بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ
১. বিয়ের জন্য কোন চরিত্রবান ও দ্বীনদার লোকের কাছে নিজেকে পেশ করা নারীর জন্যে হারাম নয় এবং বুদ্ধিমান লোকদের কাছে এটা দোষের কিছু নয়। কেউ যদি এটাকে খারাপ চোখে দেখে তাহলে তার সে দেখাটা শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা ও অভ্যাসের দৃষ্টিকোণ থেকে। আবার অনেক সময় মহিলারা হিংসাবশত এটাকে খারাপ চোখে দেখে। সাবেত আল-বুনানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আনাস (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। তাঁর কাছে তাঁর মেয়ে ছিলেন। এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে নিজেকে (বিয়ের জন্য) পেশ করে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে কি আপনার প্রয়োজন আছে? আনাস (রাঃ) এর মেয়ে বললেন: ছি! ছি! তাঁর লজ্জাবোধ কতই কম! তখন আনাস (রাঃ) বললেন: সে মহিলা তোমার চেয়ে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আগ্রহবশত তিনি তাঁর কাছে নিজেকে পেশ করেছেন।”[সহিহ বুখারী (৪৮২৮)] ইমাম বুখারী এ হাদিসের শিরোনাম দিয়েছেন “সৎ লোকের কাছে কোন নারীর নিজেই প্রস্তাব দেয়া শীর্ষক পরিচ্ছেদ”।
জনৈক সৎ নারী নিজে থেকে মুসা (আঃ) এর সাথে বিয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিতে গিয়ে বলেন: যেমনটি আল্লাহ তাআলা উদ্ধৃত করেছেন, “নারীদ্বয়ের একজন বলল, আব্বু, আপনি তাকে মজুর নিয়োগ করুন। কারণ আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।[সূরা কাসাস, আয়াত: ২৬] তবে আয়াত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে- মেয়েটির পিতা তাকে মূসা (আঃ) এর নিকট উপস্থাপন করেছেন। যেমনটি বুঝা যায় এ কথা থেকে “তিনি মূসাকে বললেন: আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, এ শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার মজুরি খাটবে।”[সূরা কাসাস, আয়াত: ২৭]
এটি আপনার অভিভাবকদের প্রতি একটা মেসেজ; যাতে করে তারা আল্লাহকে ভয় করে, গোত্রীয় গোঁড়ামি পরিত্যাগ করে এবং একজন সৎ পাত্রের কাছে আপনাকে বিয়ে দেয়। অন্ততঃ কোন চরিত্রবান ও দ্বীনদার পাত্রকে যেন তারা প্রত্যাখ্যান না করে। এই সৎ লোকের মেয়েটি ইঙ্গিত দেয়ার পর লোকটি নিজের মেয়েকে মূসা (আঃ) এর কাছে পেশ করলেন। অনুরূপভাবে জনৈক সৎ মহিলা ইঙ্গিতে নয়; বরং সরাসরি নিজেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের কাছে পেশ করেছেন। এ ঘটনাগুলো লজ্জাশীলতার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বরং এ ঘটনাগুলো মজবুত দ্বীনদারি, সংশ্লিষ্ট মহিলা ও তার অভিভাবকের বুদ্ধির প্রখরতার প্রমাণ বহন করে। (আল-মাওসূআ আল-ফিকহিয়্যা (৩০/৫০) গ্রন্থে এসেছে-
কোন পুরুষের দ্বীনদারি, মর্যাদা, ইলম, কিংবা বিশেষ কোন দ্বীনি বৈশিষ্ট্যে বিমোহিত হয়ে কোন নারীর জন্য নিজেকে সে পুরুষের কাছে উপস্থাপন করা বা অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াতে তাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং এটি অতি উত্তম।
যেমনটি করেছিলেন উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৎ চরিত্র, দ্বীনদারি ও আমানতদারীতায় মুগ্ধে হয়ে তিনিই তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন।
