বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছেন,
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : " لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ ، وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ ، فَقَامَ : رَجُلٌ ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا ، وَخَرَجَتِ امْرَأَتِي حَاجَّةً ، قَالَ : اذْهَبْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ " .
الكتب » صحيح البخاري » كِتَاب الْجِهَادِ وَالسِّيَرِ » بَاب مَنِ اكْتُتِبَ فِي جَيْشٍ فَخَرَجَتِ امْرَأَتُهُ
তরজমাঃ-
আজনবী পুরুষ-মহিলার মাহরাম ব্যতীত পরস্পর খালওয়াত তথা নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না।এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলল।অমুক জিহাদে আমার আমার নাম লিখা হয়েছে,অন্যদিকে আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে চাচ্ছে।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্বে যাও।
বুখারী-২৮০০
খালওয়াহ শব্দের ব্যখ্যা
الْخَلْوَةُ فِي اللُّغَةِ: مِنْ خَلاَ الْمَكَانُ وَالشَّيْءُ يَخْلُو خُلُوًّا وَخَلاَءً، وَأَخْلَى الْمَكَانُ: إِذَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ أَحَدٌ وَلاَ شَيْءَ فِيهِ، وَخَلاَ الرَّجُل وَأَخْلَى وَقَعَ فِي مَكَان خَالٍ لاَ يُزَاحَمُ فِيهِ
ভাবার্থ
যখন কোনো স্থানে উক্ত আজনবী পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত অন্য কেউ থাকবে না বা অন্য কোনো এমন জিনিষ থাকবে না যা সহবাসকে বাধা দিতে পারে।তথা এমন খালি স্থান যেখানে লোকসমাগম বলতে নেই।(আল মাওসুআতুল ফেকহীয়্যায়;১৯/২৬৫)
ফিৎনার আশংকা না থাকলে সফরের দূরত্বের চেয়ে কম (অর্থাৎ তিনদিন তিনরাত দূরত্বের জায়গা অথবা ৭৭(এক বর্ণনায় ৮২.৫) কিলোমিটারের চেয়ে কম) দূরত্ব মহিলার জন্য মাহরাম ব্যতীত সফর করা বৈধ রয়েছে।
শায়খাইন রাহ তথা ইমাম আবু হানিফা রাহ ও ইমাম আবু ইউসুফ রাহ থেকে বর্ণিত রয়েছে,একদিন একরাত দূরত্বের জায়গা থেকে কম হলে
তথা (৭৭÷৩=২৫.৬)২৫.৬ কিলোমিটার বা তার চেয়ে কম পরিমাণ জায়গা হলে মহিলা মাহরাম ব্যতীত সফর করতে পারবে।অন্যথায় পারবে না।
বর্তমান এই ফিতনার যুগে নিম্নোক্ত মতামত-ই ফাতাওয়া তথা শরয়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্য।তবে এখানেও ফিতনার আশঙ্কা না থাকা চাই।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।(কিতাবুন-নাওয়াযিল;১৫/৪১৭)
হাদীস শরীফে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে।অবস্থানের নিষেধ তথায় আলোচিত হয়নি।সুতরাং মহিলার জন্য এমন কোনো স্থান যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ মিলামিশা নেই, এবং যেখানে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শরয়ী পর্দার যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।সেখানে মহিলা অবস্থান করতে পারবে।
ইবনে মালাক হানাফি রাহ বলেন,
قَالَ ابْنُ الْمَلَكِ فِيهِ دَلِيلٌ عَلَى عَدَمِ لُزُومِ الْحَجِّ عَلَيْهَا إِذْ لَمْ يَكُنْ مَعَهَا مَحْرَمٌ، وَبِهَذَا قَالَ أَبُو حَنِيفَةَ وَأَحْمَدُ، وَقَالَ مَالِكٌ - رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى يَلْزَمُهَا إِذَا كَانَ مَعَهَا جَمَاعَةُ النِّسَاءِ، وَقَالَ الشَّافِعِيُّ - رَحِمَهُ اللَّهُ - يَلْزَمُهَا إِذَا كَانَ مَعَهَا امْرَأَةٌ ثِقَةٌ اهـ.
