আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
148 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম শায়েখ,

আমি তালাকের ওয়াসওয়াসাগ্রস্ত ব্যাক্তি। একের পর একটা সন্দেহ মনে আসতেই থাকে। আমার আগের করা প্রশ্নের লিংক, দেখার অনুরোধ করছি।

https://ifatwa.info/65836/

(১) আমি যেটা দেখি সেটা নিয়েই আমার ওয়াসওয়াসা শুরু হয়ে যায়। স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার দেওয়া যায় এটা জানার পর থেকে আমার মনের ভিতর হয় যে, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার দিলাম। বেশ কয়েকবার এরকম মনের ভিতর হয়েছে। কিন্তু আমি কখনো মুখে উচ্চারণ করিনি।
গতকাল আমার স্ত্রী আমার উপর কিছুটা অভিমান করে হাসির ছলে আমাকে বললো যে, তুমি আমার সাথে পর্দা করবা।
আমি ১০০% শিওর যে, আমার স্ত্রী তালাকের নিয়তে বলিনি। কারণ সে আসলে জানেই না যে, কেনায়া বাক্য কি। তাই তালাকের নিয়ত থাকা অসম্ভব।
আবার আমি কয়েকদিন আগে জানলাম যে, বিয়ের সময় নাকি স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু আমি এটা জানলাম কিছুদিন আগে আপনাদের সাইট থেকে। বিয়ের সময় জানতাম না।
এতে কি আমাদের বৈবাহিক জিবনে কোন সমস্যা হবে শায়েখ?

(২) শায়েখ আমার মনের ভিতর সারাক্ষন তালাক- তালাক চলতে থাকে। কোন কথা বললেই মনে হয় কেনায়া বাক্য বলে ফেললাম। তালাক শব্দ মনে আসলে মাঝে মাঝে মনে হয় জিব্বা নড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি নিজের কানে তালাক শব্দ শুনছি না। অন্য মানুষকেও মনে হচ্ছে তালাক দিয়ে দিলাম বলে ফেলছি মনে মনে। জিব্বা নড়ে যাচ্ছে মনে হয়। কিন্তু আমি নিজের কানে তালাক শব্দ শুনছি না।

এতে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??

উপরের লিংকটি পড়বেন শায়েখ। তাহলে আমার ওয়াসাওয়াসা সম্পর্কে জানবেন।

1 Answer

0 votes
by (559,290 points)
edited by
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার স্ত্রীর উক্ত কথায় তালাক হবেনা।

(০২)
না,প্রশ্নের বিবরণ মতে তালাক হবেনা।
,
এহেন ওয়াসওয়াসা থেকে উত্তরনের জন্য আপনার প্রতি পরামর্শঃ-

★আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন, তাঁর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরুন। তিনি অসীম দয়ালু। সুতরাং তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন ও মুক্তি দিবেন। 

মূলত এই নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহরই। তিনি বলেন,
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তুমি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব কর, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম-সিজদাহ ৩৬)

★ওয়াসওয়াসাকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপকারী কাজে ব্যস্ত হয়ে যান।

★নিম্নোক্ত দোয়া বেশি বেশি পাঠ করুন।

আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

★যে সকল স্থানে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে, সেখানে ওই দোয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন। যেমন,
 টয়লেটে ঢোকার সময় পড়ুন–اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ ( হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অপবিত্র জিনিস ও শয়তান থেকে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।)

রাগ উঠলে পড়ুন– أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم (আমি আল্লাহর নিকট বিতাড়িত থেকে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।)

স্ত্রীসহবাসের সময় পড়ুন–بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا (আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।)

★ঘরে প্রবেশ করার পর এবং ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর পড়ুন– أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ (আমি আল্লাহ তাআলার পূর্ণাঙ্গ কালামের কাছে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।)

★বেশী করে আল্লাহর জিকির করুন। কেননা, জিকির শয়তান থেকে আত্মরক্ষার শক্তিশালী দুর্গ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ

শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর জিকির ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুজাদালাহ ১৯)

★ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فَمَنْ أَرَادَ مِنْكُمْ بَحْبَحَةَ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمُ الْجَمَاعَةَ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ الْوَاحِدِ، وَهُوَ مِنَ الِاثْنَيْنِ أَبْعَدُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতের মাঝখানে থাকতে ইচ্ছুক, সে যেন অবশ্যই জামাতবদ্ধ জীবন যাপন করে। কেননা শয়তান একাকী মানুষের সঙ্গী এবং দু’জন থেকে সে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকে। (তিরমিযি ২২৫৪)

★আপনি তালাক সংক্রান্ত কোন মাসআলা পড়বেন না। কাউকে জিজ্ঞাসা করতেও যাবেন না। কারো সাথে এ সংক্রান্ত আলাপ ও আলোচনাও করবেন না। মনের মাঝে এ বিষয়ক কোন কিছু আসতে দিবেন না। 

আসলেই অন্য বিষয় নিয়ে মগ্ন হয়ে যাবেন, প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলবেন। 

ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,
له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان
‘ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

★ইয্য ইবনে আব্দুস সালাম রহ. বলেন, ওয়াসওয়াসার প্রতিষেধক হচ্ছে- ব্যক্তি এ বিশ্বাস করা যে, এটি শয়তানী কুমন্ত্রণা। ইবলিস এটি তার অন্তরে আরোপ করছে এবং তার সাথে লড়াই করছে। এতে করে সে ব্যক্তি জিহাদ করার সওয়াব পাবে। কেননা সে ব্যক্তি আল্লাহ্র শত্রুর সাথে লড়াই করছে। যদি কেউ এভাবে অনুভব করতে পারে তাহলে শয়তান তার থেকে পালিয়ে যাবে।

★সকাল ও সন্ধ্যায় পড়ুন-–أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার আশ্রয় প্রার্থনা করি তার অসম্ভষ্টি ও শাস্তি থেকে এবং তার বান্দার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে ও শয়তানের সংস্পর্শ থেকে।)

★ফজর ও মাগরিবের পর এবং ঘুমানোর আগে সূরা ফালাক ও নাস পড়ুন। হাদিসে এসেছে, উকবা ইবনে আমের রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَلَمْ تَرَ آيَاتٍ أُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ ، لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ ؟ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখা যায় নি। আর তা হলো কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। (মুসলিম ৮১৪)
,

★দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে গিয়ে চিল্লা বা তিনদিন সময় লাগানোর পরামর্শ রইলো। 
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)
,
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন যে ওয়াসওয়াসায় আপনি আক্রান্ত তা দূর করে দেন। আমাদের ও আপনার ঈমান, দ্বীনদারি ও তাকওয়া বাড়িয়ে দেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...