জবাব
(০১)
গায়রে মাহরামের সামনে মহিলাদের পুরো শরীর সতর হওয়ার কারনে পুরো শরীরের পর্দা করতে হবে।
চোখও এর মধ্যে শামিল,তবে এটি ঢাকা সমস্যাকর হওয়াতে খোলা রাখা যাবে।
তবে সর্বদায় দৃষ্টি নিচের দিকে রাখতে হবে।
তবে কোথাও ফেতনার আশংকা দেখা দিলে সেখান থেকে দ্রুত চলে যাবে।
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
বিস্তারিত জানুনঃ
(০২)
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,হযরত আবু হুরায়রা রাযি বলেন,
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ النُّطْقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ أَوْ يُكَذِّبُهُ»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলিয়াছেন,“দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”(সহীহ মুসলিম-২৬৫৭)
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে গুনাহ হবে।
শরীয়তের বিধান হলো মযি যেইভাবেই বের হোক,উত্তেজনা থাকুক বা না থাকুক,অসুস্থতা হোক, মযি বের হলে গোসল ফরয হয় না।
তবে মযি নাজাসতে গালিযা।সুতরাং শরীর বা কাপড়ে লাগলে এবং তা এক দিরহামের বেশী পরিমাণ(৫টাকার সিক্কা,পয়সা পরিমান) হলে, কাপড়কে ধৌত করে ওজু করে নিলেই পবিত্রতা অর্জিত হবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ، حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ، عَنِ الْمُنْذِرِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: كُنْتُ رَجُلًا مَذَّاءً فَكُنْتُ أَسْتَحْيِي أَنْ أَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَكَانِ ابْنَتِهِ، فَأَمَرْتُ الْمِقْدَادَ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ: " يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ
আলী (রাঃ) বলেন, আমার পুরুষাঙ্গ দিয়ে ঘন ঘন মযি (লালার মত তরল পদাৰ্থ) নির্গত হতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা পেতাম। কেননা আমার কাছে তাঁর মেয়ে রয়েছে। তাই মিকদাদকে জিজ্ঞাসা করতে অনুরোধ করলাম। সে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ওযূ করবে। [মুসনাদে আহমাদ-৬১৮, ৮১১, ১০১০, ১১৮২]
,
حَدَّثَنَا عَبِيدَةُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ أَبِي زِيَادٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: كُنْتُ رَجُلًا مَذَّاءً، فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَوْ سُئِلَ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ: فِي الْمَذْيِ الْوُضُوءُ، وَفِي الْمَنِيِّ الْغُسْلُ -
আলী (রাঃ) বলেন, আমার খুব বেশি মযি ঝরতো। বিষয়টা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালাম। তিনি বললেঃ মযি ঝরলে ওযূ এবং বীর্যপাতে গোসল করতে হয়।
[মুসনাদে আহমাদ ৮৬৯,হাদীস নং ৬৬২ দ্রষ্টব্য।]
,
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এটি মযি হলে অযু ফরজ হবে।
স্থান পরিস্কার করে অযু করতে হবে।
,
আর যদি মনি,বীর্য বের হয়,তাহলে গোসল ফরজ হবে। সেটা সাধারণত মযিই হবে,তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে অযু ফরজ হবে।
,
মনি মযির পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
,
(০৩)
তিন-চার বছর বয়সী শিশুর উপর সতরের বিষয় নেই ঠিকই, কিন্তু এজন্য প্রয়োজন ছাড়াও তাদেরকে উলঙ্গ করে রাখতে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। হাঁ, এক-দেড় বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এতে তেমন একটা দোষ নেই। কিন্তু এর চেয়ে বেশি বয়সী বাচ্চার প্রয়োজন ছাড়া সতর খুলে রাখা ঠিক নয়।
আর বাচ্চার বয়স চার বা তার বেশি হলে তার সামনে ও পিছনের সতরের অংশ ঢেকে রাখা জরুরি। এ বয়সের পরও তাদেরকে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন রাখা গুনাহ।
এরপর বাচ্চার শারীরিক গড়ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে এমন বয়সে উপনীত হলে সতরসহ আশপাশের অঙ্গ যথা উরু ইত্যাদি ঢেকে রাখা জরুরি। এবয়স থেকেই বাচ্চাকে পূর্ণ পোশাক যথা পায়জামা পরানো ভালো। যেন সাত বছর থেকেই পূর্ণ পোশাকে শিশু অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর নয়-দশ বছর থেকে বাচ্চার সতর বালেগদের মতোই, একই হুকুম।
-রদ্দুল মুহতার ১/৪০৭-৪০৮; ইলাউস্ সুনান ২/১৭১-১৭২
★সাত বছর বয়স থেকেই মেয়ে সন্তানদের পর্দা পালন করতে বলতে হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে
আমর ইবনু শুআইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি আমরের দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনু আম্র) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ».
‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)
,
সুতরাং পর্দাও যেহেতু ফরজ বিধান,তাই ০৭ বছর থেকেই প্রাক্টিস হিসেবে তাদেরকে পর্দা করার কথা বলতে হবে।
আরো ছোট থেকেই শিখাইতে হবে।
প্রচলন অনুযায়ী পর্দার সময় স্রাব চালু হওয়াকেই ধরে নেওয়া হয়। এর আগে পর পুরুষের সামনে বে-পর্দা হওয়াকে গুনাহ মনে করা হয় না। অথচ মেয়েরা পরিপূর্ণ বালেগ হওয়ার আগে যখন শরীরের বাহ্যিক দিকগুলো বালেগদের মত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তখন থেকেই তাদের উপর পর্দা করা জরুরি হয়ে যায়। এ পর্যায়ে পর্দার বিধানটা গুনাহ ও ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্যে। ফিকাহবিদগণ নয় বছর বয়স থেকেই শরীরের গড়ন অনুযায়ী এ হুকুম আরোপিত হতে পারে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
,
★সুতরাং সাত বছর বয়সে পর্দার হুকুম করবে,আর নয় বছর বয়স থেকে বাধ্যতামূলক পর্দা পালন করাতে হবে।
নয় বছর পরেও যদি পর্দা না করানো হয়,তাহলে বাবা মা গুনাহগার হবেন।