بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/17664/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি
উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
تزوجوا
الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة
“তোমরা
অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের
দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী।
হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)
** সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে
সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এক. স্থায়ী
পদ্ধতি–যার দ্বারা
নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ।
আল্লামা
বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم
بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ
পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)
দুই. অস্থায়ী
পদ্ধতি– যার ফলে
স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের
মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর
মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি।
দ্বিতীয়
প্রকার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত মাকরুহে তানযিহি। তবে শরীয়ত সম্মত নিম্নোক্ত প্রয়োজনে
বৈধ রয়েছে।
(ক) মহিলা
এত দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
(খ) মহিলা
নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই।আবার
নিজ বাসস্থানে আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বা কয়েক মাসের প্রয়োজন।
(গ) স্বামী-স্ত্রীর
পারস্পারিক সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি উভয়ের অন্তরে বিচ্ছেদের
চিন্তাভাবনা চলছে।
(ঘ) পূর্বের
বাচ্চার সু-সাস্থ্যর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(ঙ) স্থান-কালের
ফাসাদ অর্থাৎ দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র
এবং মাতাপিতার বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ
عن جابر قال
كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب
العزل
হযরত জাবের
রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল (যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী
পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)
★বিঃদ্রঃ সম্পদ কমে যাবে বা মেয়ে সন্তান
জন্ম নিলে সমাজে লজ্জিত হতে হবে মনেকরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ কখনো বৈধ হবে না।
আল্লাহ
বলেছেন,
ولا تقتلوا
أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً.
‘’দারিদ্রতার
ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান
করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)
অন্যত্র
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
الشَّيْطَانُ
يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ .
“শয়তান
তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)
কিন্তু
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকাল যদিও সন্তান হত্যার
পরিবর্তে নানাবিধ উপায়ে তাদের জন্মের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবুও সন্তান
জন্মানোর ফলে আর্থিক আশংকাজনিত ভুল ধারণা জন্মনিরোধের অন্যতম কারণ।
সুতরাং
এবিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে ভেবে চিন্তে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে
হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন
আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ না করে দেই।
বিস্তারিত
জানুনঃ https://ifatwa.info/446
https://ifatwa.info/4441
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
পড়াশোনার
অজুহাতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি ইসলামে
নেই। এটি মাকরুহে তানযিহি হবে। উপরোক্ত বৈধ পদ্ধতির মধ্যে কোনো একটা যদি এখানেও
পাওয়া যায়, যেমন আপনি যদি এত
দুর্বল হোন যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা
নেই। তাহলে আপনার জন্য সাময়িক ভাবে উপরে উল্লেখিত পদ্বতির মাধ্যমে
জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা জায়েয আছে। অন্যথায় মাকরুহে তানযিহি হবে।
আমরা দোয়া
করি আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য ইলমে দ্বীন অর্জন করা সহজ করে দিন। আমাদের অনেক বোন এমন
আছেন যারা আইওমে পড়াশুনার পাশাপাশি পরিবারের হক আদায় ও সন্তান ধারণ ও লালন পালন একই
সঙ্গে করে যাচ্ছেন। আপনি আল্লাহ তায়ালার উপর তাওয়াক্কুল করে সামনে এগিয়ে যেতে
পারেন। আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য সবকিছু সহজ করে দিন।