بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِندَ
اللَّهِ ۚ فَإِن لَّمْ تَعْلَمُوا آبَاءَهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
وَمَوَالِيكُمْ ۚ وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَـٰكِن
مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।
যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয়
ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন
গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-০৫)
ভালো নাম রাখা পিতা-মাতার সর্বপ্রথম দায়িত্ব। আমরা এভাবেও বলতে
পারি যে, পিতা-মাতার উপর সন্তানের সর্বপ্রথম হক হচ্ছে, তার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
من حق الولد على الوالد أن يحسن اسمه ويحسن
أدبه.
অর্থ : সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা
করা বাবার উপর সন্তানের হক। -মুসনাদে বাযযার (আলবাহরুয যাখখার), হাদীস ৮৫৪০
মানসিকতা ও স্বভাবের উপরও নামের একটা প্রভাব থাকে।
أَخْبَرَنِي عَبْدُ الحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ
بْنِ شَيْبَةَ، قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، فَحَدّثَنِي:
أَنّ جَدّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
فَقَالَ: مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ، قَالَ: بَلْ أَنْتَ سَهْلٌ. قَالَ:
مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمّانِيهِ أَبِي قَالَ ابْنُ المُسَيِّبِ: فَمَا
زَالَتْ فِينَا الحُزُونَةُ بَعْدُ.
আবদুল হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ
ইবনুল মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা
‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার
নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজী বললেন- না, তুমি হচ্ছ
‘সাহল’ (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ,
নরম জমিন।) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম
রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেযাজে
রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৯৩
কারো নাম অসুন্দর হলে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখতেন। হাদীস শরীফে এ ধরনের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে।
মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম- বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)।
তখন যয়নব বিনতে আবি সালামা বললেন-
سُمِّيتُ بَرّةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَا تُزَكّوا أَنْفُسَكُمْ، اللهُ أَعْلَمُ بِأَهْلِ
الْبِرِّ مِنْكُمْ فَقَالُوا: بِمَ نُسَمِّيهَا؟ قَالَ: سَمّوهَا زَيْنَبَ.
আমার নাম ছিল, বাররা। নবীজী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা
কোরো না। (কারণ, বাররা অর্থ, ভালো,
নেককার, পূত-পবিত্র) আল্লাহই জানেন তোমাদের মধ্যে
ভালো ও পূত-পবিত্র কারা। জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আমরা তার কী নাম
রাখতে পারি? তখন নবীজী বললেন, তার নাম যয়নাব
রাখ। (নবীজীর আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম যয়নাব রাখা হল।) -সহীহ মুসলিম,
হাদীস ২১৪২
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. শিশুর নাম রাখার অধিকারী হলেন প্রথমত মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাই-বোন, ফুফু-খালা, চাচা-মামা ও
আত্মীয়-স্বজন। নাম যেন অর্থবহ হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। যে কেউ নামের
প্রস্তাব বা পরামর্শ দিতে পারে। অভিজ্ঞ আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তি প্রস্তাবিত নামের অর্থ, গুণাগুণ ও তাৎপর্য
