হযরত রুমাইছা বিনতে মিলহান আনসারিয়া রা.
তার উপনাম হল উম্মে সুলাইম। এ নামেই তিনি অধিক প্রসিদ্ধ।
তিনি অনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারিনী ছিলেন। ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী সাহাবীদের মধ্যে তিনিও একজন। প্রথমে মালেক ইবনে নযরের সাথে তার বিবাহ হয়েছিল। সেই ঘরেই হযরত আনাস রা. জন্মগ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে ক্রুদ্ধ হয়ে স্বামী মালেক ইবনে নযর দেশত্যাগ করে সিরিয়ায় চলে যায় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তিনি হযরত আবু তালহা রা.-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
হযরত উম্মে সুলাইমের দ্বিতীয় বিবাহ (হযরত আবু তালহার সাথে) সম্পর্কে হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হযরত আবু তালহা উম্মে সুলাইমকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। প্রতি উত্তরে উম্মে সুলাইম রা. বলেন, আপনি কি জানেন, আপনি যে উপাস্যের পূজা করেন তা জমি থেকে উৎপন্ন? (মাটি, গাছ ও খড়কুটা দিয়ে তৈরি) তিনি বললেন, হ্যাঁ। উম্মে সুলাইম রা. বলেন, গাছ-গাছালির পূজা করতে আপনার কি লজ্জা করে না? আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আপনি যদি আমার ধর্মের অনুসরণ করেন তবেই আমি আপনাকে বিবাহ করব। আপনার ইসলাম গ্রহণ করাটাই আমার মোহর। আমি এছাড়া আর কোনো মোহর চাই না। তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমি ভেবে দেখি। তারপর তিনি ফিরে এসে বললেন, আমিও আপনার ধর্মের অনুসারী। কালিমা পড়ে তিনি মুসলমান হয়ে গেলেন এবং উম্মে সুলাইমকে বিবাহ করেন।
(সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৩৩৪০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১০৪১৭)
অন্যত্রে এসেছেঃ-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ النَّبِـيُّ ﷺ رَأَيْتُنِي دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا أَنَا بِالرُّمَيْصَاءِ امْرَأَةِ أَبِـيْ طَلْحَةَ وَسَمِعْتُ خَشَفَةً فَقُلْتُ مَنْ هٰذَا؟ فَقَالَ هٰذَا بِلَالٌ وَرَأَيْتُ قَصْرًا بِفِنَائِهِ جَارِيَةٌ فَقُلْتُ لِمَنْ هٰذَا؟ فَقَالَ لِعُمَرَ فَأَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَهُ فَأَنْظُرَ إِلَيْهِ فَذَكَرْتُ غَيْرَتَكَ فَقَالَ عُمَرُ: بِأَبِي وَأُمِّي يَا رَسُوْلَ اللهِ أَعَلَيْكَ أَغَارُ؟
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। দেখলাম সেখানে আবূ তালহার স্ত্রী রুমাইসা রয়েছে। অতঃপর আমি পদধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি বললাম, ’এটা কে?’ (কেউ) বলল, ’এটা বিলাল।’ আর একটি প্রাসাদ দেখলাম, তার আঙ্গিনায় রয়েছে একটি কিশোরী। আমি বললাম, ’এটা কার?’ বলল, ’উমারের।’ আমি ইচ্ছা হল তাতে প্রবেশ করে দেখি। কিন্তু তোমার ঈর্ষার কথা মনে করলাম।
এ কথা শুনে উমার (রাঃ) বললেন, ’আমার বাপণ্ডমা আপনার জন্য কুরবান হোক হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার প্রতিও ঈর্ষা করব কি?’
(বুখারী ৩৬৭৯, মুসলিম ৬৪৭৪)
আবু তালহা এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলেন। এদিকে বাড়িতে তাঁর ছেলে মারা গেল। উম্মে সুলাইম সকলকে নিষেধ করলেন, যাতে আবু তালহার নিকট খবর না যায়। তিনি ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে ঢেকে রেখে দিলেন। অতঃপর স্বামী আবু তালহা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে বাড়ি ফিরলে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার বেটা কেমন আছে? রুমাইসা বললেন, ’যখন থেকে ও পীড়িত তখন থেকে যে কষ্ট পাচ্ছিল তার চেয়ে এখন খুব শান্ত। আর আশা করি সে আরাম লাভ করেছে!
অতঃপর পতিপ্রাণা স্ত্রী স্বামী এবং তাঁর সাথে আগত আরো অন্যান্য মেহমানদের জন্য রাত্রের খাবার পেশ করলেন। সকলে খেয়ে উঠে গেল। আবু তালহা উঠে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। (স্ত্রীর কথায় ভাবলেন, ছেলে আরাম পেয়ে ঘুমাচ্ছে।) ওদিকে পুতঃপবিত্রতা রুমাইসা সব কাজ সেরে উত্তমরূমে সাজ-সজ্জা করলেন, সুগন্ধি মাখলেন। অতঃপর স্বামীর বিছানায় এলেন। স্বামী স্ত্রীর নিকট থেকে সৌন্দর্য, সৌরভ এবং নির্জনতা পেলে উভয়ের মধ্যে যা ঘটে তা তাঁদের মাঝে (মিলন) ঘটল।
তারপর রাত্রির শেষ দিকে রুমাইসা স্বামীকে বললেন, হে আবু তালহা! যদি কেউ কাউকে কোন জিনিস ধার স্বরূপ ব্যবহার করতে দেয়, অতঃপর সেই জিনিসের মালিক যদি তা ফেরৎ নেয় তবে ব্যবহারকারীর কি বাধা দেওয়া বা কিছু বলার থাকতে পারে? আবু তালহা বললেন, অবশ্যই না। স্ত্রী বললেন, ’তাহলে শুনুন, আল্লাহ আযযা অজাল্ল আপনাকে যে ছেলে ধার দিয়েছিলেন তা ফেরৎ নিয়েছেন। অতএব আপনি ধৈর্য ধরে নেকীর আশা করুন!
