দীর্ঘ আশা ইবাদতে অলসতা তৈরি ও তাওবার ক্ষেত্রে গড়িমসি তৈরি করে। (ফাতহুল বারী ১১/২৩৭)।
আপনি হয়ত জীবন সম্পর্কে অতিরিক্ত আশা করে বসে আছেন যে, হায়াত অনেক পাবেন আর শেষ জীবনে তাওবা করে নিবেন! ব্যাস, হয়ে যাবে! এটা মূলত আশা নয়, বরং ধোঁকা। সুতরাং এজাতীয় ‘অন্যায়-আশা’, যা আপনাকে আমল ও তাওবা থেকে বিমুখ করে দিচ্ছে, তা এখনই বর্জন করুন।
নেক আমল কিংবা তাওবা করার চিন্তা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা করে ফেলুন। আজকের নেক আমল এবং আজকের তাওবা আজকেই করতে হবে। আগামীকালের অপেক্ষায় রেখে দেয়া যাবে না কিছুতেই।
অনেক ক্ষেত্রে অলসতার অন্যতম কারণ থাকে উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব। নিজেকে জাগাতে আপনি আল্লাহওয়ালাদের জীবনী, তাঁদের সফলতার গল্প, তাঁদের বাণী পড়ুন, জানুন । অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো। বিখ্যাত বুজুর্গ বিশির হাফী রহ. বলতেন,
حسبك أَن أقواما موتى تحيى القلوب بذكرهم ، وأن أقواما أحياء تقسو القلوب برؤيتهم
তোমার জন্য এটা জানা যথেষ্ট যে, কিছু মৃত মনীষী এমন আছেন যে, তাঁদের আলোচনা করলেও অন্তর জীবিত হয় এবং কিছু জীবিত মানুষ এমন আছে যে, তাদেরকে দেখলেও অন্তর শক্ত হয়ে যায়। (তারিখু দামিশক ১০/২১৪)
যাঁরা আপনার চাইতে বেশি উদ্যমী এবং আমলে অগ্রসর তাঁদেরকে দেখুন। বিশেষত আল্লাহওয়ালাদের চেহারা দেখুন, তাঁদের মজলিসে বসুন, তাঁদের কথা শুনুন এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা সঞ্চয় করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা তাওবা ১১৯)
যখন অলসতা ভর করে ঠিক তখন নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন। এটা আপনাকে আমল করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এভাবে ভাবুন যে, অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা এগুলো তো শয়তানের সৃষ্ট, ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। সুতরাং আমি কেন শয়তানের শিকারে পরিণত হয়ে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হব। তারপর তাআউয (আউযুবিল্লাহ…) ও ইস্তেগফার পড়ে আমলের প্রতি ব্রতী হোন।
বর্তমানে আমাদের অবসর সময়গুলোর সঙ্গী হয়ে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন। এসবের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে।
যত কষ্টই হোক, ফজরের নামাযের প্রতি যত্নবান হোন। কেননা অলসতার কারণে ফজরের নামায না পড়তে পারলে এটাই হবে সারাদিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অন্যান্য অলসতার সূচনা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন,
يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَاسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ: عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللَّهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারী ১১৪২)
ফজরের পরে ঘুম বর্জন করুন। কেননা এটাও অলসতা ও উদ্যমহীনতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সুতরাং এই সময়ে না ঘুমিয়ে নামায আদায় করে তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার ও তেলাওয়াত শুরু করে দিন। এমনটি করতে পারলে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর দোয়া পাবেন এবং আপনার সারদিনের কাজে অলসতা কেটে যাবে। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর দোয়াটি দেখুন, তিনি বলেন,
اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا
হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন। (তিরমিযি ১২১২)
অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য হাদিসে যে সব দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে, সেগুলো পড়ুন। যেমন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ ، وَالبُخْلِ وَالجُبْنِ ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী ২৮৯৩)
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ- اَللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا – اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! আপনি আমার মনে তাকওয়ার অনুভূতি দান করুন, আমার মনকে পবিত্র করুন। আপনিই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী। আপনিই তো হৃদয়ের মালিক, অভিভাবক ও বন্ধু। হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন ইলম থেকে যে ইলম কোনো উপকার দেয় না, এমন হৃদয় থেকে যে হৃদয় বিনম্র হয় না, এমন আত্মা থেকে যে আত্মা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে যে দোয়া কবূল হয় না। (মুসলিম ২৭২২)