জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ক,
(০১)
জানাযার নামায পড়ার পর থেকে আর মাইয়্যিতের চেহারা দেখানো উচিত নয়। হ্যাঁ, জানাযার নামায পড়ার আগে পর্যন্ত চেহারা দেখাতে পারে। তবে চেহারা দেখানোর জন্য মাইয়্যিতের কাফন-দাফনে দেরি করা জায়িয নয়।
গোসল-কাফন ইত্যাদির প্রস্তুতির ফাঁকে চেহারা দেখিয়ে দিতে পারে। এর জন্য আলাদাভাবে সময় দেয়া অনুচিত।
তবে আলাদা সময় দেয়া নাজায়েজ নয়,এক্ষেত্রে যেনো শুধু দেখানোর জন্য জানাযায় দেড়ি হচ্ছে,এমন যেনো না হয়,সেক্ষেত্রে অনুমতি নেই।
আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ, মাইয়্যিতকে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় দাফন করা-এ ব্যাপারে অলসতা করা, দেরী করা নিষেধ এবং গুনাহের কাজ।
(০২)
শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।
তাই এটি বিদ'আত।
(০৩)
প্রচলিত উক্ত পদ্ধতি বিদ'আতের অন্তর্ভুক্ত।
★মাইয়্যিতের খাটিয়া বহন করার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হল, চার ব্যক্তি খাটিয়ার চার পায়া ধরে উঠাবে। এবং সম্ভব হলে প্রত্যেকে সবগুলো পায়া কাঁধে নিবে। আর সবগুলো পায়া ধরার নিয়ম ফকীহগণ এভাবে বলেছেন যে, প্রথমে একজন সামনের ডান পায়া কাঁধে নিবে।
এরপর পেছনের ডান পায়া ডান কাঁধে, তারপর সামনের বাম পায়া বাম কাঁধে, সর্বশেষ পেছনের বাম পায়া বাম কাঁধে নিবে। আর লাশ বহনের সময় তিনবার থামা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়।
তবে প্রতিবার কাঁধ পরিবর্তন করার প্রয়োজনে যদি দাঁড়াতে হয় তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এটিকে সুন্নত বা সওয়াবের কাজ মনে করা যাবে না।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা, বর্ণনা ১১৩৯৯; আলজামেউস সগীর, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ১১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৬৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬০৫; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৯২; রদ্দুল মুহতার ২/২৩১)
(০৪)
দাফন শেষ হওয়ার পরে সূরা পড়ে কবরের ৪ কোণায় রসুনের কোয়া পুতে দেয়া জায়েজ নেই।
★কবরের উপর কাঁচা খেজুরের ডাল,বাশ,ডাল না গেড়ে দেওয়ার মাসয়ালা হলো এগুলো না করাই উত্তম।
কারন হাদীস শরীফে রাসুল সাঃ এর যেই ঘটনা এসেছে,উলামায়ে কেরামগন বলেন যে এটা রাসুল সাঃ এর সাথেই খাছ।
তাই সতর্কতামূলক ইহা থেকে বেঁচে থাকা দরকার।
ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম ৫/২৮২
তবে কেউ যদি জরুরি মনে না করে এটা গেড়ে দেয়,তাহলে এটাকে নাজায়েজ বলা যাবেনা।
,
বিস্তারিত জানুনঃ
(০৫)
প্রয়োজন বশত এটি জায়েজ আছে।
(০৬)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ، فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ
হযরত উসমান বিন আফফান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃতের দাফন থেকে ফারিগ হতেন, তখন তিনি সেখানে দাঁড়াতেন এবং বলতেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য দুআ কর, এবং তার জন্য দৃঢ়তার দুআ কর। কেননা, এখনি তাকে সুওয়াল করা হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২২১]
★মৃতকে দাফন করার পর, তার কবরের পাশে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দুআ করা জায়েজ আছে।
একাকী করাও জায়েজ আছে, আর সম্মিলিতভাবে করাও জায়েজ আছে।
★তবে এ দুআকে জরুরী মনে করা বা দাফনের সুন্নাত মনে করা বিদআত।
যারা এভাবে দুআ না করে তাদের ভর্ৎসনা করা জায়েজ নেই।
এই মাসয়ালাটি মতবিরোধ পূর্ণ।
কেহ কেহ এটিকে পুরোপুরি বিদ'আত বলেছেন।
তাদের মতানুসারী গন সেই মতের উপর আমল করতে পারবেন।
(০৭)
এটিকে আবশ্যকীয় বা সুন্নত বা সওয়াবের কাজ মনে করা করলে বিদ'আত হবে।
নতুবা এমনিতেই কবরের মাটি বসানোর জন্য করলে অনুমতি আছে।
(০৮)
তিন দিনা,সাত দিনা,চল্লিশা জায়েজ নেই।
অন্য কোনো দিন ঈসালে ছওয়াবের জন্য যাকাত গ্রহনের উপযুক্ত এমন গরিবদের খাওয়ানো জায়েজ।
ধনীদের খাওয়ালে ঈসালে ছওয়াব হবেনা।
মাইয়্যিতের ঈসালে ছওয়াব এর লক্ষ্যে দাওয়াতের ইহতিমামের এই পদ্ধতি শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে প্রমানিত নয়।
এবং মাইয়্যিতের ছওয়াব পৌছানোর নিয়তে যেই খাবার তৈরী করা হয়েছে,তাতে শুধু ফকিরদের হক রয়েছে।
ধনীরা তার মধ্যে শরীক হবেনা।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১/৩৯১)
তবে যেই খাবার মেহমানদারীর জন্য পাকানো হয়েছে,সেটা ধনীরা খেতে পারবে।
(ফাতাওয়ায়ে রশিদিয়্যাহ ১৫২, কিতাবুন নাওয়াজেল ১/৩৭২)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۰﴾
সাদাকাহ হচ্ছে শুধুমাত্র গরীবদের এবং অভাবগ্রস্তদের, আর এই সাদাকাহর (আদায়ের) জন্য নিযুক্ত কর্মচারীদের এবং (দীনের ব্যাপারে) যাদের মন রক্ষা করতে (অভিপ্রায়) হয় (তাদের), আর গোলামদের আযাদ করার কাজে এবং কর্জদারদের কর্জে (কর্জ পরিশোধে), আর জিহাদে (অর্থাৎ যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য) আর মুসাফিরদের সাহায্যার্থে। এই হুকুম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।
(সুরা তওবা ৬০)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِيٍّ وَلَا لِذِي مِرَّةٍ سَوِيٍّ»
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সদকার মাল ধনীদের জন্য হালাল নয়, সুস্থ সবলদের (খেটে খেতে সক্ষম) জন্যও নয়।
(আবূ দাঊদ ১৬৩৪, আত্ তিরমিযী ৬৫২, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৭১৫৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৬৬৩, আহমাদ ৬৫৩০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৭৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭২৫১।)
وإن اتخذ طعاماً للفقراء کان حسناً، وأطال ذلک في المعراج۔ (شامی زکریا ۳؍ ۱۴۸، طحطاوي علی مراقي الفلاح، الجنائز / فصل حملہا ودفنہا ۵۱۰ مصر، کفایت المفتی ۴؍۱۱۶، فتاوی شیخ الاسلام ۱۵۱)
সারমর্মঃ-
যদি শুধু ফকিরদের জন্য খানা তৈরী করে,তাহলে তাহা উত্তম।
(খ)
এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর কোন দায়ভার আসবেনা।