এ কথায় স্বামী রেগে উঠলেন; বললেন, এতক্ষণ পর্যন্ত কিছু না বলে চুপ থেকে, এত কিছু হওয়ার পর তুমি আমাকে আমার ছেলে মরার খবর দিচ্ছ! অতঃপর তিনি ’ইন্না লিল্লাহি—’ পড়লেন ও আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ঘটনা খুলে বললে তিনি তাঁকে বললেন, তোমাদের উভয়ের ঐ গত রাত্রে আল্লাহ বরকত দান করুন। সুতরাং ঐ রাত্রের রুমাইসা তাঁর গর্ভে আবার একটি সন্তান ধারণ করে।
(বাইহাকী ৪/৬৫-৬৬, সহীহ ইবনে হিব্বান ৭২৫, মুসমাদে আহমাদ ৩/১০৫-১০৬)
হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইম ও কিছু আনসারী মহিলাকে যুদ্ধে নিয়ে যেতেন যুদ্ধাহতদের সেবা-শুশ্রূষা ও পানি পান করাতে।
হুনাইনের যুদ্ধে তিনি খঞ্জর হাতে নিয়ে রণাঙ্গনের দিকে এগিয়ে গেলেন। আবু তালহা রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে উম্মে সুলাইম, তার হাতে খঞ্জর! উম্মে সুলাইম বললেন, কোনো মুশরিক আমার নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করলে আমি এটা দিয়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলব।
হাদীস, ইতিহাস ও জীবনীগ্রন্থগুলোতে তার বীরত্ব, সাহসিকতা, ধার্মিকতা, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার অনেক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি মুসিবতের সময় ধৈর্য্যশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইতিহাসের পাতায় তার নজির খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন।
★রুফাইদা রাযিআল্লাহু আনহা :
তিনি ছিলেন এক আনসারী সাহাবিয়া। খাযরাজের শাখাগোত্র আসলামের এক উজ্জ্বল প্রদীপ। এক মহীয়সী নারী।
তিনি ছিলেন চিকিৎসায় পারদর্শী। আহতদের চিকিৎসা, বিনামূল্যে অসুস্থদের সেবা- এই ছিল তার জীবনের ব্যস্ততা। দুর্বল ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতেন। যুদ্ধের ময়দানে আহতদের সেবা, তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো তার বিশেষ কাজের অন্যতম। তরবারির ঝনঝন শব্দ আর ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
ইবনে ইসহাক রাহ. বলেন, তিনি আহতদের সেবা করতেন। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় অসহায় মুসলমানদের সেবা করতেন। (দ্র. তারীখুত তবারী ২/৫৮৬; আলইস্তিআব ৩৩৪০; উসদুল গাবাহ ৬৯২৫; আলইসাবা ১১১৮১)
তার মানবসেবা ছিল কোনোরূপ বিনিময় ছাড়া। পার্থিব কোনো স্বার্থ ছাড়া। পরম লক্ষ্য ছিল আপন রবের সন্তুষ্টি, কেবল তাঁরই রেযামন্দি।
ইবনে সা‘দ রাহ. বলেন, তিনি হিজরতের পরে বাইআত হয়েছেন। মসজিদে নববীর পাশেই তার তাঁবু ছিল। সেখানে তিনি অসুস্থ এবং আহতদের সেবা করতেন। সা‘দ বিন মুআয রা.-এর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার সেবা করেছেন। তিনি খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। (তাহযীবুত তাহযীব ২৭৯১; তবাকাতে ইবনে সা‘দ)
ওয়াকিদী রাহ. বলেন, তিনি আহতদের সেবা করতেন। অসুস্থদের চিকিৎসা করতেন। অসহায় এবং অনাথের পাশে দাঁঁড়াতেন। মসজিদের পাশেই তার খীমা ছিল। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ বিন মুয়াযকে তার খীমাতেই রেখেছিলেন। (কিতাবুল মাগাযী ২/৫১০)
মাহমুদ বিন লাবীদ রা. বলেন, খন্দকের যুদ্ধে যখন সা‘দ বিন মুয়ায রা. আহত হলেন তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে রুফাইদার খীমাতে নিয়ে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, রুফাইদা রা. হলেন এমন এক নারী, যিনি আহতদের সেবা করতেন। এরপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল-সন্ধ্যা তার খবর নিতেন। (আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ১১২৯)
কিন্তু প্রায়ই যেহেতু এমনটি হচ্ছে,তাই এক্ষেত্রে নামাজ কাজা করার দরুন আপনার গুনাহ হবে।