আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
279 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (61 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

যাকাত প্রসঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল। অনুগ্রহ করে সব গুলো একটু কষ্ট করে পড়ে, উত্তর দিলে মুনাসিব হয়।
১. আমি ফিক্বহের ক্লাস থেকে জেনেছিলাম কাউকে কর্য দেয়া টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেটার যাকাত দিয়ে হয়, আবার যিনি কর্য নিয়েছে সে যদি জরুরতের জন্য না নিয়ে জীবন মান উন্নয়ন কিংনা ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে নিয়ে থাকে তাহলে সেই টাকারও যাকাত দিতে হবে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে একই টাকার উপর দুইজনের অর্থাৎ ডাবল যাকাত আসছে। এটা কি এভাবেই হবে?

২. কর্য দেয়া বা পাওনা টাকার ক্ষেত্রে কতটুকু সম্ভাবনা থাকলে যাকাত দিতে হবে? এখানে কি ১% সম্ভাবনা থাকলেও দিতে হবে নাকি অন্য কোন পরিমাপ আছে, যেমন অর্ধেক সম্ভাবনা কিংবা তার বেশি।  অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, পাওয়া যাবেনা বললেই চলে তবে খানিক সম্ভাবনা থেকেই যায়।

৩. কর্য দেয়া টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যাকাত দিতে হয়, এক জায়গায় মাসআলা শুনেছি যে পাওনা টাকার ক্ষেত্রে দুইটি অপশন আছে, উত্তম হচ্ছে যাকাতের সময় হলে যাকাত দিয়ে দেয়া, তবে কেউ চাইলে টাকা ফেরত পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সেই টাকা পেলে যত বছরের যাকাত বাকি ছিল সেটা হিসেব করে একবারে যাকাত দিতে পারবে।

৪. আমার যাকাতের সময় পূর্ণ হয় রজব মাসে। এখন যদি আমি রমাদান টু রমাদান এটা নিয়ে আসতে চাই এক্ষেত্রে কি এভাবে করা যায় যেহেতু রজব থেকে রমাদান দুই মাস। তাই আমি গত রজব থেকে এই রমাদান মোট ১৪মাস হিসেব করে যদি যাকাত বের করি এবং এর পর থেকে প্রতি রমাদানে দেই এভাবে কি ঠিক হবে? এক বছরে যদি ১২ হাজার টাকা হয় তাহলে প্রতি মাসে ১হাজার টাকা তাহলে ১৪ মাসে ১৪হাজার। এভাবে করতে চাচ্ছিলাম। দয়া করে জানাবেন।

1 Answer

0 votes
by (559,140 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
এখানে দুটি বিষয়ঃ-

এক, আমি যদি কাউকে করজ (ঋন) দেই,তাহলে সেই টাকার উপর আমার যাকাত আবশ্যক হবে কিনা?

★অন্যকে যে টাকা কর্জ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বা ব্যবসায়ী কোনো পণ্য বাকিতে বিক্রয় করেছে এই পাওনা টাকা পৃথকভাবে বা অন্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে মিলিতভাবে নিসাব পূর্ণ করলে তারও যাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১১১-৭১১৩,৭১২১,৭১২৩,৭১২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৮৪-৪৮৬)

★পাওনা উসূল হওয়ার পর ওই টাকার যাকাত আদায় করা ফরয হয়। তার আগে আদায় করা জরুরি নয়, তবে আদায় করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩৪৭, ১০৩৫৬)

★উপরোক্ত ক্ষেত্রে পাওনা উসূল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসুল হওয়ার পর বিগত সকল বছরের যাকাত আদায় করা ফরয হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১১৬,৭১২৯,৭১৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩৪৬,১০৩৫৬)

দুই, যদি আমি কাহারো থেকে করজ (ঋন) নেই,তাহলে সেই টাকার উপর আমার যাকাত আবশ্যক হবে কিনা?

শরীয়তের বিধান হলো কাহারো ঋণ যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয নয়। (মুয়াত্তা মালেক ১০৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০০৩, ৭০৮৬, ৭০৮৯, ৭০৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪৭-৫৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩)
,
কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রসিদ্ধ মাসআলাটি সকল ঋণের ক্ষেত্রে নয়। 

ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে।
 ক. প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়। 
খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়।
,
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে যাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে যাকাত ফরয হবে, অন্যথায় নয়। 
,
কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে যাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেওয়া যাবে না। 
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৮৭)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
একই টাকার উপর দুইজনের অর্থাৎ ডাবল যাকাত আসছে। তবে পার্থক্য এতটুকু যে আমি কাউকে টাকা করজ দিলে সেক্ষেত্রে আমাকে এখনই যাকাত দিতে হবেনা।
ঐ টাকা উসুলের পর আমাকে যাকাত দিতে হবে।
তাতে পাওনা টাকা উসূল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসুল হওয়ার পর বিগত সকল বছরের যাকাত আদায় করা ফরয হবে।

(০২)
সম্ভাবনা থাকুক বা না থাকুক,সেই টাকা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেটির যাকাত দিতে হবেনা।

(০৩)
মূলত সেই টাকা উসুলের পর তাহা হতে যাকাত প্রদান হবে।
তবে পাওনা টাকা উসূল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসুল হওয়ার পর বিগত সকল বছরের যাকাত আদায় করা ফরয হবে।

কেহ অগ্রীম সেই টাকার আদায় করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই।

(০৪)
এটি ঠিক নয়।
,
আপনাকে রজব মাসেই যাকাত দিতে হবে।
রমজানে কারন বশত বা বেশি ছওয়াবের আশায় যাকাত দিলে সেটি "যাকাত ফরজ হওয়ার পরেও বিলম্বে যাকাত" দেয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (61 points)
তাহলে পাওনা টাকার ক্ষেত্রে যখন টাকাটা পাবো এটা কিভাবে হিসাব করবো? যখন থেকে পাওনা তখন থেকে বছর হিসেব করবো নাকি আমার নেসাবের যে সময় সেটার সাথে হিসাব করবো। আর যদি ১৪মাস বা ১৬মাস পর পাই এক্ষেত্রে কিভাবে সেই টাকার যাকাত দিব? 
by (559,140 points)
মনে করুন ২০২৩ সালের রমজানে আপনার উপর যাকাত ফরজ, এক্ষেত্রে ঐ টাকা যদি আপনি ২০২৪ সালের রমজানে পান,সেক্ষেত্রে ঐ টাকার দুই বছরের যাকাত দিতে হবে।

যদি ২০২৪ সালের রমজানের আগেই পান,সেক্ষেত্রে এক বছরের যাকাত দিতে হবে।
পুনরায় রমজানের মধ্যে নতুন ভাবে যাকাত দিতে হবে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...