কোনো মহিলার মাহরাম পাওয়া না গেলে তার উপর হজ ফরয হবে না।এটাই ইমাম আবু-হানিফা রাহ এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ এর মাযহাব।ইমাম মালিক রাহ. মনে করেন,মহিলাদের কোনো জামাত পাওয়া গেলে ঐ মহিলার উপর হজ করা ফরয হয়ে যাবে।ইমাম শা'ফেয়ী রাহ. মনে করেন,পরহেযগার মহিলা(মাহরাম সম্ভলিত পরহেযগার মহিলা) পাওয়া গেলে ঐ মহিলার উপর হজ ফরয হয়ে যাবে।
وَقَالَ الشُّمُنِّيُّ مَذْهَبُ مَالِكٍ إِذَا وَجَدَتِ الْمَرْأَةُ صُحْبَةً مَأْمُونَةً لَزِمَهَا الْحَجُّ لِأَنَّهُ سَفَرٌ مَفْرُوضٌ كَالْهِجْرَةِ، وَمَذْهَبُ الشَّافِعِيِّ إِذَا وَجَدَتْ نِسْوَةً ثِقَاتٍ فَعَلَيْهَا أَنْ تَحُجَّ مَعَهُنَّ،
মুহাক্কিক্ব শুমুনি রাহ বলেন,মালিকি মাযহাব হল,যখন মহিলা কোনো নিরাপদ সফরসঙ্গি(মহিলাদের জামাত)পেয়ে যাবে তখন তার উপর হজ ফরয।কেননা হিজরতের মত হজ হল ফরয।এবং শা'ফেয়ী মাযহাব হল,যখন মহিলা কোনো পরহেযগার দ্বীনদার মহিলাদের সঙ্গ পাবে তখন তার উপর হজ ফরয।(মিরকাতুল মাফাতিহ-২৫১৩ নং হাদিসের ব্যখ্যা দ্রষ্টব্য)বিস্তারিত জানুন-৫৮০
(১)
সফর পরিমাণ দূরত্বে যদি মাহরাম ছাড়া কয়েকজন মহিলা একসাথে যায় এবং তালিম ঘরে ৩/৭/৪০ দিন থাকে।
এর হুকুম হল, সফর পরিমাণ দূরত্বে মহিলারা সফর করতে পারবে না।চায় তারা কয়েকজনই হোক না কেন?তবে যদি ঘটনাক্রমে কয়েকজন মহিলা কোথা যায়,এবং সেখানে অবস্থানের জুরুরত পড়ে,এবং পরিবেশও নিরাপদ থাকে,তাহলে সেখানে অবস্থান করা যাবে।কিন্তু সর্বদা উত্তম এটাই যে, মাহরাম ছাড়া কোথাও যাওয়া যাবে না এবং অবস্থানও করা যাবে না।
(২)
সফর পরিমাণ দূরত্বের চেয়ে কম জায়গায় মহিলারা বিশেষ প্রয়োজনে একা যেতে পারবে।যদি ফিতনার আশংকা না থাকে,তবে বর্তমান সময়ে ফিতনা যেহেতু চতুর্দিকে, তাই ফুকাহাগণ বারণ করে থাকেন।
৩/৪/৭ দিন এভাবে মাহরাম ছাড়া রাত্রিযাপন উচিৎ হবে না।তবে পরিবেশ নিরাপদ থাকলে নাজায়েযও বলা যাবে না।উত্তম এটাই এমন ভাবে কোথাও রাত্রিযাপন না করা।হ্যা বিশেষ প্রয়োজনে সকাল গিয়ে বিকালে আসা যাবে।
ফুকাহায়ে কেরাম ফিতনার আশংকায় মহিলাদের একত্রিত হওয়াকে মাকরুহে তাহরিমি বলেন।চায় নামাযের জন্য মসজিদে একত্রিত হোক বা অন্য কোনো ভালো মাকসাদে একত্রিত হোক।সর্বদাই ফুকাহাগণ মাকরুহে তাহরিমি বলেন।