অনুসারে এর প্রাধান্য ব্যাখ্যা করবেন। সন্তানের অভিভাবকরা নাম গ্রহণে সিদ্ধান্ত নেবেন।
পরামর্শ করে যেকোন কাজ করার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। সুতরাং পিতার উচিৎ
তিনি সন্তানের মায়ের সাথে পরামর্শ করে তারপর নাম নির্ধারণ করবেন। তবে যদি কখনো স্বামী
স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ তৈরী হয়ে যায়, তাহলে তখন সন্তানের পিতারই
একমাত্র অধিকার থাকবে নাম নির্ধারণ করার।
২. একত্রে একাধিক শব্দ বিশিষ্ট নাম রাখাও জায়েয আছে আবার একটি নাম রাখাও জায়েয।
তবে ইসলামে নামের গুরুত্ব সম্পর্কে
নিন্মোক্ত বিষয়গুলো প্রণিধানযোগ্য। যেমন-
১. আল্লাহর নির্দেশ : নাম রাখার গুরুত্ব সম্পর্কেও
ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, `হে জাকারিয়া, আমি (আল্লাহ)
তোমাকে একপুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। এই নামে এর আগে আমি কারও নামকরণ
করিনি। [সূরা মারিয়াম,
আয়াত : ৭ (দ্বিতীয় পর্ব)]
২. সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা : সুন্দর ও অর্থবহ নাম
রাখার ব্যাপারে হজরত রাসূল (সা.) গুরুত্বারোপ করেছেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সুন্দর
ও অর্থবোধক নাম রাখা মাতা-পিতা ও অভিভাবকের ওপর অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহ তা'য়ালার গুণবাচক
নামের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং তার প্রিয় বান্দাদের নামে নামকরণ করা উত্তম।
৩. ইসলামের বিধান : নাম রাখা ইসলামের অন্যতম বিধান। তবে কাফের
মুশরিক এবং কুখ্যাত পাপীদের নামানুসারে নাম রাখা হারাম। যেসব সাহাবীর কুৎসিত ও আপত্তিকর
নাম ছিল, হজরত
রাসূলে কারীম (সা.) তা পরিবর্তন করে পুনরায় সুন্দর ও যথার্থ অর্থবোধক নাম রেখে দিয়েছিলেন।
৪. নবীদের নামে নাম রাখার প্রতি উৎসাহ : হজরত রাসূলে কারীম
(সা.)-এর উপাধি ও উপনাম সর্বব্যাপারে পরিব্যাপ্ত ছিল। কেননা সব ধরনের নামই ব্যক্তি
বা বস্তুর ওপরে এমনকি চরিত্রের ওপরও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। শব্দের প্রভাব রয়েছে
বলেই গালিগালাজ বা কটুশব্দ অপরকে উত্তেজিত করে থাকে।
৫. পরিচয়ের মাধ্যম : নাম মানুষের পরিচয়ের মাধ্যম। কিন্তু অত্যন্ত
দুঃখের বিষয় হল, বর্তমান
মুসলিম সমাজ ইসলামের দৃষ্টিতে নাম রাখার এ মহান গুরুত্ব পরিহার করে দিন দিন উদাসীনতার
দিকে ছুটছে।
ইহুদি, খিস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধদের নামে মুসলমানগণ নিজেদের সন্তান-সন্ততির নামকরণ
করছে। নাম শুনে বুঝা যায় না, মানুষটি মুসলিম কি না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মূল নাম আরবি
ও অত্যন্ত সুন্দর হলেও পিতা-মাতা তথা অভিভাবকগণ ডাক নাম এমন শব্দের রেখেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে
অর্থহীন এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ প্রমাণ করছে। যেমন- জর্জ, মাইকেল, জ্যাকার, ডলি, মলি, রতন, বিদ্যুৎ, বিউটি, বল্টু, মন্টু, নান্টু, পিন্টুব, রঞ্জন, রবি, শশী ইত্যাদি।
নাম হল একজন মানুষের
পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। সে জন্য সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতা কিংবা
অভিভাবকগণের ওপর গুরুতর দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
৩. আয়ান (أيّان) শব্দটি একটি আরবি
শব্দ। এর অর্থ বয়স,
সময়, কাল, যুগ ইত্যাদি। আফিফ নামের
অর্থ হলো শুদ্ধ, সতী, বিনয়ী, সদাচারী, সৎ, ধার্মিক, ন্যায়পরায়ণ, নম্র, ভদ্র, খোদাভীরু এবং
আল্লাহর ভক্ত ।
আমানুল্লাহ বা আমানাতুল্লাহ নামের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত
নিরাপত্তা, আল্লাহ
প্রদত্ত শান্তি। বি:দ্র: আমানতুল্লাহ বলে কোন শব্দ আরবীতে নেই। হয়তো আমানুল্লাহ
হবে অথবা আমানাতুল্লাহ। হবে।