আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
116 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম, আমার একজন ভাই এর পক্ষ থেকে প্রশ্ন করছি।  ওনার মা ৫ বছর আগে ওনার মায়ের নামের জমি বিক্রি করে ওনার জন্য ২৬ লক্ষ টাকা ব্যবসার জন্য দিয়েছিলেন যা ওনার ভাই জানতেন কিন্তু বোনেরা জানতেন না । তখন ওনার পিতা জীবিত ছিলেন , ঊনি অসুস্থ ছিলেন তবে ওনার সম্মতি ছিলো । ওনার বড় ভাই আর মা একসাথে রেজিস্ট্রি করার সময় উপস্থিত ছিলেন। ওই জমি ওনার পিতা ওনার মায়ের নামে কিনেছিলেন। কিছুদিন আগে ওনার মায়ের ইন্তেকাল হয়েছে। এখন ওনার ভাই-বোনেরা সম্পত্তি ভাগ করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে ওনার মা যে জমি বিক্রি করে ওনাকে অর্থ দিয়েছিলেন এটা কি এখন হিসাব করতে হবে সম্পত্তি ভাগাভাগির সময় ? বা ওনার ভাই-বোনের হক্ক কি ওনার কাছে রয়ে গেছে?

1 Answer

0 votes
by (57,120 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

শরীয়তের বিধান হলো কাহারো সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যাতিত ব্যবহার করা জায়েজ হবেনা।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا ﴿۲۹

হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমরা পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ এবং নিজেদেরকে হত্যা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সুরা নিসা ২৯)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عَنْ أَبِىْ حُرَّةَ الرَّقَّاشِىِّ عَنْ عَمِّه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «أَلَا لَا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ وَالدَّارَقُطْنِىِّ فِى الْمُجْتَبٰى

আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো মাল তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়। (আহমাদ ২০৬৯৫, শু‘আবুল ঈমান ৫১০৫, ইরওয়া ১৪৫৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৬২ )

হযরত আবু উমামা রাযি থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ

ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺪْ ﺃَﻋْﻄَﻰ ﻛُﻞَّ ﺫِﻱ ﺣَﻖٍّ ﺣَﻘَّﻪُ ، ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺻِﻴَّﺔَ ﻟِﻮَﺍﺭِﺙٍ

নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক হক্বদারকে তার প্রাপ্য হক্ব (নির্ধারণ)করে দিয়েছেন।সুতরাং ওয়ারিছদের জন্য আর কোনো ওসিয়্যাত নেই।

অর্থাৎ-মূত্যুর পরে কাউকে কিছু দানের সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ওসিয়ত হয়ে যায়,আর নিজ ওয়ারিছদের মধ্য থেকে কারো জন্য ওসিয়ত করা জায়েয নয়।তবে ওয়ারিছ ব্যতীত অন্য কারো জন্য এক তৃতীয়াংশ মালে ওসিয়ত করা জায়েয আছে। (সুনানে আবু-দাউদ-২৮৭০সুনানে তিরমিযি-২১২০সুনানে নাসাঈ-৪৬৪১ইবনে মাজাহ-২৭১৩)

হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযি থেকে বর্ণিত,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ، قَطَعَ اللَّه ُمِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ যে ব্যক্তি তার ওয়ারিছদেরকে মিরাছ প্রদান থেকে পলায়ন করবে(তথা-ওয়ারিছদেরকে মিরাছ থেকে বঞ্চিত করবে)আল্লাহ তা'আলা ক্বিয়ামতের দিন তাকে জান্নাতের মিরাছ থেকে বঞ্চিত করবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২৭০৩)

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻋَﻦِ اﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ - ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ - ﻋَﻦِ اﻟﻨَّﺒِﻲِّ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻗَﺎﻝَ: «ﻻَ ﻭَﺻِﻴَّﺔَ ﻟِﻮَاﺭِﺙٍ، ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﻳَﺸَﺎءَ اﻟْﻮَﺭَﺛَﺔُ»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ ওয়ারিছদের জন্য কোনো ওসিয়ত নেই,তবে যদি অন্যান্য সমস্ত ওয়ারিছরা রাজি থাকে তাহলে জায়েয আছে। (মিশকাত-৩০৭৪)

