আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
169 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (45 points)
আমাদের কলেজে বক্ততা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে একটা বিষয়ে পাচ মিনিট বলতে হয়।মুলত কে কতটা সুন্দরভাবে বলতে পারলো,এবং কতটা রুচিসম্মত কথা বলতে পারলো সেটা দেখা হয়।এই পাচ মিনিটে আমরা মাঝে মাঝে এমন সব ছোটবেলার বা দৈনন্দিন জীবনের কাহিনী বলি যেগুলো আসলে বাস্তবে ঘটেনি।এটা বিচারক এবং স্রোতারাও জানে যে আমরা অধিকাংশ কাহিনী বানিয়ে বলি।এখানে কার কাহিনী কতো সুন্দর হলো এবং কত সুন্দর করে বলতে পারলো সেটা দেখা হয়,কাহিমীর সত্যতার ওপর কোন নাম্বার নেই।এবং কোথাও বলাও নেই কাহিনী বানানো যাবে না।আমরা বানিয়ে বলি,কিন্তু বক্তৃতার মাঝে উল্লেখ করি না যে এটা বানানো(যদিও সবাই জানে যে অেক কাহিনী আমার মনগড়া)।এভাবে কম্পিটিশনে বললে কি মিথ্যা বলার গুনাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (589,140 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
তিন অবস্থায় মিথ্যা বলা জায়েয।
যেমনঃ-হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাঃ থেকে বর্ণিত,
 ﻋَﻦْ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀَ ﺑِﻨْﺖِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﻟِﻴُﺮْﺿِﻴَﻬَﺎ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﻟِﻴُﺼْﻠِﺢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ) 
তরজমাঃ
নবীজী সাঃ বলেনঃ
তিনস্থান ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা জায়েয নয়,
১/স্ত্রীর সাথে ভালবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে।
২/যুদ্ধের ময়দানে কাফিরের সাথে যুদ্ধ বিষয়ে।
৩/দু-ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করতে।
তিরমিযি-১৯৩৯,আবু-দাউদ-৪৯২১।

উম্মে কুলছুম রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছেন,
ﻋﻦ ﺃُﻡَّ ﻛُﻠْﺜُﻮﻡٍ ﺑِﻨْﺖِ ﻋُﻘْﺒَﺔَ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻌَﻴْﻂٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ، ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺳَﻤِﻌَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ( ﻟَﻴْﺲَ ﺍﻟْﻜَﺬَّﺍﺏُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺼْﻠِﺢُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻭَﻳَﻨْﻤِﻲ ﺧَﻴْﺮًﺍ ) . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺷِﻬَﺎﺏٍ : ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﺳْﻤَﻊْ ﻳُﺮَﺧَّﺺُ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣِﻤَّﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻛَﺬِﺏٌ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﺍﻟْﺤَﺮْﺏُ ، ﻭَﺍﻟْﺈِﺻْﻠَﺎﺡُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ، ﻭَﺣَﺪِﻳﺚُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﻭَﺣَﺪِﻳﺚُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﺯَﻭْﺟَﻬَﺎ
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন-যে ব্যক্তি দু'জনের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের মীমাংসার স্বার্থে মিথ্যা বলে সে মিথ্যুক নয়।সে একজনের নিকট এসে উত্তম উত্তম জিনিষ বলে,এবং অন্যর নিকট গিয়ে উত্তম জিনিষ পৌছায়। ইবনে শিহাব যুহরী রাহ বলেন,মানুষের মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারে তিন জিনিষে রুখসত রয়েছে,(১)যুদ্ধের সময়ে(২) দু'জনের মধ্যে মীমাংসা করতে,(৩) স্বামী-স্ত্রী পরস্পর ভালবাসা-মহব্বতকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে।(সহীহ মুসলিম-২০৫৬)