২. স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অঙ্গস্বরূপ। সুতরাং একে অপরের হকের প্রতি লক্ষ রাখবে, তাতেই দাম্পত্যজীবন সুখের হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীর কাছে থাকা স্বামীর ১৭টি হকঃ
১. সর্বদা স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করা।
২. স্বামীর সাথে অসংযত আচরণ না করা,স্বামীকে কষ্ট না দেওয়া।
৩. শরীয়ত সম্মত প্রত্যেক কাজে স্বামীর আনুগত্য করা এবং শরীয়ত বিরোধী কাজে অপারগতা তুলে ধরা এবং স্বামীর সাথে নরম ভাষায় কথা বলা।
৪. প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভরণ-পোষণ দাবি না করা।
৫. পর-পুরুষের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক না রাখা।
৬. স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে ঢোকার অনুমিত না দেওয়া।
৭. অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।
৮. স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা। অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে কাউকে কোন কিছু না দেওয়া।
৯. স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে অতিরিক্ত নফল নামাজে মশগুল না থাকা,অতিরিক্ত নফল রোজা না রাখা।
১০. স্বামী মেলামেশার জন্য আহবান করলে শরীয়ত সম্মত কোন ওজর না থাকলে আপত্তি না করা।
১১. স্বামীর আমানত হিসেবে নিজের ইজ্জত আব্রু হেফাজত করা,কোন ধরনের খেয়ানত না করা।
১২. স্বামী দরিদ্র কিংবা অসুন্দর হওয়ার কারণে তাকে তুচ্ছ না করা।
১৩. স্বামীকে কোন গুনাহের কাজ করতে দেখলে আদবের সাথে,সম্মানের সাথে,নরম মেজাজে তাকে বোঝানো এবং তাকে বিরত রাখা।
১৪. স্বামীর নাম ধরে না ডাকা।
১৫. কারো কাছে স্বামীর দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা।
১৬. শ্বশুর-শাশুরিকে সম্মানের পাত্র মন করা,তাদেরকে শ্রদ্ধা করা,ঝগড়া- বিবাদ কিংবা অন্য কোন উপায়ে কষ্ট না দেওয়া।
১৭. সন্তানদের লালন পালনে অবহেলা না করা।
৩. ফরয ইলম শিক্ষায় বাধা প্রদান এবং নফল ইলম শিক্ষায় বিনা প্রয়োজনে বাধা প্রদান করলে স্বামী গোনাহগার হবে। তবে ফরয ইলম সে যেকোনো উপায়ে শিখবে। এটা অত্যাবশ্যকীয়। এবং নফল ইলম স্বামীর হক আদায়ের পর সময় থাকলে শিখবে। এ ব্যাপারে রুখসত রয়েছে। আরো জানুনঃ
https://ifatwa.info/3303/?show=3303#q3303৪. আপনারা যদি অভিভাবকদের না জানিয়েই বিবাহ করেন,তাহলে এই ছহীহ হবে।
কোনো সমস্যা নেই।
(উল্লেখ্য যে মাতাপিতা সন্তুষ্টি ও অনুমতি নিয়ে সবাইকে অগ্রসর হতে হবে।এবং মাতাপিতার সন্তুষ্টিই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের উত্তম মাধ্যম।মাতাপিতাকে কষ্ট দিয়ে জীবনে সূখী হওয়া যাবে না। তাছাড়া বৈধ ও ভালো কাজে মাতাপিতার নির্দেশ মান্য করাও ওয়াজিব।
সুতরাং আমরা পরামর্শ স্বরুপ বলবো যদিও উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে বাবার মতামতকে উপেক্ষা করে আপনাদের বিবাহ হয়ে যাবে,তারপরেও এভাবে অভিভাবককে না জানিয়ে চুরি করে,অথবা তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে বিয়ে করা কখনো উচিৎ হবে না।কেননা মাতাপিতা সব সময় সন্তানের কল্যাণ চায়।তাই মাতাপিতার পরামর্শ ও আদেশ মান্য করাই সবার জন্য কল্যাণকর।)
আরো জানুনঃ
৫. দৈনন্দিন জীবনে প্রিয় নবীর প্রিয় সুন্নাত
(মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক রহঃ),
এহইয়াউস সুনান( ডাঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রঃ),
কিতাবুস সুন্নাহ ( মুফতী মানসুরুল হক দাঃ বাঃ)
উক্ত বইগুলো সংগ্রহ করতে পারেন।