আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
428 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
edited by
আসসালামু আলাইকুম
১.তাবলীগে একটা কথা বলে যে ইনফিরাদি আমল (ব্যাক্তিগত আমল) ইজতেমায়ী আমলের ( সম্মিলিত আমল)  তুলনায় একটা সমুদ্রে এক ফোোঁটা  পানির মত। এরকম কোন হাদীস আছে? ইজতেমায়ী আমল বলতে মাশওয়ারা, মুজাকারা,খাওয়া, গুম ইত্যাদি।
২.একজন বললো তাহাজ্জুদের চাইতেও মাশওয়ারা সওয়াব অত্যধিক বেশী। এসব কথা সঠিক?

৩. এক টাকা দান করলে ৭ লক্ষ টাকার সওয়াব এটাতো জিহাদে খরচ করলে হবে। তাবলীগে খরচ করলেও কি এই সওয়াব হবে?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত কোনো হাদীস  নেই।
,
তবে জামাআত গত কাজ করল যে এটার ছওয়াব বেশি হয়,জামাআত গত কাজ করলে যে এটার উপর আল্লাহ তায়ালার রহমত থাকে,ইত্যাদি কারনে জামাআত গত কাজ করাকে ফজিলতের বিষয় বলে মনে করা হয়।
 
যেমন নামাজ জামাআত এর সহিত পড়ার ছওয়াব এর কথা হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

صَلاَةُ الجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلاَةَ الفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً.

অর্থাৎ একাকী নামায পড়া অপেক্ষা জামাতে নামায আদায় করা সাতাশ গুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৭৫

আরো জানুনঃ
.
জামাআতের উপর আল্লাহ তায়ালার রহমত থাকে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ
ইয়াহইয়া ইবন মূসা (রহঃ) ..... ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর হাত (রহমতের হাত) হল জামাআতের উপর। 
মিশকাত ১৭৩, বিদায়াতুস সূল ৭০/১৩৩, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৬৬ [আল মাদানী প্রকাশনী]

أَخْبَرَنِي أَحْمَدُ بْنُ يَحْيَى الصُّوفِيُّ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ قَالَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ مَرْدَانِبَةَ عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلَاقَةَ عَنْ عَرْفَجَةَ بْنِ شُرَيْحٍ الْأَشْجَعِيِّ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَخْطُبُ النَّاسَ فَقَالَ إِنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ رَأَيْتُمُوهُ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ أَوْ يُرِيدُ يُفَرِّقُ أَمْرَ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَائِنًا مَنْ كَانَ فَاقْتُلُوهُ فَإِنَّ يَدَ اللَّهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ يَرْكُضُ

আহমদ ইবন ইয়াহইয়া সূফী (রহঃ) ... আরফাযা ইবন শুরায়হ্ আশজাঈ (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরের উপর লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। তিনি বলছিলেনঃ আমার পরে অনেক ফিতনা দেখা দেবে, এসময় তোমরা যাকে দেখবে মুসলমানদের দল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, অথবা উম্মতে মুহাম্মদ এর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে; সে যে-ই হোক না কেন, তাকে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহ তা'আলার রহমতের হাত মুসলমানদের দলের উপর থাকবে। আর যে ব্যক্তি জামা'আত হতে পৃথক হয়ে যায়, শয়তান তার সাথী হয় এবং তাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে নেয়।
নাসায়ী ৪০২১,সহীহুল জামে’ ৩৬২১।
,
(০২)
শরীয়তের মাশওয়ারা করে প্রত্যেক কাজ করার অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ     
وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
যারা রবের ডাকে সাড়া দিল, নামায কায়েম করল, মাশওয়ারার মাধ্যমে কাজ সমাধা করল আর আল্লাহ তাআলা যা দিয়েছেন তা থেকে দান করল।
[সুরা আস শুরা আয়াত ৩৮]
,
★তবে প্রশ্নে উল্লেখিত  তাহাজ্জুদের চাইতেও মাশওয়ারা সওয়াব অত্যধিক বেশী মর্মে কোনো কথা নেই।
এটি ভিত্তিহীন।  

(০৩)
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,আমরা ইতিপূর্বে একটি ফতোয়া (https://ifatwa.info/7198/?show=7198#q7198)
 তে উল্লেখ করেছি যে আল্লাহর রাস্তায় এক টাকা খরচ করলে ৭ লক্ষ টাকার ছওয়াব লেখা হয়।
   
হাদীস শরীফে এসেছে  
عن خريم بن فاتك : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبعمائة ضعف

অনুবাদ-হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ হিসেবে লেখা হয়।

(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪)
,
উক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে জিহাদের ফাজায়েল সম্পর্কে। 
★এই হাদিস কি দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা এই ব্যপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। 
,      
 কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেন যে প্রচলিত তাবলীগের ব্যপারে এসব হাদীস দিয়ে দলিল দেওয়া যাবেনা।
এটি জিহাদের সংজ্ঞায় পড়েনা, 
তাই তাবলীগে উক্ত ফাজিলত বলা যাবেনা।
,  

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে বর্তমান যামানায় দীনের প্রচার-প্রসার ও বে-দীনীর প্রতিরোধ তাবলীগের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর হচ্ছে। অন্যদিকে জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হচেছ আল্লাহর কালিমা বূলন্দ করা এবং আল্লাহর দীন প্রতিষ্টা করা। কাফের হত্যা করা, বে-দীনের খতম করা জিহাদের আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং তারা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের পথে বাধা, তাই বাধা দুর করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে তাদেরকে খতম করা ফরজ করা হয়েছে। 

সেই প্রেক্ষিতে জিহাদের যে মূল লক্ষ্য, দা‘ওয়াত ও তাবলীগের সেই একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। উক্ত লক্ষের বাস্তবায়নের জন্যই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ অনুযায়ী দীনের দা’ওয়াত নিয়ে তাবলীগের নামে সমগ্র বিশ্বে ঘোরাফেরা করা হচ্ছে। সে জন্য জিহাদের ব্যাপারে যে সব ফজীলত বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো তাবলীগের ব্যাপারেও প্রযোজ্য হবো।

 এখানে প্রশ্নে উল্লেখিত সওয়াব গুলো আসলে জিহাদের ফজীলতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, তথাপিও সেগুলো তাবলীগের ব্যাপারে বয়ান করতে কোন অসুবিধা নেই। এ ব্যাপারে হক্কানী উলামায়ে কিরাম ঐক্যমত পোষণ করেন। 
এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামদের মত।     


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...