আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
164 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,


আমি একটি ব্যাংকে PDR account 3 মাসের জন্য খুলেছিলাম। অক্টোবর ২০, ২০২২ ইংরেজি তারিখ হতে জানুয়ারি ২০, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত। আমি গতকাল একাউন্টটি বন্দ করার জন্য গিয়েছিলাম। তখন ব্যাংক কর্মকর্তা বললেন, যদি আমি ডিসেম্বর মাসে একাউন্ট বন্ধ করতাম তাহলে আমার কিছু টাকা বাঁচত। এখন জানুয়ারি মাস শুরু হয়ে গিয়েছে এখন যদি আমি একাউন্ট বন্ধ করি তাহলে আমার ক্ষতি হবে আমি কোনো টাকাই পাবো না এরকম বলেছিলেন। কিন্তুু আমি যদি নির্ধারিত তারিখে অর্থাৎ জানুয়ারি ২০, ২০২৩ তারিখেই একাউন্ট বন্ধ করি তাহলে আমাকে ব্যাংক থেকে ৬% ইন্টারেস্ট দেওয়া হবে।
এই ৬ % কি জন্য আমাকে দেওয়া হবে সেটা আসলে আমি জানি না এক কথায় বুঝতে পারি নি।
এখন আমার করণীয় কি? ৬% ইন্টারেস্ট কি আমি গ্রহণ করবো? না কি আমার লস হবে জেনেও এখন একাউন্ট বন্ধ করে দিবো?

1 Answer

0 votes
by (59,190 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

সুদ হারাম আর হারাম মাল ভক্ষণ করলে দুআ কবুল হয় না। হারাম মাল সদকাহ করে দিতে হবে।

আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: ٥١] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ١٧٢] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ "

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা'আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু'মিনূন ২৩ঃ ৫১)তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও” (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু'আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?”(সহীহ মুসলিম-১০১৫)

হারাম টাকার বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া।নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে সদকা করে দেয়া।

 من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء

যদি কারো নিকট কোনো হারাম মাল থাকে,তাহলে সে ঐ মালকে তার মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেবে।যদি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না হয়,তাহলে গরীবদেরকে সদকাহ করে দেবে।(মা'রিফুস-সুনান১/৩৪)

একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤكِلَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَكَاتِبَهُ.

যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সকলের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৬০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৩৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৬

এ ছাড়াও আরও অসংখ্য হাদীসে সুদ খাওয়া, সুদ দেওয়া এবং সুদের সাথে সকল সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।

এখানে কর্মচারীদের করণীয় হলো, প্রতি মাসে সেলারি অ্যাকাউন্টে বেতনের অর্থ আসা মাত্র তা তুলে শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত কোনো ব্যাংকে রেখে দেবে। যদি নিজের কাজে ক্যাশ রাখার কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা থাকে সেটা আরও ভালো। কিন্তু এর পরও যদি বছর শেষে তার অ্যাকাউন্টে কোনো সুদ চলে আসে, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই টাকা সুদদাতাকে ফেরত দিতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০/১২৪)

কিন্তু ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেহেতু নির্দিষ্ট সুদদাতা বের করা অসম্ভব, তাই সওয়াবের নিয়ত না করে কোনো জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত মিসকিনকে তা দান করে দিতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৭/১৬, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০/১২৬)

কোনো অবস্থাতেই সেই টাকা মসজিদ, মাদরাসা বা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজ (যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ) ইত্যাদিতে খরচ করা যাবে না। (ইমদাদুল মুফতিন, পৃ. ৫৮৬, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০/১৩১)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন !

আপনার জন্য হুকুম হলো, বিক্ল্প ব্যবস্থা না থাকায় নিজের ক্ষতি করে এই মহূর্তে একাউন্ট বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। বরং আপনি নির্ধারিত তারিখে অর্থাৎ জানুয়ারি ২০, ২০২৩ তারিখেই একাউন্ট বন্ধ করবেন এবং এক্ষেত্রে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট সওয়াবের নিয়ত না করে কোনো জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ফকীর বা মিসকিনকে তা দান করে দিতে হবে। উক্ত সুদের টাকা থেকে নিজে উপকৃত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...