আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
245 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (30 points)
edited by
আসসালামু'আলাইকুম প্রিয় শায়েখ, আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। একটু কষ্ট করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে উপকৃত হতাম।
(১) মোবাইলের কোরআন অ্যাপ থেকে সূরা কাহাফ তেলাওয়াতকালে আমার ওজু ছুটে যায়, এই অবস্থায় আমি তেলাওয়াত চালিয়ে যাই এবং সূরা শেষ করি। এটা কি ঠিক হয়েছে? আমি কি সূরা কাহাফের পূর্ণ ফজিলত আশা করতে পারি? (উল্লেখ্য, আমি অ্যাপের একটা সিস্টেমের মাধ্যমে কোরআন এর হরফ স্পর্শ না করে পাঠ করতেছিলাম।)
(২) ছোট থেকে দেখে আসছি, কবরের পাশে/সামনে গিয়ে নামাজের মতো হাত বেঁধে বিভিন্ন সূরা(যেমনঃ ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়ে, শেষে পশ্চিম দিকে মুখ করে দোয়া করে কবর যিয়ারত শেষ করতে। আমিও এতোদিন এই পদ্ধতিই পালন করেছি, এটি কি সঠিক পদ্ধতি? কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি কোরআন, হাদিসের আলোকে জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

১. অজু ব্যতীত কুরআনকে স্পর্শ করা যায় না, তবে বিনা অজুতে কুরআনকে স্পর্শ করা ব্যতীত পড়া যাবে। চার মাযহাবের সিদ্বান্ত মতে বিনা অজুতে কোরআন শরীফকে স্পর্শ করা যাবে না। সুতরাং ওযু ছাড়া মোবাইল, ট্যাব,ল্যাপটপ/কম্পিউটার থেকে কুরআন পড়া জায়েয আছে। তবে সরাসরি কুরআন লিখিত স্কীনে স্পর্শ করতে চাইলে ওযু থাকা জরুরি। কুরআন শরীফ তথা কুরআনের আয়াত ধরার জন্য ওজু থাকা আবশ্যক। পড়ার জন্য বা শোনার জন্য ওজু করা আবশ্যক নয়। কুরআনে কারীমের আয়াত ছাড়া অন্য কিছু ধরার জন্য অজু থাকা জরুরী নয়।

لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ [٥٦:٧٩

যারা পাক পবিত্র, তারা ব্যতিত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। {সূরা ওয়াকিয়া-৭৯}

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল সাঃ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬}

عن عبد الله بن عمر أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:”لا يمس القرآن إلا طاهر“.

رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৫১২}

 قال ابن عبد البر في الاستذكار (8/10): ((أجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا طاهر

আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহঃ বলেনঃ সমগ্র পৃথিবীর সকল ফক্বীহগণ ও তাদের অনুসারীগণ একমত এবং এর উপরই সকলে ফাতওয়া প্রদান করে থাকেন যে, কুরআনে কারীম পবিত্র হওয়া ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই। {আল ইসতিজকার-১০/৮}

আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/8339/

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মোবাইলে বা কম্পিউটারে অযু ছাড়া কুরআন শরিফ পড়া যাবে। তবে সরাসরি কুরআন লিখিত স্কীনে স্পর্শ করতে পারবেনা। অযু ছাড়া সেই স্কীনে স্পর্শ নাজায়েজ। 

২. https://ifatwa.info/34062/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আশাকরি এই আলোচনা থেকে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে যাবেন।

وَإِذَا أَرَادَ زِيَارَةَ الْقُبُورِ يُسْتَحَبُّ لَهُ أَنْ يُصَلِّيَ فِي بَيْتِهِ رَكْعَتَيْنِ يَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ الْفَاتِحَةَ وَآيَةَ الْكُرْسِيِّ مَرَّةً وَاحِدَةً وَالْإِخْلَاصَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ وَيَجْعَلُ ثَوَابَهَا لِلْمَيِّتِ يَبْعَثُ اللَّهُ تَعَالَى إلَى الْمَيِّتِ فِي قَبْرِهِ نُورًا وَيَكْتُبُ لِلْمُصَلِّي ثَوَابًا كَثِيرًا ثُمَّ لَا يَشْتَغِلُ بِمَا لَا يَعْنِيهِ فِي الطَّرِيقِ فَإِذَا بَلَغَ الْمَقْبَرَةَ يَخْلَعُ نَعْلَيْهِ ثُمَّ يَقِفُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلًا لِوَجْهِ الْمَيِّتِ وَيَقُولُ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ وَيَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ لَنَا سَلَفٌ وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ كَذَا فِي الْغَرَائِبِ.

وَإِذَا أَرَادَ الدُّعَاءَ يَقُومُ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ كَذَا فِي خِزَانَةِ الْفَتَاوَى.

وَإِنْ كَانَ شَهِيدًا يَقُولُ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ.

