছেড়ে দিবো।আমি এই কথা তুলে নিয়েছি আগেই।তবুও জনাব, এই কথাটা নিয়েও ইস্যু করছেন।
(আমি আল্লাহর কাছে আলেমের পরামর্শ মাফিক ক্ষমা চেয়েছি এবং কোনো দিনই তালাক্ব শব্দ মুখে আনবোনা বলে তাওবা করেছি ও এই কাজে জড়াবো না বলেই নামাজ আদায় করি।
জনাব আমার সাথে থাকাকালীন সিগারেট পর্যন্ত খাই না এবং ইবাদাত পালন করে, টাখনুর উপরে প্যান্ট পরে।)
উপরোক্ত কারণ দুইটার জন্য তালাক্ব কি জায়েজ?
আমি কোনো ভাবেই তালাক্ব চাই না এবং সংসার করতে চাই। প্লিজ সমাধান দিন আমাকে এবং রক্ষা করুন আমার সম্পর্ক। আমি স্বামী থেকে আলাদা হতে চাই না। আমি তাকে গুনাহের পথে সহ্য করতে পারছি না। আমায় সাহায্য করুন প্লিজ।
পুনশ্চঃ আমার আগে অনেক রাগ ছিলো, আমি অনেক চিল্লাতাম। আমি জনাবের অনুপস্থিতিতেও কখনোই হারামভাবে কিছুই করিনি। তার প্রদত্ত অর্থ আমি সব সময় সাদকা জারিয়াহ করে দিয়েছি। আমি কোনো পরপুরুষের সাথে কোনো সম্পর্কে কোনো দিনই আবদ্ধ ছিলাম না। আমি বর্তমানে আলেমে ভর্তি হয়েছি এবং হেফজে ভর্তি হয়েছি। আমি পূর্ণাঙ্গ পর্দা করি। মাহরাম মেনে চলি আলীমে ভর্তি হবার পর।
জনাব আমার সাথে থাকাকালীন এমনভাবে থাকেন মনে হয় যে, সে খুবই সন্তুষ্ট কিন্তু দূরে গেলেই কিছুদিন পর সহ্য করতে পারেন না।