আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
305 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (44 points)

১. আল্লাহর আইনকে ছেড়ে দিয়ে মানুষের বানানো আইনকে অধিক কল্যাণকর মনে করা কি কুফরি?

২. আল্লাহর আইনকে ছেড়ে দিয়ে মানুষের বানানো আইনে দেশ চালানো কি কুফরি?

৩. যদি কোনো ব্যক্তির মনে কুফরি না থাকে কিন্তু যদি সে প্রকাশ্যে কোনো কুফরি কাজ করে বা কুফরি কথা বলে তাহলে কি তার বাহ্যিক অবস্থা দেখে তাকে কাফের বলা যাবে? যেমন, কেউ মুখে বলল যে, "পর্দা বিষয়টি আলেমদের বাড়াবাড়ি, নামাজ একটি অযথা কাজ"।

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
বিচার ও বিচারক প্রসঙ্গ।

বিচারকের বিচারকার্য সম্পাদনা  ফেকহী দৃষ্টিকোণে সর্বমোট পাঁচ প্রকারঃ-
 যেমনঃফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত রয়েছে........
وَالْقَضَاءُ عَلَى خَمْسَةِ أَوْجُهٍ.
وَاجِبٍ، وَهُوَ أَنْ يَتَعَيَّنَ لَهُ وَلَا يُوجَدَ مَنْ يَصْلُحُ غَيْرُهُ.
(১)ওয়াজিব:
বিজ্ঞ বিচারকের জন্য  বিচারকার্য সম্পাদন  করা ঐ সময় ওয়াজিব হয়ে যায়,যখন বিচারক হিসেবে সেই এখানে একমাত্র যোগ্য থাকে এছাড়া আর অন্য কেউ নাথাকে।
وَمُسْتَحَبٍّ، وَهُوَ أَنْ يُوجَدَ مَنْ يَصْلُحُ لَكِنَّهُ هُوَ أَصْلَحُ وَأَقْوَمُ بِهِ.
(২)মুস্তাহাবঃ
 এবং ঐ সময়  মুস্তাহাব হবে যখন যোগ্য অন্যরাও থাকবে কিন্তু সে অন্যান্যদের থেকে যোগ্যতায় অগ্রগামী থাকবে।। 
وَمُخَيَّرٍ فِيهِ، وَهُوَ أَنْ يَسْتَوِيَ هُوَ وَغَيْرُهُ فِي الصَّلَاحِيَّةِ، وَالْقِيَامِ بِهِ، وَهُوَ مُخَيَّرٌ إنْ شَاءَ قَبِلَهُ، وَإِنْ شَاءَ لَا.
(৩দ)মুবাহ(ইচ্ছাধীনঃ
ঐ সময় মুবাহ হবে যখন সে এবং অন্যান্যরা যোগ্যতা বিবচনায় প্রায় সমান সমান থাকবে,তখন বিচারকার্য সম্পাদন করা তার ইচ্ছাস্বাধীন হবে, অর্থাৎ সে বিচার করতেও পারবে আবার না করতেও পারবে।
وَمَكْرُوهٍ، وَهُوَ أَنْ يَكُونَ صَالِحًا لِلْقَضَاءِ لَكِنَّ غَيْرَهُ أَصْلَحُ.
(৪)মাকরুহঃ
ঐ সময় মাকরুহ হবে যখন উক্ত ব্যক্তি  যোগ্যতাসম্পন্ন হবে কিন্তু তার চেয়ে বেশী যোগ্যতাসম্পন্নন  সেখানে বর্তমান থাকবে।
وَحَرَامٍ، وَهُوَ أَنْ يَعْلَمَ مِنْ نَفْسِهِ الْعَجْزَ عَنْهُ وَعَدَمَ الْإِنْصَافِ فِيهِ لِمَا يَعْلَمُ مِنْ بَاطِنِهِ مِنْ اتِّبَاعِ الْهَوَى مَا لَا يَعْرِفُونَهُ فَيَحْرُمُ عَلَيْهِ كَذَا فِي خِزَانَةِ الْمُفْتِين
(৫)হারামঃ
ঐ সময় হারাম হবে যখন উক্ত বিচারক নিজের অযোগ্যতা ও অপারগতা সম্পর্কে অবগত,সাথে সাথে নিজের পক্ষ্য থেকে অন্যায়-অবিচারের প্রবল  সম্ভাবনা তার মধ্যে বিদ্যমান,কেননা সে যে প্রবৃত্তির গোলাম একথা তার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে।
এমতাবস্তায় বিচারকার্য পরিচালনা করা হারাম।কেননা বিচার বিভাগ প্রতিষ্টার মূল কারন-ই হল পৃথিবীতে ন্যায়কে বাস্তবায়িত করা,যুলুম-নির্যাতনকে বিদায় দেয়া। 
মুফতী শফী রাহ. বলেনঃ-
হুকুমত বা সরকার ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ও কারণ হল নিম্নরূপ, 

