চিটাগং এর একটা গ্রুপ দাবি করতেছে মাইকে আযান বা নামাজ পড়া শিরক। আমার এক নিকট আত্মীয় এই আকীদায় বিশ্বাসী। তিনি আমাকে তার এই মত গ্রহন করার জন্য বিভিন্ন রেফারেন্স দেন কুরআন বিভিন্ন সূরা থেকে। ওনার কথাটা আমি ঐভাবে মূল্যায়ন না করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানলে উপকৃত হতাম।নিচে আমি তাদের কিছু রেফারেন্স তুলে ধরছিঃ
১." ওয়া বুদুল্লাহ ওয়ালা তুশরিকু শাইআ"( সূরা নিসা-৩৬) অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোন কিছু তার সাথে শরীক করোনা।
আমাদের আকিদা ও বিশ্বাসঃ আল্লাহর ইবাদতে জানদার, বেজানদার, তার রবের সাথে, না ইবাদতের সাথে কোন কিছুকে শরীক করা যাবেনা। মাইক বা যন্ত্র যেহেতু বেজান বস্তু তা আল্লাহর ইবাদতে ব্যবহার ঠিক হবেনা।
২." ইয়া কানা বুদু ওইয়্যা কানাস্তাইন"( সূরা ফাতিহা-৪) অর্থাৎ আমরা কেবল তোমারি গোলামী করি এবং তোমার কাছে সাহায্য চাই।
আমাদের প্রশ্ন - আপনারা তো আল্লাহর কাছে সাহায্য চান নলেন ঠিকই, কিন্তু আপনারা ইবাদতে সাহায্য চাচ্ছেন মাইক বা যন্ত্র সমূহের। আপনারা এখন আওয়াজ বড় করার জন্য সাহায্য চান মাইকের কাছে। কই আপনারা তো আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন না। কখনো মসজিদের বাইরে উঁচু কন্ঠে আযান দিলেন না, যা করা সুন্নত।
৩.সূরা কামারে আল্লাহ বলেন-" আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমানে"(আয়াত -৪৯)
আমাদের আকিদা ও বিশ্বাসঃ আমাদের কন্ঠের আওয়াজ আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত। তা নির্ধারন করে দিয়েছেন পরিমান মতো।কিয়ামতে আগ পর্যন্ত আর কোন আওয়াজে বড় করার জন্য সাহায্যকারীর প্রয়োজন হবেনা।
৪."নিসন্দেহে আল্লাহ ইচ্ছা করলে যেকোন গুনাহ ক্ষমা করবেন কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না।"( সূরা নিসাঃ৪৮,১১৬)
আমাদের প্রশ্নঃ অনেক মানুষ বলে যে, ছেলেটা বিদেশ না গেলে জীবন চলত না, খেতে এবার ধান না হলে না খেয়ে মরে যেতাম, দোকানটা থাকার কারনে বেঁচে আছি, আলেমরা বলে এগুলা শিরক।তাহলে কেউ যদি বলে মসজিদে মাইক না হলে মানুষ আসবে কেমন করে? কারেন্ট না থাকলে অন্য ব্যবস্থা করে হলেও আজান দিতে হবে। তাহলে কি এটা ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক হবে না?
৫."আরস্বীয় নামাজে কেরাত উচ্চসুরে পড়বেনা আর ক্ষীন সুরেও না। মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন কর।"( বনি ইছরাইল-১১০)
আমাদের আকিদা ও বিশ্বাসঃ মাইকে বা স্পিকারের সাহায্যে নামাজ আদায় করলে উচ্চ আওয়াজ করার ফলে কোরআনের আয়াতের বিরুদ্ধে অসম্মান করা হয়।
৬. অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন- আজ তোমাদের জীবন ব্যবস্থায় পরিপূর্নতা দান করলাম। আমার নেয়ামত তোমাদের জন্য পূর্নতায় পৌঁছালাম।আর ইসলামকে তোমার দ্বীন হিসাবে মনোনিত করলাম। ( সুরা মায়েদা-৩)
আমাদের আকিদা ও বিশ্বাসঃ রাষ্ট্র চলতে, সমাজ চলতে পরিবার চলতে, ব্যক্তি জীবন চলতে, আযান চলতে, নামাজ চলতে যা কিছু প্রয়োজন কোরআনের মাঝে সকল বিধান পূর্ন করে দিয়েছে, আল্লাহ ঘোষণা দিলেন। সেদিন তো দ্বীনের কার্যক্রম চালাতে নতুন কোন যন্ত্রের নাম নিশানা ছিলনা। বিদায় ভাষনে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার সাহাবার সম্মুখে নবীজী( সাঃ) ভাষন দিয়েছেন, সেদিনকি আল্লাহ তায়ালা পারতেন না এই উপকারী যন্ত্র পাঠাতে? আসলে আমাদের মূল সমস্যা ইমানে।আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করছিনা।
৭. হযরত আনাস (রা.) বলেন- নামাজের জন্য আহবান করা সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে সাহাবারা আগুন জ্বালানো অথবা ঘন্টা বাজানোর প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু এটা ইহুদি ও নাছারাদের প্রথা বলে মন্তব্য করা হয়।তারপর বেলালকে আজানের বাক্য দু'বার করে, একামতের বাক্য একবার করে বলার নির্দেশ দেওয়া হলো।( বুখারী শরিফ বাংলা- ৫৬৮ নং হাদিস)
আমাদের আকিদা ও বিশ্বাসঃ উল্লেখিত হাদিসের আলোকে আগুন অথবা ঘন্টা দুটিই যন্ত্র বা মাইকের মাঝে বিদ্যমান। কারেন্ট/ বিদ্যুৎ তথা আগুন, সেই আগুন দ্বারাই একনকার সময়ে করা হচ্ছে নামাজর আহবান।মািকের হরনে টোকা দেওয়া ঘন্টার কাজের একটি রুপ।
আমাদের প্রশ্নঃ অনেক আলেমরা বলে থাকেন, মিলাদ কোরআন হাদিসের কোথাও নাই, নিলাদ নবীজী (সাঃ) আমলে ছিলনা। মাইক ও তো এমন বিষয় যা নবীজী (সাঃ) এর যুগে ছিলনা। তবে কিভাবে মাইক বা বিভিন্ন যন্ত্র ইবাদত চলতে পারে?
বিঃদ্রঃ উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলা তাদের একখানা একপেজের প্রচারপত্র থেকে সরাসরি তুলে দেওয়া। তাদের কাগজে ১৪ টার মতো এরকম রেফারেন্স ছিল। এগুলা তারা যেগুলাকে বেশি প্রকাস করে সেগুলা তুলে ধরা হলো।