বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
উত্তর ঃ
রোগী দেখতে এসে তার জন্য দোয়া করা সুন্নত। এতে প্রশান্ত হয় রোগীর অন্তর। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) কোনোর রোগী দেখতে এলে রোগীর শিয়রে গিয়ে বসতেন। অতঃপর সাতবার এ দোয়া পড়তেন, ‘আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আন ইয়াশফায়াকা’। (অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে কামনা করছি, আরশের মহান রবের কাছেও কামনা করছি, তিনি যেন তোমাকে সুস্থ করে দেন)। এতে রোগী দেরিতে হলেও সুস্থ হয়ে উঠত।’ (মুসনাদের আহমাদ : ২২১২৯, আল আদাবুল মুফরাদ : ৫৩৬)।
রোগীকে সাহস জোগানো : রোগীকে দেখতে এসে তার মনে সাহস জোগানো উচিত। তার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলা, যেন তার অন্তরে বেঁচে থাকার আশা জেগে ওঠে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রোগীর সঙ্গে এমনভাবে কথা বলো, যেন সে অন্তরে সান্তনা লাভ করে।’ (তিরমিজি : ২০৯৪)। এছাড়া রোগীকে ধৈর্য ধারণ করতে বলাও সুন্নত। এ সময় ধৈর্যের সাওয়াব সম্পর্কে বলা। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোনো মুমিন বান্দাকে পরীক্ষায় ফেললে, সে এতে ধৈর্য ধারণ করল এবং সাওয়াবের প্রত্যাশা করল আর আমার প্রশংসা করল, সে বিছানা থেকে গুনাহমুক্ত হয়ে এমনভাবে উঠবে যেন সে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশু।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৭২৪৮)।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোনো রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর কাছে যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে আনা হতো; তখন তিনি বলতেন-
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
অর্থ : ‘কষ্ট দূর করে দাও, হে মানুষের রব! আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার সুস্থতা ছাড়া অন্য কোনো সুস্থতা নেই। এমন সুস্থতা দান কর তা যেন সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
★★মেহমানের জন্য কয়েকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো : মেহমান যেন খাদ্যের অযাচিত ভুল-ত্রুটি ধরার পেছনে না পড়ে মেজবানের প্রশংসায় সর্বদায় যেন পঞ্চমুখ থাকে এবং মেজবানের সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে। সর্বশেষ মেহমানের উচিত মেজবানকে শুনিয়ে শুনিয়ে যেন মনখুলে এই বলে দোয়া বলে, ‘হে আল্লাহ! যে আমার খাবারের ব্যবস্থা করল তুমি তার খাদ্যের ব্যবস্থা কর। আর যে আমাকে পান করাল তুমিও তাকে পান করাও।’ (মুসলিম : ৫২৫৭)
দাওয়াত খাওয়ার পর মেজবানকে শুনিয়ে এই দু‘আ পড়ার বিষয়টিও হাদীসে পাওয়া যায়:
أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ
অর্থঃ আল্লাহ করুন যেন (এমনভাবে) নেককার লোকেরা তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশ্তাগণ যেন তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনার দু‘আ করে এবং রোযাদারগণ যেন তোমাদের বাড়িতে ইফতার করে।
(আবু দাঊদ হাঃ ৩৮৫৪, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১২৪০৬, ইবনে মাজাহ হাঃ১৭৪৭)
উপকারিতাঃ
حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ إِلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، فَجَاءَ بِخُبْزٍ وَزَيْتٍ، فَأَكَلَ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ)-এর বাড়িতে গেলেন। সা‘দ (রাঃ) রুটি ও যাইতুন তৈল আনলেন। তা খাওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের নিকট রোযাদারগণ ইফাতর করেছে, সৎ লোকেরা তোমাদের খাদ্য খেয়েছে এবং ফিরিশতাগণ তোমার জন্য রহমতের দু‘আ করেছেন। (আবু দাঊদ হাঃ ৩৮৫৪)
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই / বোন!
১. মেহমানের উচিত মেজবানকে শুনিয়ে শুনিয়ে উপরে উল্লখিত দোয়া পাঠ করা। এমনটিই নবী সা. এর হাদীস থেকে পাওয়া যায়।
২. অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দুই ভাবেই দুআ করা যায়। রোগী যখন আগন্তুক ব্যক্তি থেকে দোয়া পা তখন সে প্রশান্তি পায় ও রোগ থেকে শুশ্রূষার ব্যাপারে আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। বিধায় তাকে শুনিয়ে দোয়া পড়াই উত্তম। তবে যদি রোগীর অবস্থা খুব আশংকাজনক হয় যে, তার নিকট আওয়াজ না করাই শ্রেয তাহলে তার জন্য নিম্ন স্বরে দুআ করাই উত্তম।