আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
528 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (45 points)
১।মসজিদে দোআ মাহফিল হয় মিষ্টি বিতরন হয়। এটাকি শরিয়তে জায়েজ?

২। কি কি কন্ডিশনে মিলাদ জায়েজ?

৩। মাইকিং করে মৃত্যু সংবাদ জানানো কি জায়েজ?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
জবাব
(১)
মসজিদে দোআ মাহফিল হয় এটা জায়েয।তবে মিষ্টি বিতরন করা ও তাতে খাওয়া মাকরুহ।হ্যা এ'তেকাফকারীর জন্য জায়েয।


(২)
মিলাদ অর্থ জন্মোৎসব। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্মোৎসব। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম।বৈধতার কোনো সূরত নাই।


(৩)
এ সম্পর্কে মাসিক আল-কাউসারে তাত্বিক একটি লিখা এসেছে,
"মায়্যেতের জানাযায় অধিক সংখ্যক মুসল্লীর উপস্থিতি শরীয়তে কাম্য। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا مِنْ مَيِّتٍ تُصَلِّي عَلَيْهِ أُمّةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ مِائَةً، كُلّهُمْ يَشْفَعُونَ لَهُ، إِلاّ شُفِّعُوا فِيهِ.
কোনো মায়্যেতের জানাযার নামায একশ জন মুসলমান পড়ল, যারা সকলে তার মাগফিরাতের জন্য শাফাআত করে তবে তাদের এ শাফাআত অবশ্যই কবুল করা হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৪৭

আর জানাযার নামাযে শরীক হওয়া সওয়াবের কাজ এবং জীবিতদের উপর মৃত মুসলমানের হক। এজন্যই কিছু হাদীস ও আছারে জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করার ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে। সহীহ বুখারীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে-

مَاتَ إِنْسَانٌ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَعُودُهُ، فَمَاتَ بِاللّيْلِ، فَدَفَنُوهُ لَيْلًا، فَلَمّا أَصْبَحَ أَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: مَا مَنَعَكُمْ أَنْ تُعْلِمُونِي؟

এক ব্যক্তি রাতে ইন্তিকাল করলে সাহাবীগণ তাকে রাতেই দাফন করে দেন। সকালে সংবাদটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তিনি বলেন, কেন তোমরা আমাকে (তখন) জানালে না? -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪৭

এক হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে-

أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَعَى النّجَاشِيّ فِي اليَوْمِ الّذِي مَاتَ فِيهِ خَرَجَ إِلَى المُصَلّى، فَصَفّ بِهِمْ وَكَبّرَ أَرْبَعًا.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশী বাদশার ইন্তেকালের দিন তাঁর মৃত্যু-সংবাদ দিয়ে জানাযার স্থানে গেলেন, অতপর সাহাবায়ে কেরামকে কাতার বন্দি করে চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৫১

সুনানে বায়হাকীর (৪/৪৭) এক বর্ণনায় এসেছে, রাফে ইবনে খাদীজ রা. আসরের পর ইন্তেকাল করলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-কে তাঁর মৃত্যু-সংবাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করা হল, তাঁর জানাযা কি এখন পড়া যেতে পারে? তিনি বলেন-

إِنّ مِثْلَ رَافِعٍ لَا يُخْرَجُ بِهِ حَتّى يُؤْذَنَ بِهِ مَنْ حَوْلنَا مِنَ الْقُرَى.

আশপাশের গ্রামসমূহে খবর না দিয়ে রাফের মত ব্যক্তির জানাযা পড়া যায় না।

এ জাতীয় হাদীস-আছারের আলোকে ফকীহগণ বলেন, জানাযার নামাযে অংশগ্রহণের জন্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের মৃত্যু-সংবাদ দেওয়া মুস্তাহাব। কিন্তু জানাযার উদ্দেশ্য ছাড়া মায়্যেতের গুণাবলী বর্ণনার উদ্দেশ্যে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা বা বিলাপ-আর্তনাদের সাথে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করার ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., হযরত হুযায়ফা রা.  প্রমুখ সাহাবীগণ নিজেদের মৃত্যু-সংবাদ এভাবে প্রচারিত হওয়ার ভয় করেই মৃত্যু-সংবাদ কাউকে না জানাতে বলেছেন। (দ্রষ্টব্য : জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৮৪-৯৮৬)

প্রশ্নে জামে তিরমিযীর বরাতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীস-

إِيّاكُمْ وَالنّعْيَ، فَإِنّ النّعْيَ مِنْ عَمَلِ الجَاهِلِيّةِ.

ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীস-আছার দ্বারা মৃত্যুর কারণে বিলাপ আর্তনাদ করা বা মৃতের গুণাবলী বর্ণনাসহ মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ এমনই বলেছেন। এতে জানাযা ও দাফনে শরীক হওয়ার জন্য মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করাকে নিষেধ করা হয়নি। নিম্নে তাঁদের কিছু ব্যাখ্যা ও উক্তি উদ্ধৃত হল।

ইমাম নববী রাহ. বলেন-

وَفِيهِ اسْتِحْبَابُ الْإِعْلَامِ بِالْمَيِّتِ لَا عَلَى صُورَةِ نَعْيِ الْجَاهِلِيّةِ، بَلْ مُجَرّدِ إِعْلَامِ الصّلَاةِ عَلَيْهِ وَتَشْيِيعِهِ وَقَضَاءِ حَقِّهِ فِي ذَلِكَ، وَالّذِي جَاءَ مِنَ النّهْيِ عَنِ النّعْيِ لَيْسَ الْمُرَادُ بِهِ هَذَا، وَإِنَّمَا الْمُرَادُ نَعْيُ الْجَاهِلِيّةِ الْمُشْتَمِلُ عَلَى ذِكْرِ الْمَفَاخِرِ وَغَيْرِهَا.

অর্থাৎ, ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগের মত না করে শুধু জানাযার নামাযের সংবাদ দেওয়ার জন্য মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা মুস্তাহাব। কেননা হাদীসে জাহেলী যুগের মত মৃতের গুণগান গেয়ে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। -আল মিনহাজ, শরহে নববী ৭/২১

হাফেজ ইবনে হাজার রাহ. বলেন, মৃত্যু-সংবাদ প্রচার নিষেধ নয়, নিষেধ তো হল জাহেলী যুগের কর্মকাণ্ড। -ফাতহুল বারী  ৩/১৪০

ইবনুল আরাবী রাহ. বলেন, মৃত্যু-সংবাদ প্রচার সংক্রান্ত হাদীসগুলোর সারকথা হল-

১. আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও নেককারদের মৃত্যু-সংবাদ দেওয়া সুন্নাত।

২. মৃতের প্রভাব-প্রতিপত্তি উল্লেখ করে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা মাকরূহ।

৩. বিলাপ, আর্তনাদের সাথে প্রচার করা হারাম। -ফাতহুল বারী ৩/১৪০

আরো দ্রষ্টব্য : আরেযাতুল আহওয়াযী, ইবনুল আরাবী কৃত ৪/২০৬

ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, জানাযার কথা প্রচার করতে সমস্যা নেই। -আল জামেউস সগীর পৃ. ৭৯

ইবরাহীম হালাবী রাহ. বলেন, বিশুদ্ধ মত হল, মৃতব্যক্তির গর্ব-গৌরবের উল্লেখ ছাড়া সাধারণভাবে অলিতে-গলিতে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা দোষণীয় নয়। কেননা (نعي الجاهلية) জাহেলী যুগের প্রচার তো হল, বিলাপ-আর্তনাদের সাথে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা। -শরহুল মুনয়া, পৃষ্ঠা ৬০৩

মোটকথা, জামে তিরমিযীর উক্ত হাদীসে সাধারণভাবে মৃত্যু-সংবাদ ঘোষণা করতে নিষেধ করা হয়নি।

সুতরাং সাধারণভাবে মৃত্যু-সংবাদ পৌঁছাতে কোনো সমস্যা নেই। আর তা মৌখিকভাবে যেমন করা যায়, তদ্রূপ বর্তমানে মাইকের মাধ্যমে আরো সহজেই পৌঁছানো যায়।

উল্লেখ্য যে, জানাযা কখন হবে এটি কোনো এলাকায় একবার জানিয়ে  দেওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু কোথাও কোথাও দেখা যায় দীর্ঘ সময় নিয়ে মাইকে  একই ঘোষণা বহুবার করা হয়ে থাকে। এমনটি করা ঠিক নয়। কেননা এতে অন্যদের কষ্ট হতে পারে।
(মাসিক আল-কাউছার)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 192 views
...