بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
https://ifatwa.info/31550/
নং ফাতওয়াতে আমরা উল্লেখ করেছি যে,
শরীয়তের বিধান হলো যদি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সমঝদার সাক্ষ্যির
সামনে প্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র ও পাত্রি যদি প্রস্তাব দেয় এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নেয়,
তাহলে ইসলামী শরীয়াহ মুতাবিক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। অভিভাবকের সম্মতি
থাকুক বা না থাকুক। অভিভাবক জানুক বা না জানুক।
তবে যদি গায়রে কুফুতে বিবাহ করে, তথা এমন পাত্রীকে বিবাহ করে, যার কারণে ছেলে বা মেয়ের পারিবারিক সম্মান বিনষ্ট হয়, তাহলে পিতা সে বিয়ে আদালতের মাধ্যমে ভেঙ্গে দিতে পারে। যদি কুফুতে বিবাহ করে,
তাহলে পিতা এ অধিকারও পাবে না
রাসুল সাঃ কুফু মিলাইতে বলেছেনঃ
وَعَنْ
أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ
لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ
بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা
হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে
সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে
প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)! (সহীহ বুখারী ৫০৯০, মুসলিম
১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭,
ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)
কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ https://www.ifatwa.info/4541/
সুতরাং আপনারা উভয়ে যদি প্রাপ্ত
বয়স্ক অবস্থায় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষ্যির উপস্থিতিতে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রস্তাব
গ্রহণ সম্পন্ন করেন, তাহলে আপনাদের
বিয়ে ইসলামী শরীয়াহ মুতাবিক শুদ্ধ হয়ে যাবে। যদিও আপনাদের পরিবার কিছুই না জানে বা
রাজি না থাকে। কিংবা তারা অনুমতি নাও দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কাজি বা হুজুরের কোনো প্রয়োজন
নেই।
عَنْ عَبْدِ
اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ
أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস
রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন,
মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১, মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং-২০৯৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৩৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩৫৭৬}
عَنْ أَبِي
سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ” جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ
اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ
أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ،
وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ:
صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ
হযরত সালামা বিনতে আব্দুর
রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এল। এসে বলল, হে
আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব
দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ
করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল
নয়। তখন রাসূল সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১}
عَنِ ابْنِ
بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: ” إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ،
لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ:
قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ
لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “
হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, জনৈক মহিলা
নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে
বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন,
তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও
দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন,
তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা
যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার
নেই্ {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪,
মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১৩৫৯,
সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৫৫}
উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও আরো
এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যা স্পষ্ট
ভাষায় প্রমাণ করে যে, বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে পিতা বা অভিভাবকের
হস্তক্ষেপের অধিকার নেই।
★★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই / বোন!
কোন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বা
মহিলা অভিভাবক ছাড়া বিয়ে করলে তা সম্পন্ন হয়ে যাবে। সুতরাং আপনারা উভয়ে যদি প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় কমপক্ষে
দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষ্যির উপস্থিতিতে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রস্তাব গ্রহণ সম্পন্ন
করেন, তাহলে আপনাদের বিয়ে ইসলামী শরীয়াহ
মুতাবিক শুদ্ধ হয়েছে। যদিও আপনাদের পরিবার
কিছুই না জানে বা রাজি না থাকে। তবে মা বাবাকে না জানিয়ে উক্ত বিয়ে করাটা আপনাদের জন্য মোটেও উচিত হয়নি। তাদেরকে জানিয়েই বিয়ে করাই উচিত ছিল।
সুতরাং আপনারা পরস্পরে স্বামী ও স্ত্রী।
বেশি বেশি দুআ করুন। স্ত্রী
সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। যদি আপনার একক চেষ্টায় সে ফিরে না আসে তাহলে পারিবারিককে আপনাদের বিয়ের বিষয়টি অবগত করুন এবং পারিবারিকভাবে চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ এতে কল্যাণ থাকলে আপনি আপনার স্ত্রীকে ফেরত পাবেন।
বি:দ্র: আপনি তালাক না দিলে আপনার স্ত্রীর
জন্য অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করা কোন ভাবেই জায়েয নেই। কারণ, সে আপনার বিবাহিত স্ত্রী।