জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হারাম মাল থেকে দাওয়াত/হাদীয়া গ্রহন বিষয়ের ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতি হল-যদি তার ইনকাম হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম মাল বেশি হয়, তাহলে তা থেকে দাওয়াত/হাদীয়া গ্রহন জায়েজ নয়। তবে যদি হারাম মাল কম হয় তাহলে দাওয়াত/হাদীয়া গ্রহন জায়েজ হবে।
ولا يجوز قبول هدية أمراء الجور لأن الغالب في مالهم الحرمة إلا إذا علم أن أكثر ماله حلال بأن كان صاحب تجارة أو زرع فلا بأس به لأن أموال الناس لا تخلو عن قليل حرام فالمعتبر الغالب (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الثاني عشر في الهدايا والضيافات-5/342)
অনুবাদ-জালেম বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নয়। কেননা তার অধিকাংশ মাল হয় হারাম। তবে যদি জানা যায় যে, তার অধিকাংশ মাল হালাল, এ হিসেবে যে সে ব্যাবসায়ী বা জমিদার, তাহলে তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করাতে সমস্যা নেই। কেননা সাধারণত মানুষের মাল অল্প হারাম থেকে মুক্ত নয়। তাই এতে আধিক্যের বিষয়টি বিবেচিত হবে। { ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২}
রাসূল সা. বলেন:
«إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) [المؤمنون: 51] وَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ) [البقرة: 172] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟»
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।’’ আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।’’ অতঃপর রাসূল সা. এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছেঃ হে আমার প্রভূ! হে আমার প্রভূ! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?’
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১০১৫)
ইবন আব্বাস রা.বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেনঃ
«كل جسد نبت من سحت فالنار أولى به »
‘‘আর যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে উঠে তার জন্য দোযখের আগুনই উত্তম।’’
(তাবারানী)
কাব ইবন উজরাহ রা. রাসূলে কারীম সা. থেকে বর্ণনা করেন:
«لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِحَرَامٍ»
‘‘যে শরীর হারাম পেয়ে হরষ্ট পুষ্ট হয়েছে, তা জান্নাতে যাবে না।’’
মুসনাদ আবী ইয়া‘লা, খ.১ পৃ. ৮৪।
,
★সুতরাং হারাম ভাবে অর্জিত খানা খাওয়া/সেই দাওয়াত খাওয়া কোনোভাবেই জায়েজ নেই।
সেই প্রভাব অবশ্যই তার ইবাদত,তাকওয়ায় প্রভাব ফেলবে।
,
সুতরাং কাহারো ইনকাম হারাম সম্পদ হলে অবশ্যই সেই ব্যাক্তির দাওয়াত খাওয়া যাবেনা।
আর যদি ইনকাম হালালও থাকে,হালালই যদি বেশি থাকে,তাহলে সেই বাড়িতে যদিও দাওয়াত খাওয়া জায়েয আছে,তবে তাকওয়ার খাতিরে না খাওয়াই ভালো।
,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কাহারো ইনকাম হারাম হওয়ার কারনে সেই বাড়িগুলোতে দাওয়াত না খাওয়ার ইচ্ছা করা জায়েজ আছে।
,
,
বেনামাজির রান্না করা খাবার খাওয়া নাজায়েজ নয়,বরং জায়েজ আছে।
তবে কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে যদি তাদেরকে নামাজের দাওয়াত দেওয়া উদ্দেশ্য থাকে,তাহলে তার রান্না করা খাবার খাবে।
আর যদি সেই উদ্দেশ্য না হয়,তাহলে তাকওয়ার খাতিরে না খাওয়াই ভালো।
কারন এক্ষেত্রে আমলের উচ্চতর লেভেলে পৌছাতে সেটা বাধাদান কারী হতে পারে।
,
তিরমিজ শরীফ এবং আবু দাউদ শরীফে একটি হাদীস এসেছেঃ
عن عبداللہ بن مسعود قال قال رسول اللّٰہ ﷺ لما وقعت بنو اسرائیل فی المعاصی نھتھم علماؤھم فلم ینتھو افجالسوھم فی مجالسھم واکلوھم وشاربوھم فضرب اللّٰہ قلوب بعضھم ببعض فلعنھم علی لسان داؤد عیسیٰ بن مریم ذلک بما عصوا وکانوا یعتدون الحدیث رواہ الترمذی وابوداؤد۔
সারমর্মঃ বনী ইসরায়েলের নাফরমানদের সাথে সেই যামানার উলামায়ে কেরামগন খানা পিনা শুরু করেছিলেন,আল্লাহ তায়ালা হযরত দাউদ আঃ এর মাধ্যমে সেই কাজের প্রতি লা'নত করেছেন।
,
তবে কিছু উলামায়ে কেরামগন তাদের বাসায় খাওয়াকে অপছন্দ করেননি,তারা বলেছেন যে সব সময় দ্বীনের দাওয়াতের উদ্দেশ্য খাবে।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি বেনামাজি হওয়ার কারনে নিজ আত্মিয় স্বজনদের বাসায় খানা খাওয়া বাদ দেওয়া যাবেনা।
মাঝে মাঝে বাদ দেওয়া যাবে,তবে কবারে বাদ দেওয়া যাবেনা।
,
কারন এতে আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে।
যেটি নাজায়েজ।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ "
জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
বুখারী (অধ্যায় : আদব, হাঃ ৫৯৮৪), মুসলিম (অধ্যায় : সদ্ব্যবহার)।
وَعَنْ عَبْدُ اللهِ بْنِ أَبِىْ أَوْفٰى قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:لَا تَنْزِلُ الرَّحْمَةُ عَلٰى قَوْمٍ فِيهِمْ قَاطِعُ الرَّحِمِ
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সে সম্প্রদায়ের ওপর আল্লাহ তা‘আলার রহমত নাযিল হবে না, যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।
(মিশকাতুল মাসাবিহ ৪৯৩১,আল আদাবুল মুফরাদ ৬৩,)