ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
ইসলামের মৌলিক পাঁচ ভিত্তির মধ্যে অন্যতম ‘জাকাত’। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-‘এবং তোমরা আল্লাহতায়লার সন্তুষ্টির জন্য জাকাত আদায় করো। অতঃপর তিনি তা দ্বীগুণ করে দেবেন। (সূরা রুম-৩৯)। জাকাত আদায়ের ব্যাপারে বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক জাকাত দেওয়া ফরজ করেছেন যেন তোমাদের অবশিষ্ট সম্পদকে নির্দোষ বা নির্বিঘ্ন করে দিতে পারেন’। (আবু দাউদ শরিফ)। জাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। জাকাত যেহেতু অর্থ সম্পদকে পুঁজিবাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিষ্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা ও কৃপণতার মলিনতা থেকে পরিচ্ছন্নতা রাখে। নিজের উপার্জিত সম্পদে সমাজের অবহেলিত শ্রেণির দাবি-দাওয়া পূরণে উৎসাহ জোগায় এ জন্য ইসলামের এ তৃতীয় স্তম্ভের নামকরণ হয় জাকাত। শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ মুসলমান গরিবকে আল্লাহর ওয়াস্তে পুরোপুরি মালিক বানিয়ে দেওয়াকে জাকাত বলে।
শরিয়তের পরিভাষায় জাকাত হচ্ছে একটি আর্থিক ইবাদত। নিজের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব মিসকিন ও অভাবী লোকদের মধ্যে বণ্টন করাকে জাকাত বলা হয়। এটি নামাজ রোজার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় জাকাত ফরজ হয়। মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮২ জায়গায় এ জাকাতের কথা বলেছেন। জাকাত শব্দ দ্বারা ৩০ বার, আল ইনফাক শব্দ দ্বারা ৪৩ বার, আস সাদাকাহ শব্দ দ্বারা ৯ বার জাকাতের কথা বোঝানো হয়েছে।
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. পবিত্র কোরআনে সুরা তাওবার ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করে তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে দিন। ’ সম্পদশালীরা যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মালের পরিশুদ্ধি লাভের পাশাপাশি তাদের মনেরও পরিশুদ্ধি অর্জন করে। গরিব-দুঃখী ও অভাবী মানুষের মধ্যে যাকাত বণ্টনের মাধ্যমে তারা স্বার্থপরতা থেকে যেমন পরিশুদ্ধ হয়, তেমনি তাদের মধ্যে জন্মলাভ করে সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মনোভাব। যাকাত যেহেতু অর্থসম্পদকে পুঁজিবাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিস্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা ও কৃপনতার মলিনতা থেকে পরিচ্ছন্নতা রাখে। নিজের উপার্জিত সম্পদে সমাজের অবহেলিত শ্রেণীর দাবী-দাওয়া পূরণে উৎসাহ যোগায় এজন্য ইসলামের এই তৃতীয় স্তম্ভে নামকরণ হয় যাকাত।
২. পৃথিবীতে চলাফেরার জন্য সম্পদ দরকার। এ জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন বৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদ ব্যবহার করতে। কখনোই অবৈধ পথে সম্পদ উপার্জন করা উচিত নয়। অবৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদ ভোগ করাও বৈধ নয়।
যদি অজ্ঞতাবশত কেউ হালাল সম্পদের সঙ্গে হারাম সম্পদের মালিক হয়ে যায় তাহলে তার উপার্জিত হারাম সম্পদ হারাম মাল হিসেবেই গন্য হব। হারাম মাল অল্প হোক বা বেশি তা ভোগ করা যাবে না। কেউ যদি না জেনে এমন কাজ করে থাকে তাহলে পূর্ণ হালাল উপায়ে উপকৃত হওয়ার সুযোগ বের করতে হবে। যে পরিমাণ হারাম মাল ব্যয় করা হয়েছে তার মালিক জানা থাকলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর মালিক জানা না থাকলে তার পক্ষ হতে ওই পরিমাণ অর্থ সদকা করে দিতে হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৪২; আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৯২)
যাকাত আদায়ের দ্বারা হারাম মাল হালাল হয়ে যায়না। হারাম মাল যদি তার মালিক থাকে তাহলে মালিকের নিকট তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি মালিক না থাকে তাহলে সমুদয় হারাম মাল সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে।
৩. সুদের টাকার ব্যপারে আপনি কি করবেন?
https://www.ifatwa.info/1900 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
হারাম টাকার বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া। নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে সদকা করে দেয়া।
من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء
যদি কারো নিকট কোনো হারাম মাল থাকে,তাহলে সে ঐ মালকে তার মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেবে।যদি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না হয়,তাহলে গরীবদেরকে সদকাহ করে দেবে। (মা'রিফুস-সুনান১/৩৪)