আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
133 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন পর্দা সম্পর্কে, আমি পয়েন্ট আকারে সেগুলো উল্লেখ করছি ইনশাআল্লাহ।

১. মেয়েরা কত জনের সাথে দেখা দিতে পারবে? তারা কারা?

২. পর্দা মানে কি শুধু বোরকা পড়ে থাকা? নাকি এর ব্যাখ্যা রয়েছে? বিস্তারিত জানতে চাই।
৩. ছেলেদের পর্দা কি এবং ছেলেরা কাদের সাথে দেখা দিতে পারবে?

৪. বাড়িতে পর্দা প্রতিষ্ঠা করা কিভাবে সহজ হতে পারে? পরামর্শ চাই।

শায়েখ, পর্দা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে চাই, এর জন্য পর্দার সম্পূর্ণ দলিল উল্লেখ করবেন ইনশাআল্লাহ। পর্দা সম্পর্কে যেগুলো জানলে বা পড়লে, পর্দা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারব এবং আমার ফ্যামিলি ও সমাজকে পর্দার বিষয়ে অবগত করতে পারবো, সেগুলো অবশ্যই আমাকে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

** ১ , ৩: - ১৪ জন মাহরাম ব্যতীত বাদবাকী সবাই গায়রে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। গায়রে মাহরামের সামনে সম্পূর্ণ পর্দা করতে হবে। এ সম্পর্কে জানুন- https://www.ifatwa.info/572

 https://www.ifatwa.info/572  নং ফাতওয়াতে আমরা উল্লেখ করেছি যে,

ফুকাহায়ে কেরামদের তাত্ত্বিক আলোচনা দেখলে অনুভব করা যায় যে, পর্দা সর্বমোট তিনটি স্থর রয়েছে যথাঃ-

(১)সর্বাবস্থায় মহিলা ঘরে অবস্থান করবে।

(২)প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে এক চোখ খুলা রেখে যেতে পারবে।

(৩)প্রয়োজনে হাত-খোলা রাখতে পারবে।

উপরোক্ত বিষয়াবলীর পরিপূর্ণ ব্যখার পূর্বে আমাদেরকে কয়েকটা জিনিষ ভালভাবে বুঝতে হবে.................

মাহরাম কাকে বলে?

পর্দার ক্ষেত্রে মাহরাম দ্বারা কোন মাহরাম উদ্দেশ্য?

সতর কি?

সতর এবং হেজাব উভয়-ই কি সমান?

নামাজের জন্য সতর প্রযোজ্য না হেজাব প্রযোজ্য?

কন্তু এখন আমরা সতর ও হিজাব নিয়ে আলোচনা করব।

সতর এবং হিজাব সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় যে, এ দুটি প্রায় আলাদা আলাদা।অর্থাৎ সতর একটা এবং পর্দা অন্যটা। তবে এ দুটিই নারীদের ক্ষেত্রে ফরয।

সতর যা নামাযের জন্য প্রযোজ্য বা এক মহিলার সামনে অন্য মহিলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর পর্দা পরপুরুষের জন্য প্রযোজ্য।

নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য সতর ঢেকে রাখা শর্ত।এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বলা হয়,

العورة للرجل من تحت السرة حتى تجاوز ركبتيه

পুরুষের জন্য নাভীর নীচ থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে।

بدن الحرة عورة إلا وجهها وكفيها وقدميها

এবং আযাদ মহিলাকে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে চেহারা এবং কবজি পর্যন্ত হাত ও টাখনু পর্যন্ত পা ব্যতীত।

এবার মূল আলোচনায় ফিরা যাক, তো আমরা বলছিলাম,পর্দার তিনটি স্থর নিয়ে।

প্রথম স্থরঃ মহিলা সর্বাবস্থায় ঘরে বসে থাকবে,অর্থাৎ ঘরের ভিতর থাকার মাধ্যমে ব্যক্তি পর্দা করবে।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻣَﺘَﺎﻋًﺎ ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦ ﻭَﺭَﺍﺀ ﺣِﺠَﺎﺏٍ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﺃَﻃْﻬَﺮُ ﻟِﻘُﻠُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻭَﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻦَّ

তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ।

{সূরা আহযাব-৫৩}

ﻭَﻗَﺮْﻥَ ﻓِﻲ ﺑُﻴُﻮﺗِﻜُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒَﺮَّﺟْﻦَ ﺗَﺒَﺮُّﺝَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ ﻭَﺃَﻗِﻤْﻦَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺁﺗِﻴﻦَ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﺃَﻃِﻌْﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻴُﺬْﻫِﺐَ ﻋَﻨﻜُﻢُ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻭَﻳُﻄَﻬِّﺮَﻛُﻢْ ﺗَﻄْﻬِﻴﺮًﺍ

তরজমাঃতোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।(সূরা-আহযাব-৩৩)

দ্বিতীয় স্থরঃ প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে, এক্ষেত্রে এক বা উভয়  চক্ষু খোলা রেখে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞ ﻟِّﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥ ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤًﺎ

তরজমাঃহে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।(সূরা আহযাব-৫৯)

তৃতীয় স্থরঃ মহিলাদের সমস্ত দেহ আবৃত থাকবে কিন্তু ফিতনার আশংকা না থাকলে মুখমণ্ডল ও হাতের তালু খোলা রাখা যাবে।এ স্থর নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।তবে সর্বাবস্থায় ফিতনার আশংকা না থাকাই লক্ষণীয়।

প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলার কিছু মাহারাম রয়েছে। এবং কিছু গায়রে মাহরাম রয়েছে।ফিতনার আশংকা না থাকলে মাহরামের সামনে পর্দা ফরয নয়।তবে শরীরকে অবশ্যই শালীনতার সাথে ঢেকে রাখতে হবে।মাহরামের সামনে শরীরের কতটুকু অংশ প্রকাশ করা যাবে? এ সম্পর্কে জানুন-https://www.ifatwa.info/1549

এখন প্রশ্ন হল মাহরাম কারা? আল্লাহ তা'আলা মাহরাম সম্পর্কে বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَنْ يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَٰكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنْكُمْ ۖ وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ ۚ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ ۚ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا [٣٣:٥٣]إِنْ تُبْدُوا شَيْئًا أَوْ تُخْفُوهُ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا [٣٣:٥٤]لَا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِي آبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ أَخَوَاتِهِنَّ وَلَا نِسَائِهِنَّ وَلَا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ ۗ وَاتَّقِينَ اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا [٣٣:٥٥]

অনুবাদ-হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।

 

মাহরাম কারা? এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/2722

**২:-  পর্দার অর্থ হল, এমন ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করা যাতেকরে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ অঙ্গ সমূহ জনসম্মুখে প্রকাশিত না হয়। সব কিছু এক কালার হোক বা না হোক এতে কোনো সমস্যা নেই। বোরকা ঢিলেঢালা হলে তাতে কারুকার্য থাকতেও কোরো বাধা নেই।

আজকাল সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য অনেকে টাইটপিট আঠালো বোরকা পরিধান করেন। যা দ্বারা বোরকার ফরযিয়্যাত আদায় হয় না। পর পুরুষ বা জনসম্মুখে সৌন্দর্য ঢেকে রাখতেই ঢিলেঢালা পোষাকের বিধান শরীয়ত দিয়েছে। তাই শরীয়তের উদ্দেশ্যর প্রতি সংহতি রেখেই পর্দাপুশিদা করা উচিৎ।

পর্দার পোশাক অর্থাৎ হিজাবের অন্তর্ভুক্ত পোশাকগুলো কালো রঙের হওয়া জরুরী নয়।বরং যেকোনো কালারের পোষাক মহিলারা পড়তে পারবে।তবে শর্ত হল,আকর্ষণীয় হতে পারবে না,বরং সাধাসিধে হতে হবে। উত্তম এটাই যে,কালো বা এমন কোনো রঙের বোরখা হওয়া, যা আকর্ষণীয় নয়।

আকর্ষনীয় হয় যা ফিতনাকে সম্ভাবনাময় করে তুলে, এমন পোষাক বা বোরখাকে পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।যদি পুরপুরুষের সামনে যাওয়ার প্রয়োজন হয়,তাহলে এমন ফিতনা সম্ভলিত পোষাক পরিধান করে মহিলা যেতে পারবে না। মোটকথা আকর্ষণীয় পোষাক দ্বারা পর্দা রক্ষা হবে না।

**৪:- এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন : https://www.ifatwa.info/74126/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 154 views
...