জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
★কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানার জন্য মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব দাঃবাঃ এর লিখিত গ্রন্থ আহকামে জিন্দেগী,মাওলানা মনসুরুল হক সাহেবের লিখিত ইসলাহী জিন্দেগী পড়তে পারেন।
ইমাম আয যাহাবী এর লিখিত কবীরা গুনাহ,মহা পাপ,বড় গুনাহ বই গুলো পড়তে পারেন।
,
কবীরা গুনাহ অনেকগুলো রয়েছে।
★হারাম মাল ভক্ষন করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَدْخُلُ الْجَنّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ.
অর্থাৎ যে দেহের বৃদ্ধি হারাম দ্বারা হয় সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৭২৩
★কাউকে নিয়ে উপহাস করা,ঠাট্রা করা।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا یَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُوْنُوْا خَیْرًا مِّنْهُمْ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُنَّ خَیْرًا مِّنْهُنَّ وَ لَا تَلْمِزُوْا اَنْفُسَكُمْ وَ لَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِیْمَانِ وَ مَنْ لَّمْ یَتُبْ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ.
হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই যালেম। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১১
★গালী দেওয়া, গীবত করা,অন্যের দোষ চর্চা করা।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ، وَلَا اللَّعَّانِ، وَلَا بِالْفَاحِشِ، وَلَا بِالْبَذِيءِ.
মুমিন (অন্যের) দোষ চর্চাকারী হয় না, লানতকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না (বাজে কথা বলে না)। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৭৭
ইমাম যাহাবী রাহ. ‘আলকাবাইর’ গ্রন্থে কবীরা গুনাহ বিষয়ক আয়াত ও হাদীসসমূহ সংকলন করেছেন। যে সকল পাপকে কুরআন বা হাদীসে বড় পাপ বা কঠিন শাস্তি, আযাব, গজব বা অভিশাপের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি সেগুলির তালিকা প্রদান করেছেন।
(মাওলানা আঃ মালেক সাহেব দাঃবাঃ সেগুলো সম্পর্কে আর্টিক্যাল লিখেছেন।)
হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর অধিকার বিনষ্টকারী কবীরা গুনাহসমূহ
★★ঈমান বিনষ্টকারী কবীরা গুনাহসমূহ
১. শিরক
* যেসব বিষয় ও গুণাবলি একমাত্র আল্লাহ তাআলার বৈশিষ্ট্য এবং যেসব বিষয় একমাত্র আল্লাহ তাআলার হক তাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করা।
* আল্লাহ ছাড়া কাউকে শরীয়ত প্রদানের অধিকারী মনে করা, হালাল-হারাম নির্ধারণের অধিকারী মনে করা। শরীয়তের কোনো বিধান রহিত করার ক্ষমতাবান মনে করা।
* উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের কোনো বিষয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া। যেমন, কোনো মাযারওয়ালার কাছে বা কোনো পীরের কাছে সন্তান প্রার্থনা করা, ধনাঢ্যতা চাওয়া, রোগমুক্তি প্রার্থনা করা।
* কবরে বা মাযারে তাওয়াফ করা।
* কবরে বা মাযারে সিজদা করা।
* আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য মান্নত করা।
* আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য পশু জবাই করা।
* ভাষ্কর্য তৈরি করা বা স্থাপন করা ইত্যাদি।
২. কুফর
* ঈমান গ্রহণ না করা। ইসলাম ধর্মকে অস্বীকার করা। ইসলামী শরীয়তকে অস্বীকার করা। কুরআন-সুন্নাহকে অস্বীকার করা। শরীয়তের যে কোনো অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করা। ইসলামের যে কোনো নিদর্শন নিয়ে উপহাস করা। রাসূলের অবমাননা করা। শরীয়তের যে কোনো নিদর্শনের অবমাননা করা। খতমে নবুওত অস্বীকার করা। নবুওতের কোনো মিথ্যা দাবিদারকে বিশ্বাস করা, তাকে মুজাদ্দিদ বা মাহদী বা মাসীহ-এর সদৃশ মনে করা।
* কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়ত-বিরোধী আইন প্রণয়ন করা।
* শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দন্ড বিধি অস্বীকার করা।
* কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়তের আইনী দিককে অস্বীকার করা।
* কুরআন সুন্নাহ্র স্পষ্ট বিপরীত আইনকে অনুসরণীয় মনে করা।
* ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ মতবাদে বিশ্বাস করা।
* ইসলামী শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক কোনো চেতনা, সংস্কৃতি, মতবাদ, ভাবধারা পোষণ, লালন বা প্রসার করা।
* যেসব বিষয় অমুসলিমদের ধর্মীয় প্রতীক (বিশ্বাসগত হোক বা কর্মগত) সেসব বিষয়ে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা।
৩. নিফাক
ক. আকীদাগত নিফাক।
খ. কর্মগত নিফাক।
* কুরআন সুন্নাহ্র বিপরীত আইন অনুযায়ী ফয়সালা করা।
