بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য অর্থের জোগান দিতে হবে। সে জন্য আল্লাহ তাআলাও রিজিক অনুসন্ধানের জন্য আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা : জুমুআহ, আয়াত : ১০)
জীবিকা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ইসলাম কাউকে লাগামহীন স্বাধীনতা প্রদান করেনি। সম্পদ উপার্জন এবং তার ব্যয় করা বিভিন্ন নীতিমালার ছাঁচে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। মানুষ যখন এসব নীতিমালা মেনে জীবনযাপন করবে তখনই মানবজীবনে আসবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা ও সচ্ছলতা। আর যদি তা না মেনে যাচ্ছে-তাই করা হয়, তাহলে নানা বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক ধ্বংস নেমে আসবে।
হালাল উপার্জন : উপার্জনের জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে তা বৈধ পন্থায় উপার্জন করা। সুতরাং অবৈধ পন্থায় কোনো ধরনের সম্পদ কামানোর অনুমতি নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে কোনো ব্যবসায় করা হলে (তা জায়েজ)...।’ (সুরা : আন নিসা , আয়াত : ২৯)
সুতরাং উপার্জনের প্রথম স্তরই হবে বৈধ পন্থা। চাই তা ব্যবসা, চাকরি, কৃষিকাজ বা অন্য যেকোনো পেশায় হোক না কেন।
পরিবারের জন্য খরচ করা : সম্পদ উপার্জনের পর তার নিজের প্রয়োজন ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে ব্যয় করার প্রথম নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খরচা দেবে আর যার জীবিকা সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ যে গরিব) সে, আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচা দেবে। আল্লাহ যাকে যতটুকু দিয়েছেন তার বেশি ভার তার ওপর অর্পণ করেন না। আল্লাহ সংকটের পর স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি করে দেবেন।
’ (সুরা : আত-তালাক, আয়াত : ৭)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুলাহ (সা.) বলেছেন, ‘একটি দিনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দিনার গোলাম আজাদ করার জন্য এবং একটি দিনার মিসকিনদের দান করলে এবং আর একটি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করলে। এর মধ্যে (সওয়াবের দিক থেকে) ওই দিনারটিই উত্তম, যা তুমি পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করলে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২০১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের অবস্থা বলছেন,
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
তোমরা তো পবিত্রতার রাস্তা ধরছ না। দেহ-মনের পবিত্রতা, চিন্তার পবিত্রতা, চোখের জবানের আমলের পবিত্রতা, পবিত্রতা অবলম্বন করছ না। জিকির এবং সালাতের রাস্তা ধরছ না, বরং তোমরা তো পার্থিব জীবনকে, দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে প্রাধান্য দাও। وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ অথচ উত্তম হল আখেরাত। আখেরাতের জীবনই উত্তম। وَأَبْقَى এবং চিরস্থায়ী, যার শুরু আছে শেষ নেই।
এ জীবন তো ক্ষণস্থায়ী। আগেও আমি ছিলাম না। পরেও থাকব না। মাঝখানে কিছু দিন। আল্লাহ বলেন, তোমাদের অবস্থা হল, তোমরা প্রাধান্য দাও দুনিয়ার জীবনকেই। অথচ আখেরাতের জীবনই হল উত্তম এবং সেই জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। তাহলে কোনটাকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার? আখেরাত।
এখানে আমরা খেয়াল করি, আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, তোমরা তো দুনিয়া নিয়ে আছ। দুনিয়া কামাই কর, দুনিয়ার চিন্তায় থাক এ কথা বলেননি। কারণ, এটা নিন্দনীয় নয়। দুনিয়ার চিন্তায় থাকা, দুনিয়া উপার্জন করা, দুনিয়ার কাজকাম করা। এগুলো খারাপ কিছু নয়। এর উপর আল্লাহর কোনো আপত্তি নেই। এর উপর আল্লাহ আপত্তি করবেনও না। বরং আল্লাহ বলেছেন, দুনিয়াতে তোমাদের যখন থাকতে দিয়েছি, মউত পর্যন্ত তোমাকে দুনিয়াতে থাকতে হবে; কবরের জীবনের আগ পর্যন্ত তো তোমাকে এই যমীনেই টিকে থাকতে হবে। এখানে থাকার জন্য যা জরুরত তা তুমি অর্জন করবে। এর তো আল্লাহ কোনো নিন্দা করেন না। এজন্যই তো ‘তোমরা দুনিয়া নিয়ে আছ’ এ কথা বলেননি। বরং বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দাও’। প্রাধান্য দেওয়াটা হল আপত্তির বিষয়। দুনিয়ার পিছে পড়ে আখেরাত ভুলে যাওয়া এটা আপত্তির বিষয়। এটা করো না তোমরা।
দুনিয়ার বৈধ সব কর, আখেরাতকে ভুলে নয়। আখেরাতকে স্মরণ রাখ। আখেরাতের জন্য দুনিয়া থেকে কামাই কর।
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই / বোন!
উপরোল্লিখিত আলোচনা থেকে একথা প্রতীয়মান হয় যে, স্বীয় জরুরত পূরণের জন্য যদি কোন ব্যক্তি হালাল পন্থায় শরঈ নীতিমালা মেনে টাকা পয়সা উপার্জন করে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। বরং এটি জায়েয। তবে যদি কোন ব্যক্তি টাকাকেই জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানায়, দুনিয়ার লোভে পড়ে পরকাল ভুলে যায় তাহলে নিঃসন্দেহে সে পথভ্রষ্ট। টাকা দুনিয়াতে চলার উপকরণ মাত্র। কিন্তু প্রকৃত সুখ ও শান্তি আল্লাহ তায়ালার হুকুম মানার মধ্যে।