আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
274 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়াবারকাতুহু
বিয়ের ক্ষেত্রে - ছেলের বাবা  সরকারি দলের রাজনীতিবিদ  এবং এম পি পর্যায়ের পজিশনে আছে।বৃটিশ আমল থেকেই তাদের পরিবার রাজনৈতিক পরিবার এবং যথেষ্ট প্রতিপত্তি রয়েছে। ছেলের রাজনীতির প্রতি তেমন কোনো আকর্ষণ নেই।বর্তমানের রাজনীতির সিস্টেম তার পছন্দ না। তাই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ইলেকশন করে না। বাবার সাথে নামমাত্র রাজনীতিতে থাকে।কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয় না। বাবার ক্ষমতাকে নিজের ভোগ বিলাসে ব্যবহার না করে সাধারণ মানুষের সেবায়, সমাজের সেবায় ব্যবহার করে।ছেলে নিজে ব্যবসা করে। ।আগে তেমন দ্বীনের বুঝ ছিল না। পরবর্তীতে এখন দ্বীন মানার চেষ্টা করে। নামাজ রোজা পালন করে। অনেক দান সাদাকা করে, মানুষের উপকার করে।মাঝে মাঝে মাদ্রাসার খেদমতে সেখানে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করে।সব সময় হালাল ইনকামের কথা বলে। এমনকি অনলাইন প্লাটফর্মে কয়েক লক্ষ টাকা ইনকামের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা ছেড়ে দিয়েছে।শরীয়তে এটা জায়েজ না তাই।আলেম-ওলামাদেরকে সম্মান করে তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়।তাদের খেদমতের চেষ্টা করে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী। তারপর অনেক মানুষ সামান্য ইনকামে কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছে এটা ভেবে নিজে এখন আর হোটেল রেস্টুরেন্টে দামি খাবার দাবার খাই না।  নিজেই উমরা করে আসছে। পরিবার তেমন দ্বীনদার না। পরিবারের হেদায়েতের জন্য সব সময় দোয়া করে এবং সবার কাছে দোয়া চাই। বাবা মা ডিভোর্স অনেক আগে থেকেই। আখলাকের দিক থেকে সবাই খুবই ভালো বলে । ধনী গরীব সবার সাথে খুবই বিনয়ী, ভদ্র, নিরঅহংকার। তবে কিছু গুনাহের বিষয় সম্ভবত তার ধারণা না থাকার জন্য হতে পারে  যেমন অনলাইনে মাঝে মধ্যে মিউজিক সহ ভিডিও শেয়ার করে যদিও বা ভাল শিক্ষামূলক। তারপর পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে কিন্তু চুলের কাটা সুন্নতি না বা দাড়ি থাকলেও এক মুষ্টি যেটা সুন্নতি  আরকি তেমন না,। তারপর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে যে খাওয়ানোর রসম সমাজে প্রচলিত সেটা করে তার পরিবার থেকেই। তবে সব সময় সব বিষয়ে একমাত্র আল্লহর ওপর ভরসা করে চলে এবং বলে যে,আল্লহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তার কথা হলো আল্লহর সন্তুষ্টি আমাকে যে পথে যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে সেভাবে থাকবো।।আল্লহর সন্তুষ্টিই আমার ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা। এখন কোনো দ্বীনদার মেয়ের কি উচিৎ হবে এরকম ছেলেকে বিয়ে করা নাকি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় রিজেক্ট করা উচিৎ হবে এরকম ছেলের বিয়ের প্রস্তাব? মেহেরবানি করে উত্তর  জানিয়ে বাধিত করবেন।

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাব

https://www.ifatwa.info/4541/  নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি , যে,

বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম।

আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি।

 

বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের দ্বীনদারি, সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।

 

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক।

 

আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

 

আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)

 

কুরআনের পাশাপাশি রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।

রাসূল সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَابُورَ الرَّقِّيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَنْصَارِيُّ أَخُو فُلَيْحٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ عَنْ ابْنِ وَثِيمَةَ النَّصْرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।)

,

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ عِمْرَانَ الْجَعْفَرِيُّ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ

 ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৮)

 

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)! সহীহ : বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)

 

কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/4541/

ইস্তেখারার নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/14451/

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

ছেলে ও ছেলের পরিবার যদি আপনার ও আপনার পরিবারের মত দ্বীনদার না হয়ে এবং আপনার ও আপনার পরিবারের কুফু এবং তার ও তার পরিবারের কুফুর সাথে মিল না থাকে তাহলে বিয়ের জন্য সামনে অগ্রসর না হওয়াই আমরা পরামর্শ দিবো। কারণ, একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দ্বীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

তবে আপনি ইস্তেখারাহ করে ও আপনার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
reshown
জাযাকুমুল্লহু খয়রন। অনেকবার ইস্তেখারা করার পরও মন থেকে পজিটিভ উত্তর আসে। মানে আরো এই প্রস্তাবের দিকেই আগ্রহ বাড়ছে।বিশেষ করে ছেলের কথা শুনে। কিন্তু জালেম এবং জালেমের সহযোগীর ব্যাপারে যে হাদিস আছে যে নবীজী সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন উনার দলভুক্ত নয়, আমি ভয় পাচ্ছি এখানে বিয়ের জন্য আগালে আমি জালেমের অন্তর্ভুক্ত বা সহযোগী হয়ে যাবো না তো যেহেতু তারা সরকারি দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত! যদিও তারা সরাসরি কোনো জুলুমের সাথে জড়িত বলে জানা যায় নি। কিন্তু রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ায় আমি তাদের বাড়ির বা পরিবারের বউ হলে কোনো নিষধাজ্ঞা আছে কিনা শরীয়তে এই বিষয়ে যদি একটু স্পষ্ট ধারণা দিয়ে বাধিত করতেন প্লিজ।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...