(ক)সমস্ত জনগণের মধ্যে ন্যায়বোধ ও সাম্যবোধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে দেয়া ও তাদের মধ্যে  এগুলো অর্জনের প্রতি আগ্রহেরর জন্ম দেয়া।
(খ)রাষ্ট্রকে ভিতর-বাহির সমস্ত চক্রান্ত থেকে হিফাজত করা।
(গ)মুসলমানের জন্য নামায প্রতিষ্টা ও যাকাত উসুলের ব্যবস্থা করা।
(ঘ)জনগণের অন্তরে ভালো ও সুন্দর পথ ও মতের আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং খারাপ ও অনৈতিকতা থেকে বধাপ্রদানের সবরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
যেমনঃ- আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺭُﺳُﻠَﻨَﺎ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕِ ﻭَﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻌَﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﻤِﻴﺰَﺍﻥَ ﻟِﻴَﻘُﻮﻡَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺎﻟْﻘِﺴْﻂِ ٌ
আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে।(সূরা হাদীদ-২৫)

ﻭَﻗَﺘَﻞَ ﺩَﺍﻭُﺩُ ﺟَﺎﻟُﻮﺕَ ﻭَﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔ
এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা।(সূরা বাক্বারা-২৫১)
তাফসীরে রুহুল মা'আনিতে বর্ণিত আছে
في هذا تنبيه علي فضيلة الملك و انه لولا ه ما استتب من العالم ،ولهذا قيل الدين والملك توأمان -ج:2-ص:174
তরজমাঃ-এই আয়াতে রাজত্ব ও হুকুমতের বিশেষত্ব বর্ণিত রয়েছে,যদি পৃথিবীতে রাজত্ব ও হুকুমত পদ্ধতি ধারাবাহিক  না থাকত তবে পৃথিবীর শান্তি-শৃংখলা অনেক আগেই বিনষ্ট হয়ে যেত,এ জন্য বলা হয় যে দ্বীন এবং ধর্ম দুই জোড়াবাচ্ছা সমতুল্য ।
যেহেতু হুকুমত বা র্রাষ্ট ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে যুলুম-নির্যাতন ও ফিতনা-ফাসাদকে বন্ধ করা,এজন্য আল্লাহর তা'আলার আদত বা  বিধিবদ্ধ নিয়ম হচ্ছে যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে পৃথিবীতে হুকুমত বা র্রাষ্টব্যবস্থা কুফুরীর সাথে একত্রিত হয়ে ঠিকে আছে কিন্তু কখনো যুলুম-নির্যাতনের সাথে র্রাষ্টব্যবস্থা ঠিকেনি।
এজন্য ফিরিস্তাগণ বলেছিল পৃথিবীতে মানুষগুলো খুন-খারাবী করবে,একথা বলেননি যে তারা কুফুরী করবে।কেননা র্রাষ্টব্যবস্থা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল খুন-খারাবী থেকে মানুষজনকে হেফাজত করা।(জাওয়াহিরুল ফিকহ৫/১১)

বিচারকার্য কেমন হওয়া চাই??
ইসলামী র্রাষ্টে না কোনো কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী পাশ করা যাবে না,না বাকি রাখা যাবে, না বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া যাবে, বরং সমস্ত মুসলমানের জন্য ফরয উক্ত আইনকে বাতিল করা ও বাতিল করার জন্য আন্দোলন করা।
এ সম্পর্কে দু-একটি আয়াত লক্ষণীয়
যেমনঃ-
ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥ
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪৪)

বিচার ও বিচারক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/623

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)আল্লাহর আইনকে ছেড়ে দিয়ে মানুষের বানানো আইনকে অধিক কল্যাণকর মনে করা অবশ্যই কুফরি।

(২)সামর্থ্য থাকাবস্থায় আল্লাহর আইনকে ছেড়ে দিয়ে মানুষের বানানো আইন দিয়ে দেশ চালানো কুফরি।তবে যদি কেউ কোনো অমুসলিম দেশ বা বাংলাদেশের মত দারুল আ'মান দেশের বিচারক হয়,তাহলে তার জন্য প্রচলিত আইনে বিচার করার রুখসত থাকবে,তবে মনে প্রাণে কুরআনের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে।

(৩)ইসলামের ফরয বিধান সম্পর্কে এরকম কুটুক্তি করলে অবশ্যই ঈমান চলে যাবে।যেমন নামায,রোযা,হজ্ব ইত্যাদি সম্পর্কে এমনটা বললে,অবশ্যই ঈমান চলে যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (597,330 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...