আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
371 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (37 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ

উস্তাদ,

১) ফরয, ওয়াজিব,সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ,ফর‍যে কেফায়া, সুন্নাতে যায়িদাহ, নফল, মুস্তাহাব, মোবাহ, মাকরুহ ইত্যাদির শব্দার্থসহ কাকে বলে,  ইসলামের পরিভাষায় বিশদভাবে জানালে ভাল হয়।

২) সকাল সন্ধ্যায় তিন কুল ৩ বার করে পড়ে হাতে ফু দিয়ে শরীরে মাখার নিয়মটা কী, মানে ইখলাছ ৩ বার পড়ে ফু দিয়ে মুছে নেয়া, আবার ফালাক, তারপর নাস এভাবে কিনা?

৩)  মুখে নামাজের নিয়ত করা সুন্নাত কিনা,

৪) শুধু প্রস্রাবখানার পাশে যদি গোসলখানা থাকে এবং মাঝখানে পার্টিশন দেয়া থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে গোসলখানায় প্রয়োজনে কুরআনের আয়াত কোনো শারীরিক অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভের নিয়তে পড়া যাবে কিনা,

৫) শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ক্বারীর নাম জানালে ভাল হয়, যাদের তিলাওয়াত  শুনতে শুনতে হরফের উচ্চারণ যথাযথ মাখরাজ ও সিফাত অনুযায়ী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, কারণ ১০০% তিলাওয়াত সহীহ করা প্রয়োজন।

জাজাকাল্লাহু খইরন

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
যে বিধানটি ক্বতয়ী তথা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। তাকে ফরজ বলা হয়। অর্থাৎ যা আল্লাহর নির্দেশিত পালনীয় আমল হবার বিষয়ে বিন্দু পরিমাণ কোন সন্দেহ না থাকে। 
সেটি ফরজ।
যেমন নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি।
ফরজ অস্বিকারকারী কাফের।

وهو بمعنى قولهم: ما لزم فعله بدليل قطعى، (البحر الرائق، كتاب الطهارة-1/24)
যে বিধানটি ক্বতয়ী তথা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। 
,
★ওয়াজিব
যা করার আদেশটি জন্নী দলীল তথা ফরজের তুলনায় দুর্বল দলীল দ্বারা প্রমাণিত।

واجب: وهو ما ثبت بدليل فيه شبهة، (قمر الأقمار حاشية نور الأنوار-166)

وأما الحنفية فيقولون……. والواجب، فهو ما ثبت بدليل ظنى فيه شبهة، (أصول الفقه الإسلامى-1/47)
সারমর্মঃঃ ওয়াজিব বলা হয়  যেটি জন্নি দলিল দ্বারা প্রমানীত। 
 
ওয়াজিব অস্বিকারকারী গোমরা এবং ফাসিক হয়। কাফের হয় না।

★সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়, যে আমলকে রাসূল সাঃ ইবাদত হিসেবে পাবন্দীর সাথে করেছেন। কখনো ওজর ছাড়া ছেড়ে দিয়েছেন বা নিজেতো ছাড়েননি কিন্তু যে ছেড়ে দিয়েছে তাকে ভর্ৎসনা করেননি। এরকম আমলকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়। {আততাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ-৩২৮, আলমুজিজ ফি উসুলিল ফিক্বহ-৪৩৯-৪০}

সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। 
তবে শাস্তিও পেতে পারে।
وحكمها كالواجب—- إلا أن تارك الواجب يعاقب وتاركها لا يعاقب- (التعريفات للجرجانى-138
তার হুকুম ওয়াজিবের মতোই,,,,

ফরজ নামাযের আগে পরের সুন্নতে মুআক্কাদার অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন যে, যদি কেউ সুন্নতকে হক মনে না করে এটাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে এ কর্ম তাকে কুফরী পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
رجل ترك سنن الصلاة ان لم ير السنن حقا فقد كفر، لأنه تركها استخفافا (رد المحتار-2/492، بدائع الصنائع- 1/644

তবে কেউ যদি সুন্নতকে সহীহতো মনে করে, কিন্তু অলসতা করে ছেড়ে দেয়। তাহলে সে গোনাহগার হবে।

