আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
296 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (14 points)
আসসালামু আলাইকুম

আমার মনে নানা ধরনের কুচিন্তা আসে যা  খুবই খারাপ বিষয় যা মরে গেলেও মুখে আনা সম্ভব এগুলো আমি ঘৃনা করি এর জন্য আমি অনেক চিন্তায় আছি এসব চিন্তার জন্য কি আমার  গুনাহ হবে না ইমান নষ্ট হয়ে যাবে?

মনের কুচিন্তা থেকে বাচার কিছু নিয়ম ও দোয়া বলে দিলে ভালো হতো

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
জবাবঃ 
ওয়াসওয়াসা যা মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে,এ গুলোর উৎস কয়েক প্রকারের হতে পারে। 

ওয়াসওয়াসা সর্বমোট তিন প্রকার।যথা (১)নফসের ওয়াসওয়াসা।(২)শয়তান জিনদের ওয়াসওয়াসা।(৩)শয়তান মানুষদের ওয়াসওয়াসা।

নফসের ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।(সূরা ক্বাফ-১৬)

শয়তান জিনদের ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَى
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?(সূরা তো-হা-১২০)

শয়তান মানুষদের ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,
مَلِكِ النَّاسِ
মানুষের অধিপতির,
إِلَهِ النَّاسِ
মানুষের মা’বুদের
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ
জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।


অর্থাৎ, ওয়াসওয়াসা হয়তো জিন থেকে হবে বা মানুষ থেকে হবে কিংবা নফস থেকে হবে।

অজু এবং নামাযে যে ওয়াসওয়াসার সৃষ্টি হয়।সে জানে না যে, কয় রা'কাত নামায পড়েছে,বা অজুতে কয়বার ধৌত করেছে?'এগুলো শয়তানের পক্ষ্য থেকেই হয়ে থাকে।সে যদি আল্লাহর নিকট পানাহ চায়,তাহলে এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে।আর যদি সে আল্লাহর নিকট পানাহ না চায়,তাহলে শয়তান তার উপর সর্বদাই রাজত্ব করবে।এবং শেষপর্যন্ত সাধারণ ওয়াসওয়াসা থেকে ধংসকারী অসুস্থতার দিকে সে অগ্রসরমান হবে।

শয়তানের ওয়াসওয়াসা ইস্তে'আযা তথা আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া দ্বারা দূর হয়ে যায়।আর নফসের ওয়াসওয়াসা ইস্তে'আযা দ্বারাও দূর হয়।এবং আল্লাহর সাথে বান্দার সুসম্পর্কর দ্বারাও দূর হয়।নেক কাজ করার মাধ্যমে এবং বদ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার মাধ্যমে।

শয়তানের ওয়াসওয়াসা এবং নফসের ওয়াসওয়াসার মধ্য সুক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। 
ইবনে আবু হাযিম রাহ লিখেন,
" ما كرهتْه نفسُك لنفسِك فهو من الشيطان فاستعذ بالله منه، وما أحبَّته نفسُك لنفسِك فهو من نفسك فانْهَها عنه "
নফস এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসার মধ্যে পার্থক্য হল,নিজের জন্য যা অপছন্দনীয় মনে হবে,সেটা শয়তানের পক্ষ্য থেকে হয়ে থাকে।সুতরাং এত্থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে।আর নফস নিজের জন্য যা পছন্দ করবে,সেটা মূলত নফসের পক্ষ্য থেকেই হয়।(মাজমুউল ফাতাওয়া-১৭/৫৩০)

অর্থাৎ নফস অধিকাংশ সময় শাহওয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়,সেই সব বিষয়ে,যা সাধারণত মানুষ করে থাকে।
অন্যান্য উলামায়ে কেরাম আরও একটি পার্থক্য নির্ণয় করেন।সেটা হল,শয়তানের ওয়াসওয়াসা হল,গোনাহকে সুসজ্জিত করে মানুষের সামনে পেশ করা,শেষপর্যন্ত লোকজন তাতে পতিত হয়।যদি শয়তান পরাজিত হয়ে যায়,তাহলে সে আরেকটি গোনাহ মানুষের সামনে উপস্থাপন করে।সে বান্দাকে নির্দিষ্ট কোনো গোনাহে পতিত করতে চায় না। বরং সে চায়,বান্দা তার রবের নাফরমানি করুক।আর নফসের ওয়াসওয়াসা হল,নির্দিষ্ট কোনো গোনাহ সম্পর্কে বারবার মনে উক্ত গোনাহ সম্পর্কে উদ্রেক হওয়া।বারবার উক্ত কাজ নিজ মনে উকি দেয়া।

কেউ কেউ বলেন,নফসের ওয়াসওয়াসা বলতে যা নফস কামনা করে ও যাকে পছন্দ করে।আর শয়তানের ওয়াসওয়াসা বলতে যে গোনাহসমূহ বান্দার সামনে সুসজ্জিত আকারে উপস্থাপিত হয়।কখনো কখনো নফসের ওয়াসওয়াসা এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।

সু-প্রিয় পাঠকববর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মনের ওয়াসওয়াসার জন্য কোনো প্রকার গোনাহ হবে না।
(إن الله عز وجل تجاوز لأمتي ما وسوست به وحدثت به أنفسها ما لم تعمل أو تتكلم به)
নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা আমার উম্মতের ওয়াসওয়াসাকে ক্ষমা করে দেবেন,এবং মনের কথাকেও ক্ষমা করে দেবেন,যতক্ষণ না আমলে পরিণত করছে বা মুখ দ্বারা উচ্ছারণ করে বলছে।
(সহীহ বোখারী-৬৬৬৪,সহীহ মুসলিম-১২৭)

মনের কুচিন্তা থেকে বাচতে একাকিত্বকে দূর করে লোক সম্মুখে চলে যাওয়াই সমুচিত।নেককারদের সাহচর্য গ্রহণ করে একাকিত্বকে দূর করে দিন,কুচিন্তা দূর হয়ে যাবে।এবং যখনই মনের মধ্যে কোনো কুচিন্তা আসবে,তখন সাথে সাথেই আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়ে নিবেন।দেখবেন মনের কু চিন্তা দূর হয়ে যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...