আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,536 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (63 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম,
আমার বিয়ে হল কিছুদিন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে মেয়েদের তাদের বাবা মাকে দেখা শোনার ব্যাপারে শরীয় সীমারেখা প্রসংগে।
আমার বড় ভাই আছে। উনার নিজের পরিবার নিয়ে উনি উনার কর্মস্থলের নিকটে আলাদা থাকেন, স্ত্রী সন্তান নিয়ে।
আমার ভাই ভাবী দুজনেই চাকরী করেন। আমি পরিপূর্ন পর্দা করার চেষ্টা করি। যার কারনে অনার্স কম্পলিট করেও চাকরী বাকরীর চিন্তা করছি না। স্বামী যা কামাই করেন তা দিয়েই চলতে চাচ্ছি।
কিন্তু আমার ভাবী খুব চাপ দিচ্ছেন এ ব্যাপারে। উনার কথা হচ্ছে, ছেলেরা তাদের স্ত্রী সন্তানের ভরন পোষন দিবে, আর মেয়েরা দিবে তাদের মা বাবা কে। ভাবীর ভাইয়েরা ভাবীর বাবা মা কে তেমন কিছু দেন না, অল্পকিছু দেন। কিন্তু উনি উনার আয়ের প্রায় সবটাই দেন। যার ফলে আমার ভাই তার নিজের সংসারে খরচ করে বাবা মাকে আর কিছুই দিতে পারছে না তেমন, অল্পকিছু বাদে। এখন ভাবী এবং ভাই চাপ দিচ্ছে আমাকে চাকরী করতে, এবং বাবা মাকে দিতে। এটা আমার জন্য শরীয়ভাবে ফরয?
আমার ভাই ভাবী সবসময় শুধু বলে, আমাকে পড়ালেখা করাতে টাকা খরচ হইছে, এখন আমার উচিত চাকরী করে বাবা মাকে দেওয়া। এখন আমার বাবা মাকে যদি আমার দেওয়া জরুরী ই হয়, তাইলে আমি পর্দার কারনে বাইরে চাকরি করতে আগ্রহী নই বিধায় সেই টাকাটা আমার স্বামী তার ইনকাম থেকে দিতে হবে। উনারো বাবা মা আছেন। আর উনার কোন বোন নেই, যে টাকা ইনকাম করে দিবে আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে।
এখন বাচ্চা নিলে চাকরীতে জয়ন করতে পারব না বলে আমাকে বাচ্চা না নেওয়ার জন্য আমার ফেমিলি থেকে অনেক চাপ দিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে আমার স্বামীর চাকরির ও তেমন একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। তাই এটাকে ব্যবহার করেও আমার ফেমিলি থেকে বলছে যে চাকরী করে জামাই এর সাহায্য কর, আর নিজের বাবা মাকে দেও। তোমাকে পড়াতে তো কম খরচ হল না।
এখন আমার কি উচিত বাইরে চাকরী করে বাবা মাকে টাকা দেওয়া, যেহেতু উনারা আমার পিছে অনেক খরচ করেছেন, আর আমার ভাই ও উনাদের কিছু দিতে পারছেন না?

উল্লেখ্যঃ আমার বাবা এখন চাকুরীরত আছেন। সরকারী চাকরী। তবে চাকুরীর বেতনের প্রায় সবটাই যায় কিস্তি পরিশোধে, যা আমার ভাইকে প্রাইভেটে পড়ানোর সময় লোন নেওয়া হয়েছিল। আর আমি সরকারীতে পড়ার দরুন আমাকে পড়াতে কোন ঋন করত হয় নি। টাকার অভাবে না খেয়ে আছে এমন না, তবে টাকা দিলে জায়গা জমি কিনা যাবে এমন একটা চিন্তা, আর আমাকে পড়াতে খরচ হয়েছে তাই দিতে হবে, এমনটাই বলছে।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

পরিবারের জন্য খরচ করা,মা বাবার ভরনপোণের জন্য খরচ করা উত্তম কাজ।
মা বাবা নিজেদের ভরনপোষণের ক্ষেত্রে অসমর্থ হলে সন্তানদের জন্য তাদের ভরনপোষণের খরচ দেওয়া শুধু শরীয়তেই নয়  এটা মানবতার দিক লক্ষ্য করেও জরুরি।

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে।’ (মুসলিম : হাদিস ৯৯৪) 

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (বুখারি : হাদিস ৪০০৬)

মা-বাবা  ভরণ-পোষণের অধিকারী হওয়ার জন্য শর্ত হলো দুটি।
★এক. তাঁরা এমন দরিদ্র হতে হবে যে তাঁরা নিজের মালিকানার সম্পদে চলতে অক্ষম। এখন কথা হলো, যদি তাঁরা উপার্জনের শক্তি রাখে, তাহলেও তাঁদের সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে হবে কি না? এ ক্ষেত্রে বিধান হলো, তাঁদের উপার্জনের শক্তি থাকলেও যদি তাঁদের কাছে চলার মতো নগদ টাকাকড়ি না থাকে, তাঁদের সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে হবে। তাদের সন্তানরা এ কথা বলতে পারবে না যে আপনি তো উপার্জনে সক্ষম, আপনি নিজে উপার্জন করে চলুন। তবে যদি তাঁরা ধনী হন, তথা তাঁদের মালিকানায় নগদ এমন সম্পত্তি থাকে, যা দ্বারা তাঁরা শান্তিতে কালাতিপাত করতে পারেন, তাহলে সন্তানদের ওপর তাঁদের ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়।