যখন কেউ কবর যিয়ারতের নিয়ত করবে,তখন তার জন্য মুস্তাহাব হল,সে যেন ঘরে দুই রা'কাত নামায পড়ে,এবং প্রত্যেক রা'কাতে যেন সে সূরা ফাতেহা ও একবার আয়াতুল কুরসি,এবং তিনবার সুরা ইখলাছ পড়ে।এবং এর সওয়াব যেন সে মৃত ব্যক্তির জন্য প্রেরণ করে দেয়।আল্লাহ তা'আলা উক্ত তিলাওয়াতের সওয়াবকে উক্ত ব্যক্তির কবরে নুর হিসেবে পাঠিয়ে দেবেন। এবং মুসাল্লির জন্যও আল্লাহ অনেক সওয়াব লিখে রাখবেন।

অতঃপর উক্ত মুসল্লি কবরস্থানে যাওয়ার রাস্তায় যেন কোনো অনর্থক কাজে মশগুল না হয়। যখন সে কবরস্থানে পৌছবে তখন পায়ের জুতা খুলে ফেলবে।অতঃপর সে কিবলার দিকে পিঠ ফিরিয়ে এবং মৃতব্যক্তির দিকে আপন চেহারাকে নিবিষ্ট করে দাড়াবে। এবং বলবে......

"আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ওয়া ইয়াগফিরাল্লাহু লানা ওয়া লাকুম, আনতুম লানা সালাফুন ওয়া নাহনু বিল আসারি "(গারাঈব) (অন্যন্য কিতাবে এভাবে বর্ণিত রয়েছে, “আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল মিনাল মুসলিমী-না ওয়াল মুসলিমা-ত,আনতুম লানা সালাফুন ওয়া নাহনু লাকুক তাবায়ুন ওয়া ইন্না ইনশা আল্লাহু বিকুম লাহিকুন"

এবং যখন দু'আর সময় হবে তখন কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে দাড়াবে। (খাযানাতুল ফাতাওয়া)

কবরের শায়িত ব্যক্তি শহীদ হলে বলবে, ' সালামুন আলাইকুম বিমা সাবারতুম ফানি'মা উক্ববাদ্দার '

ثُمَّ يَقْرَأُ سُورَةَ الْفَاتِحَةِ وَآيَةَ الْكُرْسِيِّ ثُمَّ يَقْرَأُ سُورَةَ {إِذَا زُلْزِلَتِ} [الزلزلة: ١] وَأَلْهَاكُمْ التَّكَاثُرُ كَذَا فِي الْغَرَائِبِ.

অতঃপর সূরায়ে ফাতেহা এবং আয়াতে কুরসি পড়বে।এবং সূরায়ে যিলযাল ও সূরায়ে তাকাছুর পড়বে। (গারাঈব)

وَحُكِيَ عَنْ الشَّيْخِ الْإِمَامِ الْجَلِيلِ أَبِي بَكْرٍ مُحَمَّدِ بْنِ الْفَضْلِ - رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى - أَنَّ قِرَاءَةَ الْقُرْآنِ فِي الْمَقَابِرِ إذَا أَخْفَى وَلَمْ يَجْهَرْ لَا تُكْرَهُ وَلَا بَأْسَ بِهَا إنَّمَا يُكْرَهُ قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ فِي الْمَقْبَرَةِ جَهْرًا أَمَّا الْمُخَافَتَةُ فَلَا بَأْسَ بِهَا وَإِنْ خَتَمَ، وَكَانَ الصَّدْرُ أَبُو إِسْحَاقَ الْحَافِظُ يَحْكِي عَنْ أُسْتَاذِهِ أَبِي بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ إبْرَاهِيمَ - رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى - لَا بَأْسَ أَنْ يَقْرَأَ عَلَى الْمَقَابِرِ سُورَةَ الْمُلْكِ سَوَاءٌ أَخْفَى أَوْ جَهَرَ وَأَمَّا غَيْرُهَا فَإِنَّهُ لَا يَقْرَأُ فِي الْمَقَابِرِ وَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ الْجَهْرِ وَالْخُفْيَةِ كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ فِي فَصْلِ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ

আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ফযল রাহ, থেকে বর্ণিত,তিনি মনে করেন,কবরস্থানে নিম্নস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করতে কোনো সমস্যা নেই এমনকি সারা কুরআনও তেলাওয়াত করা যাবে।তবে উচ্ছস্বরে মাকরুহ। এবং আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম রাহ, থেকে বর্ণিত,তিনি মনে করেন, উচ্ছস্বরে হোক বা নিম্নস্বরে সকল পদ্ধতিতে সূরা মূলক কবরস্থানে তেলাওয়াত করা যাবে।এতে  কোনো অসুবিধা নেই।

আর সূরা মূলক ব্যতীত বাদবাকি কুরআন কবরস্থানে তেলাওয়াত না করাই ভালো।এক্ষেত্রে তিনি উচ্ছস্বর-নিম্নস্বর এর কোনো পার্থক্য করেন না। (যাখিরাহ) ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৫০

যিয়ারতের বেলায় ছোটবড়র কোনো পার্থক্য নেই। সবাই একি নিয়মে যিয়ারত করবে। দু'আর মুস্তাহাব হল, দু হাত তুলে দু'আ করা এবং দু'আ শেষে চেহারায় হাতদ্বয় কে বুলিয়ে দেয়া তথা চেহারায় হাত মুছা।

বিঃদ্রঃ যিয়ারত অর্থ সাক্ষাৎ, কবর যিয়রত অর্থ কবরে শায়িত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ। সুতরাং তা বাড়িতে বা মসজিদে বসে হবে কিভাবে। হ্যা বাড়িতে বা মসজিদে বসে বিভিন্ন দু'আ-দুরুদ পড়ে ঈসালে সওয়াব (সওয়াব পৌছিয়ে দেয়া) করা যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (61,230 points)
আলহামদুলিল্লাহ উত্তর আপডেট করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 182 views
...