ইমাম নববী রাহ শরহে মুসলিম 'আল-মিনহাজ' কিতাবে বলেন,
" ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻛَﺬِﺑﻪ ﻟِﺰَﻭْﺟَﺘِﻪِ ﻭَﻛَﺬِﺑﻬَﺎ ﻟَﻪُ : ﻓَﺎﻟْﻤُﺮَﺍﺩ ﺑِﻪِ ﻓِﻲ ﺇِﻇْﻬَﺎﺭ ﺍﻟْﻮُﺩّ ، ﻭَﺍﻟْﻮَﻋْﺪ ﺑِﻤَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻠْﺰَﻡ ، ﻭَﻧَﺤْﻮ ﺫَﻟِﻚَ ؛ ﻓَﺄَﻣَّﺎ ﺍﻟْﻤُﺨَﺎﺩَﻋَﺔ ﻓِﻲ ﻣَﻨْﻊ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﻭْ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ , ﺃَﻭْ ﺃَﺧْﺬ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﺃَﻭْ ﻟَﻬَﺎ : ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﺮَﺍﻡ ﺑِﺈِﺟْﻤَﺎﻉِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ . ﻭَﺍَﻟﻠَّﻪ ﺃَﻋْﻠَﻢ "
ভাবার্থঃস্বামী-স্ত্রী পরস্পর মিথ্যা বলা দ্বারা উদ্দেশ্য হল,ভালবাসা প্রকাশের মধ্যে এবং ঐ সমস্ত প্রতিজ্ঞার ক্ষেত্রে যা পূর্ণ করা অত্যাবশ্যকীয় হয় না।তবে মিথ্যা বলার মাধ্যমে কাউকে ধোকা দেওয়া অথবা কারো মাল ছিনিয়ে নেয়া সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।(শরহে মুসলিম-নববী-১৬/১৪৮)
 
কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম মিথ্যা বলাকে হাদীসে বর্ণিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন।কিন্ত বিদগ্ধ গবেষক উলামায়ে কেরাম ঐ সমস্ত বিষয়ের মধ্যেও অনুমিত প্রদান করেছেন যেথায় অন্যর ক্ষতি ব্যতীত নিজের মঙ্গল নিহিত রয়েছে।

আল্লামা ইবনূল কাইয়ূম রাহ বলেনঃ
ﻳﺠﻮﺯ ﻛﺬﺏ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ، ﻭﻋﻠﻰ ﻏﻴﺮﻩ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺘﻀﻤﻦ ﺿﺮﺭ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻐﻴﺮ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﺘﻮﺻﻞ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ ﺇﻟﻰ ﺣﻘﻪ،
একমাত্র মিথ্যার মাধ্যমে হক্ব(অধিকার রক্ষা)পর্যন্ত পৌছা নির্দিষ্ট হলে নিজের উপর বা অন্যর উপর মিথ্যা বলা জায়েয যখন এতে অন্যর কোনোপ্রকার ক্ষতি হয় হবে না।(যাদুল মা'আদ-২/১৪৫)


সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রতিষ্টান কর্তৃক যেহেতু বাস্তব জীবনের ঘটনা বর্ণনা করার উপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই,তাই বুঝাগেল প্রতিষ্টান জানে যে, ছাত্ররা মিথ্যা কল্পকাহিনী বলবে।

সুতরাং বলা যায় যে,কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক এরকম মিথ্যা সম্পর্কীয় কোনো অনুষ্টানের আয়োজন করা কখনো অনুমোদিত হবে না।বরং মিথ্যা সম্পর্কিত অনুষ্টানের আয়োজন সর্বদাই নিন্দনীয় হবে। তবে যদি কোনো প্রতিষ্টান এরকম আয়োজন করে নেয়,এবং সেই অনুষ্টানের সকল শিক্ষার্থীর উপস্থিতিকে বাধ্যতামূলক করে দেয়,এবং এর উপর মার্ক থাকে,তাহলে শিক্ষার স্বার্থে এমন অবাস্তব কল্পকাহিনি উপস্থাপন করার অনুমোদন রয়েছে।তবে ভিন্ন সুযোগ থাকলে বা অনুষ্টানে যুক্ত হওয়াটা অপশনাল হলে,এমন প্রতিযোগিতায় অঙশগ্রহণ করাটা কখনো জায়েয হবে না।এবং কল্পকাহিনী বানিয়ে বলাটাও জায়েয হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...