★দুই. সন্তান-সন্ততি সামর্থ্যবান ও উপার্জনে সক্ষম হতে হবে। তাদের সামর্থ্যবান হওয়ার পরিমাণ হলো, তাদের মালিকানার সম্পত্তি বা উপার্জনকৃত আয়ের দ্বারা নিজের ও নিজের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির স্বাভাবিক ভরণ-পোষণের পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকতে হবে। অন্যথায় তাদের উপার্জনকৃত আয়ের মধ্য থেকে যদি তার নিজের ও স্ত্রী বা সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্পদ না থাকে, তাহলে মা-বাবা ও ঊর্ধ্বতন আত্মীয়ের ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। যদিও এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো, কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণের খরচ চালিয়ে যাবে। (তাবঈনুল হাকায়েক : ৩/৬৪, রদ্দুল মুহতার : ২/৬৭৮)

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খরচের ব্যাপারে তুমি আগে নিজের প্রয়োজনীয় খরচের দায়িত্বশীল, তারপর তোমার স্ত্রীর, তারপর সামর্থ্য হলে তোমার নিকটাত্মীয়ের খরচ তোমার ওপর বর্তাবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৯৯৭)

সন্তান তার উপার্জনকৃত আয় থেকে নিজের, স্ত্রীর ও সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণের পর অতিরিক্ত সম্পদ না থাকলে যদিও মা-বাবাকে ভিন্নভাবে ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়, কিন্তু অভাবগ্রস্ত ও উপার্জনে অক্ষম মা-বাবাকে ছেলে নিজের দারিদ্র্য সত্ত্বেও নিজের সংসারের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে এবং কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণ চালিয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৪৬৫)

সমর্থ থাকা সত্ত্বেও সন্তানরা অভাবগ্রস্ত মা-বাবার খরচ না দিলে গুনাহগার হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তানরা স্বেচ্ছায় না দিলে অভাবগ্রস্ত মাতা-পিতা ছেলে-মেয়ের সম্পদ থেকে প্রয়োজন পরিমাণ তাদের অনুমতি ছাড়াও নিতে পারবেন। তবে মা-বাবা বিত্তবান হলে অনুমতি ছাড়া ছেলে-মেয়ের সম্পদ থেকে নেওয়া বৈধ হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫৬৪)

মা-বাবার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব উপরোক্ত দুই শর্তে সব ছেলে-মেয়ের ওপর ওয়াজিব। এ দায়িত্ব সব সাবালক সামর্থ্যবান ছেলে-মেয়ের ওপর সমভাবে বর্তাবে। এ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, তাই কোনো মেয়ে যদি সামর্থ্যবান ও বিত্তবান হয়, তাহলে ছেলেদের মতো সমভাবে তার ওপরও মা-বাবার খরচের দায়িত্ব বর্তাবে। কেননা মা-বাবার জীবিত অবস্থায় সন্তানের জন্য খরচ ও উপহারে মেয়েরাও তাদের ভাইদের মতো সমঅধিকারী, তাই মা-বাবার খরচ বহনে তারাও সামর্থ্যের শর্তে তাদের ভাইদের সমদায়িত্বশীল হবে। ছেলে-মেয়ে না থাকলে তারপর সিরিয়াল আসবে নাতি-নাতনিদের। অতএব, তাদের ওপর সমভাবে এ দায়িত্ব বর্তাবে। (ফাতহুল কাদির : ৪/৪১৭)

ইবন মুনযির রহ. বলেন,

أجمع أهل العلم على أن نفقة الوالدين الفقيرين اللذين لا كسب لهما ولا مال واجبة في مال الولد

ওলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত যে, সন্তান যদি সামর্থ্যবান হয় এবং মা-বাবা যদি গরিব হয় তাহলে তাঁদের জন্য খরচ করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব। (আল মুগনি ১১/৩৭৫)

আর যদি আর পিতামাতা সচ্ছল হয় কিংবা সন্তান-সন্ততি সামর্থ্যবান না হয় তাহলে মা-বাবার ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। যদিও এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো, কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণের খরচ চালিয়ে যাওয়া। (তাবঈনুল হাকায়েক ৩/৬৪, রদ্দুল মুহতার ২/৬৭৮)
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু  বলা হয়েছে যে আপনার বাবা মা টাকার অভাবে না খেয়ে আছে এমন না, তবে টাকা দিলে জায়গা জমি কিনা যাবে এমন একটা চিন্তা""
সুতরাং এহেন পরিস্থিতিতে আপনার জন্য তাদের টাকা পয়সা দেওয়া জরুরি নয়,আপনার ভাইদের জন্যেও  শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে জরুরী নয়,ওয়াজিব নয়।
কারন তাদের ভরনপোষণ তারা নিজেরাই করতে পারছে । 
,
এক্ষেত্রে আপনার জন্য চাকুরী করা ঠিক হবেনা।
,
★আপনার উপর বাবা মাকে খরচ দেওয়া ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও আপনি যদি চাকুরী করতে চান,তাহলে স্বামীর সন্তুষ্টিচিত্তে অনুমতি   সাপেক্ষে এবং https://ifatwa.info/5112/?show=5112#q5112 লিংকে দেওয়া শর্ত সাপেক্ষে চাকুরী করতে পারেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...