* ইলমে দ্বীনের ধারক-বাহক আলেমগণ বা দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র-মক্তব-মাদরাসার প্রতি বিদ্বেষ রাখা।
৪. আকীদাগত বিদআত
৫. আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে নির্ভয় থাকা।
৬. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া।
৭. তাকদীরে অবিশ্বাস করা।
৮. গণক বা জ্যোতিষীর কথা সত্য মনে করা।
৯. মক্কার হারামে কোনো প্রকার অন্যায় করা।
১০. যাদু শিক্ষা বা ব্যবহার করা।
১১. অশুভ, অমঙ্গল বা অযাত্রায় বিশ্বাস করা।
১২. নিজের জীবন, সম্পদ ও সকল মানুষের মহব্বতকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহব্বতের চেয়ে প্রাধান্য দেয়া।
১৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীস বলা।
১৪. নিজের পছন্দে-অপছন্দে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত ও শরীয়তের অনুগত না হওয়া।
১৫. ফরয সালাত পরিত্যাগ করা।
১৬. যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকা।
১৭. ওযর ছাড়া রমযানে সিয়াম পালনে অবহেলা করা।
১৮. ওযর ছাড়া জুমার সালাত পরিত্যাগ করা।
১৯. সুযোগ থাকা সত্তে¡ও হজ্ব আদায় না করা।
এগুলোর অধিকাংশই ঈমানকে মূল থেকে বিনষ্ট করে দেয়। আর কোনো কোনোটি এমন না হলেও সেগুলো ঈমানকে প্রায় বিনষ্ট করে দেয়।
★ হারাম খাদ্য ও পানীয়
১. মদ পান করা।
২. মৃত প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা।
৩. হারাম প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা।
৪. শুকরের গোশত ভক্ষণ করা।
৫. স্বর্ণ বা রৌপ্যের পাত্রে পান করা।
৬. প্রবাহিত রক্ত পান করা।
★ পবিত্রতা ও অন্যান্য অভ্যাস বিষয়ক
১. পেশাব থেকে পবিত্র না হওয়া।
২. মিথ্যা বলার অভ্যাস ।
৩. কৃত্রিম চুল লাগানো ।
৪. শরীরে খোদাই করে উল্কি লাগানো।
৫. পুরুষের জন্য-
* মেয়েলি পোশাক বা চালচলন বা আচরণ করা।
* টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পোশাক পরা।
* সোনা ও রেশম ব্যবহার।
* দাড়ি না রাখা।
৬. মেয়েদের জন্য-
* পুরুষালি পোশাক বা আচরণ করা।
* সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে বাইরে যাওয়া।
* মাথার চুল বা শরীরের কোনো অংশ অনাবৃত রেখে বাইরে যাওয়া।
* সুগন্ধি মেখে বাইরে যাওয়া।
★অন্তর বা মনের পাপ
১. অহংকার করা।
২. নিজেকে বড় ভাবা।
৩. কোন মানুষকে হেয় করা বা ছোট ভাবা।
৪. হক অস্বীকার করা বা হক মেনে নিতে টালবাহানা করা।
৫. আসাবিয়্যাত তথা অন্যায় পক্ষপাত।
৬. উজব তথা আত্মগুণমুগ্ধতা।
৭. রিয়া ও প্রদর্শনেচ্ছা।
৮. হিংসা।
৯. ক্রোধ ।
১০. প্রশংসা ও সম্মানের লোভ।
১১. সম্পদের লোভ।
১২. কৃপণতা।
১৩. নিষ্ঠুরতা।
১৪. ইলম গোপন করা।
১৫. দ্বীনী ইলম পার্থিব উদ্দেশ্যে শিক্ষা করা।
অহংকার, হিংসা, কাউকে হেয় ভাবা, কৃপণতা ইত্যাদি ব্যক্তিগত কবীরা গুনাহ হলেও এ ব্যাধি মানুষকে বান্দাহ্র হক নষ্ট বা ক্ষতিকারী অনেক পাপের দিকে প্ররোচিত করে। এগুলোর অভিব্যক্তি ব্যক্তির বাইরে প্রকাশিত হয়ে অন্যদের কষ্ট দেয়।
★হাক্কুল ইবাদ তথা সৃষ্টির অধিকার সংক্রান্ত কবীরা গুনাহ
১. আত্মহত্যা করা।
২. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া বা তাদের কষ্ট দেয়া।
৩. সন্তান ও অধীনস্তদেরকে দ্বীনী শিক্ষা না দেয়া ও দ্বীনী তরবিয়ত তথা দ্বীনী মন-মানস ও রুচি-প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা না নেয়া।
৪. অন্যায় দেখেও সাধ্যমতো প্রতিকার ও প্রতিবাদ না করা।
৫. সুদ নেয়া, দেয়া, সুদ লেখা বা সুদের সাক্ষী হওয়া।
৬. ঘুষ নেয়া, দেয়া বা ঘুষ আদান-প্রদানের মধ্যস্থতা করা।
৭. যুলুম করা, আল্লাহর যে কোনো মাখলুকের প্রতি যে কোনো প্রকারের যুলুম করা। কারো জান, মাল বা মান-সম্মানে অন্যায় আঘাত করা।
৮. ওজন, মাপ বা দ্রব্যে কম দেয়া বা ভেজাল দেয়া।
৯. ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা।
১০. জুয়া খেলা।
১১. কারো জমি বা সম্পদ আত্মসাত করা।
১২. মীরাস বণ্টন না করে নিজে তা দখল করে রাখা।
১৩. জমির সীমানা পরিবর্তন করা।
১৪. রক্তের আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা।
১৫. আত্মীয়তার হক নষ্ট করা।
১৬. পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা।
১৭. বঞ্চিত ও দরিদ্রদেরকে খাদ্য প্রদানে ও সাহায্য দানে উৎসাহ না দেয়া।
১৮. কথাবার্তায় সংযত না হওয়া। যা কিছু শোনা হয় বিচার বিশ্লেষণ ও সত্যাসত্য নির্ধারণ না করে তা বলা।
১৯. মিথ্যা শপথ করা।
২০. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
২১. প্রয়োজনের সময় সত্য সাক্ষ্য গোপন করা।
২২. প্রয়োজনীয় পণ্যের অন্যায় মজুতদারী।
২৩. ওয়াদা ভঙ্গ করা।
২৪. আমানতের খেয়ানত এবং সকল প্রকারের দুর্নীতি।
,