★আর সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা বলা হয় যা রাসূল সাঃ সর্বদা করতেন না। মাঝে মাঝে ছেড়ে দিতেন ওজর ছাড়াই।
وَاَلَّذِي ظَهَرَ لِلْعَبْدِ الضَّعِيفِ أَنَّ السُّنَّةَ مَا وَاظَبَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، لَكِنْ إنْ كَانَتْ لَا مَعَ التَّرْكِ فَهِيَ دَلِيلُ السُّنَّةِ الْمُؤَكَّدَةِ، وَإِنْ كَانَتْ مَعَ التَّرْكِ أَحْيَانًا فَهِيَ دَلِيلُ غَيْرِ الْمُؤَكَّدَةِ، (رد المحتار، كتاب الطهارة، اركان الوضوء-1/105)
,
সুন্নত অস্বিকারকারী ফাসিক এবং গোনাহগার হয়। কিন্তু তাচ্ছিল্য করে অস্বিকার করলে কাফির হয়ে যায়।
,
ফরজে কিফায়া : ফরজে কিফায়া ওই ফরজ বিধান যা প্রত্যেক দায়িত্বশীল মুসলিমের ওপর ব্যক্তিগত পর্যায়ে অপরিহার্য হয় না, বরং মুসলিম সমাজের ওপর এমনভাবে আরোপিত হয় যে এক দল মুসলিম তা সঠিকভাবে আমলের মাধ্যমে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়, তবে কেউ তা না করলে সকলেই গোনাহগার হবে। 
,
সুন্নতে জায়েদা : সেসব সুন্নত, যার ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত আমল করলেও ওজরবিহীন মাঝে-মাঝে ছেড়ে দিতেন। তাকে মুস্তাহাব, নফল, মানদুবও বলা হয়। তার বিধান হলো—তার ওপর আমল করা প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ। তবে অপ্রয়োজনে ওজরবিহীন ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা যাবে না।
,
মুবাহ : মুবাহ ওই সব কাজকে বলা হয়, যা শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো প্রকারের আদেশও করা হয়নি, আবার কোনো প্রকারের নিষেধও করা হয়নি। তাকে মুবাহ বা জায়েজ বলা হয়।
,
মুস্তাহাব : মুস্তাহাব এমন আমল যা পালন না করলে কোনো শাস্তি পেতে হবে না। কিন্তু পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম। মুস্তাহাব কাজ করলে সওয়াব ও আল্লাহর দরবারে পুরস্কার আছে। 
,
মাকরুহ ও তার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ 
,
(০২)
সকাল-সন্ধ্যায় তিন কুল (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস)   তিনবার করে পড়ার কথা হাদীসে বর্ণিত হয়ছে। 

عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُبَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ خَرَجْنَا فِي لَيْلَةٍ مَطِيرَةٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي لَنَا – قَالَ – فَأَدْرَكْتُهُ فَقَالَ ” قُلْ ” . فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ ” قُلْ ” . فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا . قَالَ ” قُلْ ” . قُلْتُ مَا أَقُولُ قَالَ ” قُلْ : هوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي وَتُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ ”
আবদুল্লাহ ইবন খুবায়ব তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক বর্ষণমুখর রাতে গভীর অন্ধকারে আমাদের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে আমারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালাশ করতে বের হলাম। এক স্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম।
তখন তিনি বললেনঃ বল।
আমি কিছুই বললাম না।
তিনি আবার বললেনঃ বল।
আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি আমাকে বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলব?
তিনি বললেনঃ “সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ এবং মুআওওয়াযাতায়ন (কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউযু বিরাব্বিন নাস) তিন বার পাঠ করবে; তবে তা সব কিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।”
[তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৫৭৫ [আল মাদানী প্রকাশনী] হাদীসটির সনদ হাসান, তা’লীকুর রাগীব ১/২২৪, আল কালিমুত তাইয়্যিব ১৯/৭]


★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তিন বার তিন বার করে প্রত্যেক সুরা পড়ে তার পর দুই হাতে ফু দিয়ে পুরো শরীরের উপর উক্ত হাত ফিরাইবেন।
এটাই অনেকে বলেছেন।
তবে এক্ষেত্রে শুধু সুরা পড়াই মূল বিষয়। 
হাত দিয়ে মুছে দেওয়ার কথা হাদীসে নেই।
এটি বুযুর্গানে দ্বীনের আমল। 
,
(০৩)
মুখে নামাজের নিয়ত সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 
,
(০৪)
গোসল খানাতে কুরআন পড়া মাকরুহ।
ولا یقرأ القرآن في المخرج والمغتسل والحمام إلا حرفا حرفًا وقیل یکرہ ذلک أیضًا والأصح الأول ”کذا في جواہر الأخلاطي“ (فتاوی عالمگیری ۵/۳۶۵، مطبوعہ: مکتبہ اتحاد دیوبند) 
সারমর্মঃ  বাথরুম,গোসল খানা,হাম্মাম খানা ইত্যাদিতে কুরআন পড়া যাবেনা।  
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত জায়গায় কুরআনের আয়াত পড়া মাকরুহ।
প্রয়োজনে মনে মনে পড়তে পারেন।
বা গোসল খানায় প্রবেশের আগেই পড়বেন।    
,
(০৫)
মাশারী রাশীদ আল আফাসী
বর্তমান বিশ্বে ক্বরীদের নাম নিয়ে আলোচনা হলে যার নামটি প্রথমেই নিতে হয় তিনি হলেন, ক্বারী মাশারী। 

★আবদুর রহমান আস সুদায়সি

★শায়খ আশ শুরাইম ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কারীদের মধ্যে একজন। 

★শায়খ সাদ আল গামিদি

★শায়খ আবু বকর সাতরী

★শায়খ আহমদ আলি মুহাম্মদ আলু সোলায়মান আল আজমি।

★শায়খ আবদুল বাসেত বিন মুহাম্মদ বিন আবদুস সামাদ বিন সালিম। 

★মিশারি আল আফাসি: 

★মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি

★সাদ আল গমিদি: 
★ইদরিস আবকার:
★ইয়াসির আদ দূসরি
★ফারিস আব্বাদ: 
★সউদ আশ-শারীম:
★মুহাম্মদ জিবরীল: 
★শিরজাদ আবদুর রহমান তাহির:
★সলাহ আল বাদির:
★তাওফিক আস-সয়িগ:
★ইয়াসির আল ফিলকাবি: 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...