ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
কুরআনের বিনিময় জায়েয।চিকাৎসা বাবৎ জায়েয।ঠিক তেমনি শিক্ষা প্রদাণ করেও জায়েয।শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টাকে তাবিজ বিষয়ের উপর কিয়াস করা হয়েছে,
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرُّوا بِمَاءٍ فبهم لَدِيغٌ أَوْ سَلِيمٌ فَعَرَضَ لَهُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَاءِ فَقَالَ: هَلْ فِيكُمْ مِنْ رَاقٍ؟ إِن فِي المَاء لَدِيغًا أَوْ سَلِيمًا فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَقَرَأَ بِفَاتِحَة الْكتاب على شَاءَ فبرئ فَجَاءَ بِالشَّاءِ إِلَى أَصْحَابِهِ فَكَرِهُوا ذَلِكَ وَقَالُوا: أَخَذْتَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا حَتَّى قَدِمُوا الْمَدِينَةَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخَذَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ: «أَصَبْتُمُ اقْسِمُوا وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ سَهْمًا»
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে একদল এক পানির কূপওয়ালাদের কাছে পৌঁছলেন, তাদের মধ্যে একজনকে বিচ্ছু অথবা সাপে দংশন করেছিল। কূপওয়ালাদের এক লোক এসে বললো, আপনাদের মধ্যে কোনো মন্ত্র (চিকিৎসা) জানা লোক আছে কি? এ কূপের ধারে একজন বিচ্ছু বা সাপে কাটা লোক রয়েছে। তখন তাঁদের মধ্য হতে একজন [আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)] গেলেন এবং কিছু ছাগলের বিনিময়ে তার ওপর সূরা ফাতিহাহ্ পড়ে ফুঁক দিলেন। এতে সে সুস্থ হয়ে উঠলো এবং সাহাবী ছাগলগুলো নিয়ে স্বীয় সাথীদের কাছে আসলেন।
তাঁরা এটা অপছন্দ করে বলতে লাগলেন, আপনি কি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিলেন? পরিশেষে তাঁরা মদীনায় পৌঁছলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ইনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেসব জিনিসের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকো, তাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহ (আল্লাহর কিতাব) অধিকতর উপযোগী। (বুখারী)
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তোমরা ঠিকই করেছো, তা ভাগ-বণ্টন কর এবং আমার জন্যও তোমাদের সাথে এক অংশ রেখ। (সহীহ বুখারী ৫৭৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৪৬, সহীহ আল জামি‘ ১৫৪৮)
হযরত আবু-সাঈদ খুদরী রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عن أبي سعيد رضي الله عنه، قال: انطلق نفر من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم في سفرة سافروها، حتى نزلوا على حي من أحياءالعرب، فاستضافوهم فأبوا أن يضيفوهم، فلدغ سيد ذلك الحي، فسعوا له بكل شيء لا ينفعه شيء، فقال بعضهم: لو أتيتم هؤلاء الرهط الذين نزلوا، لعله أن يكون عند بعضهم شيء، فأتوهم، فقالوا: يا أيها الرهط إن سيدنا لدغ، وسعينا له بكل شيء لا ينفعه، فهل عند أحد [ص: ٩٣] منكم من شيء؟ فقال بعضهم: نعم، والله إني لأرقي، ولكن والله لقد استضفناكم فلم تضيفونا، فما أنا براق لكم حتى تجعلوا لنا جعلا، فصالحوهم على قطيع من الغنم، فانطلق يتفل عليه، ويقرأ: الحمد لله رب العالمين فكأنما نشط منعقال، فانطلق يمشي وما به قلبة، قال: فأوفوهم جعلهم الذي صالحوهم عليه، فقال بعضهم: اقسموا، فقال الذي رقى: لا تفعلوا حتى نأتي النبي صلى الله عليه وسلم فنذكر له الذي كان، فننظر ما يأمرنا، فقدموا على رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكروا له، فقال: «وما يدريك أنها رقية»، ثم قال: «قد أصبتم، اقسموا، واضربوا لي معكم سهما» فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم،
ভাবার্থঃ-একদল সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন। তারা এক আরব গোত্রে পৌঁছে তাদের মেহমান হতে চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। সে গোত্রের সরদার বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হল। লোকেরা তার (আরোগ্যের) জন্য সব ধরনের চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই কোন উপকার হল না। তখন তাদের কেউ বলল, এ কাফেলা যারা এখানে অবতরণ করেছে তাদের কাছে তোমরা গেলে ভাল হত। সম্ভবত, তাদের কারো কাছে কিছু থাকতে পারে। ওরা তাদের নিকট গেল এবং বলল, হে যাত্রীদল! আমাদের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে, আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না। তোমাদের কারো কাছে কিছু আছে কি? তাদের (সাহাবীদের) একজন বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম আমি ঝাড়-ফুঁক করতে পারি। আমরা তোমাদের মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের জন্য মেহমানদারী করনি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়-ফুঁক করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ কর। তখন তারা এক পাল বকরীর শর্তে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হল। তারপর তিনি গিয়ে (الْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’’ (সূরা ফাতিহা) পড়ে তার উপর ফুঁ দিতে লাগলেন। ফলে সে (এমনভাবে নিরাময় হল) যেন বন্ধন হতে মুক্ত হল এবং সে এমনভাবে চলতে ফিরতে লাগল যেন তার কোন কষ্টই ছিল না। (বর্ণনাকারী বলেন,) তারপর তারা তাদের স্বীকৃত পারিশ্রমিক পুরোপুরি দিয়ে দিল। সাহাবীদের কেউ কেউ বলেন, এগুলো বণ্টন কর। কিন্তু যিনি ঝাড়-ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেন এটা করব না, যে পর্যন্ত না আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে তাঁকে এই ঘটনা জানাই এবং লক্ষ্য করি তিনি আমাদের কী নির্দেশ দেন। তারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি [নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বলেন, তুমি কিভাবে জানলে যে, সূরা ফাতিহা একটি দু‘আ? তারপর বলেন, তোমরা ঠিকই করেছ। বণ্টন কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা অংশ রাখ। এ বলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন।(সহীহ বোখারী-২২৭৬,সহীহ মুসলিম-২২০১)
নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
(خذوا منهم واضربوا لي بسهم معكم) هذا تصريح بجواز أخذ الأجرة على الرقية بالفاتحة والذكر وأنها حلال لاكراهة فيها وكذا الأجرة على تعليم القرآن وهذا مذهب الشافعي ومالك وأحمد وإسحاق وأبي ثور وآخرين من السلف ومن بعدهم ومنعها أبو حنيفة في تعليم القرآن وأجازها في الرقية
হাদীসের অংশ
"তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করো।এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা অংশ রাখো।"
একথার প্রমাণ বহন করে যে,সূরায়ে ফাতেহা বা কুরআনের বিভিন্ন অংশ দ্বারা রুকইয়াহ করা বৈধ রয়েছে।এবং এর বিনিময় গ্রহণও বৈধ রয়েছে।এটা নিঃসন্দেহে হালাল,এতে শরীয়ত কর্তৃক কোনো প্রকার নিন্দনীয়তা নেই।ঠিক এভাবে কুরআন শিক্ষার বিনিময় গ্রহণও জায়েয।এটা ইমাম শাফেয়ী,ইমাম মালিক,ইমাম আহমদ,ইমাম ইসহাক্ব ও ইমাম আবি সাওর সহ আরো অনেক সালাফদের মত।ইমাম আবু হানিফা কুরআন শিক্ষার বিনিময়কে নিষেধ করেছেন।তবে রুকইয়াহ এর বিনিময়কে জায়েয বলেছেন।(আল-মিনহাজ-২/২২৪)
মুতাকাদ্দিমির হানাফি ফকিহগণ কুরআন শিক্ষার বিনিময় গ্রহণকে নাজায়েয বলতেন।তবে মুতাআখখিরিন তথা ৩০০ হিজরি পরবর্তী হানাফি ফকিহগণ কুরআন শিক্ষার বিনিময় গ্রহণকে জায়েয বলেছেন।
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 55 ):
"(و) لا لأجل الطاعات مثل (الأذان والحج والإمامة وتعليم القرآن والفقه)، ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن والفقه والإمامة والأذان.
(قوله: ولا لأجل الطاعات) الأصل أن كل طاعة يختص بها المسلم لا يجوز الاستئجار عليها عندنا؛ لقوله عليه الصلاة والسلام : «اقرءوا القرآن ولا تأكلوا به»، وفي آخر ما عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى عمرو بن العاص: «وإن اتخذت مؤذناً فلا تأخذ على الأذان أجراً»؛ ولأن القربة متى حصلت وقعت على العامل، ولهذا تتعين أهليته، فلا يجوز له أخذ الأجرة من غيره كما في الصوم والصلاة، هداية. مطلب تحرير مهم في عدم جواز الاستئجار على التلاوة والتهليل ونحوه مما لا ضرورة إليه.
(قوله: ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن إلخ) قال في الهداية: وبعض مشايخنا - رحمهم الله تعالى - استحسنوا الاستئجار على تعليم القرآن اليوم؛ لظهور التواني في الأمور الدينية، ففي الامتناع تضييع حفظ القرآن، وعليه الفتوى اهـ، وقد اقتصر على استثناء تعليم القرآن أيضاً في متن الكنز ومتن مواهب الرحمن وكثير من الكتب، وزاد في مختصر الوقاية ومتن الإصلاح تعليم الفقه، وزاد في متن المجمع الإمامة، ومثله في متن الملتقى ودرر البحار".
البحر الرائق شرح كنز الدقائق ومنحة الخالق وتكملة الطوري (8/ 22):
قال - رحمه الله -: "(والفتوى اليوم على جواز الاستئجار لتعليم القرآن) ، وهذا مذهب المتأخرين من مشايخ بلخ استحسنوا ذلك، وقالوا: بنى أصحابنا المتقدمون الجواب على ما شاهدوا من قلة الحفاظ ورغبة الناس فيهم؛ ولأن الحفاظ والمعلمين كان لهم عطايا في بيت المال وافتقادات من المتعلمين في مجازات التعليم من غير شرط، وهذا الزمان قل ذلك واشتغل الحفاظ بمعائشهم فلو لم يفتح لهم باب التعليم بالأجر لذهب القرآن فأفتوا بالجواز، والأحكام تختلف باختلاف الزمان"