মানুষ নিজের সম্পদের বণ্টনে শরিয়তের বিপরীত আরেকটি নীতি গ্রহণ করে। সেটি হচ্ছে, কোনো সন্তানকে বেশি সম্পদ দিয়ে অন্য সন্তানকে কম দেওয়া। হাদিসের বর্ণনায় এটাকেও নিষেধ করা হয়েছে। হজরত নোমান ইবনে বাশির (রা.)-এর এ বিষয়ক হাদিসটি বিখ্যাত। ইরশাদ হয়েছে, ‘নোমান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণনা করেন, তার মা নিজ সন্তানের জন্য তার বাবার কাছে কিছু সম্পদের আবেদন করলেন। এ নিয়ে এক বছর পর্যন্ত তার বাবা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। তারপর দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হলেন। তখন তার মা বললেন, আমার সন্তানকে দেওয়া সম্পদের ওপর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে সাক্ষী রাখতে চাই। তখন আমার বাবা আমার হাত ধরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে গেলেন, আমি তখন ছোট্ট বালক। বাবা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই ছেলের মা তাকে দেওয়া সম্পদের জন্য আপনাকে সাক্ষী রাখতে চাচ্ছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, হে বাশির! এ ছাড়াও কি তোমার আরও সন্তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবী কারিম (সা.) বললেন, তাদের সবাইকে কি তুমি এ পরিমাণ সম্পদ দান করেছো? তিনি বললেন, না। রাসুলে কারিম (সা.) বললেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে আমাকে সাক্ষী রেখো না। আমি এমন জুলুমের সাক্ষী হতে চাই না।’ (সহিহ্ মুসলিম : ১২৪৩)

এই হাদিস থেকেই ইসলামি স্কলাররা গবেষণা করে বলেছেন, সন্তানদের মধ্যে দান করতে চাইলে সমতা বজায় রাখতে হবে। অভিজ্ঞতার আলোয় দেখেছি, মুফতিদের কাছে এ বিষয়ক অসংখ্য প্রশ্ন আসে। পিতা-মাতা জীবদ্দশায় কোনো এক সন্তানকে বেশি সম্পদ দিয়ে গেছেন। এসব পরিস্থিতিতে পিতা-মাতার মৃত্যুর পর অন্য সন্তানরা প্রশ্ন নিয়ে আসে যে, পিতা-মাতা এটা (এক সন্তানকে বেশি দেওয়া) ঠিক করেছেন কি না? এখন তাদের গোনাহ হবে কি না? অন্য সন্তানদের মনের মধ্যে এক ধরনের অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করা যায়।

আবার এমনও হয়েছে, যে সন্তানকে বেশি দান করা হয়েছে, সে এসে জানতে চেয়েছে, অতিরিক্তটুকু অন্য ভাই-বোনদের মধ্যে বণ্টন করে দিলে কোনো সমস্যা নেই তো! আসলে বিনা ওজরে এভাবে কোনো সন্তানকে কম দেওয়া, কোনো সন্তানকে বেশি দেওয়া শরিয়তসম্মত নয়। অথচ আবেগ এবং অজ্ঞতার কারণে কোনো কোনো পিতা-মাতা এই ভুল কাজটি করে থাকেন।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

  প্রশ্নল্লিখিত ছুরতে মা যদি মৃত্যুর পূর্বে বিক্রিত সম্পদের সমুদয় টাকা ছেলেকে মালিক বানিয়ে দেয়, যাতে কারো কোন অংশ ও কর্তৃত্ব থাকবে না তাহলে ঐ সম্পদের একক মালিক ঐ ছেলেই। সেক্ষেত্রে মায়ের মৃত্যুর পর অন্য কেউ অংশ পাবে না। কিন্তু অন্নান্য ওয়ারিছকে মাহরুম করার উদ্দেশ্যে মা যদি ১জন ছেলেকে সমুদয় সম্পদ দেয় তিনি গুনাহগার হবেন এবং পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবেন। 

  কিন্তু যদি শুধু ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে ছেলেকে উক্ত সম্পদ দেয় এবং ঐ সম্পদের তাকে মালিক বানিয়ে না দেয় তাহলে সেই সম্পদের মালিক মা। অতএব মায়ের মৃত্যুর পর অবশ্যই অন্যান্ন ভাই-বোনসহ সকল ওয়ারিছ উক্ত সম্পদে অংশ পাবে। এমতাবস্থায় ঐ ছেলের জন্য আবশ্যক যে, মায়ের সম্পদের অংশ হকদারকে সঠিক ভাবে দিয়ে দেওয়া। কোন ভাবেই যেন তার দ্বারা জুলুম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...