আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
131 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (9 points)

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, 

১/জাফরানের কালি দিয়ে কুরআনের আয়াত সাদা কাগজে লিখে,  উপরিউক্ত কাগজটি পানিতে চুবিয়ে সুস্থতার নিয়তে সেই পানি খাওয়া কি জায়জ হবে?

২/জৈনেক ব্যাক্তি জ্বীন, জাদুর সমস্যায় আক্রান্ত।তার সেই সমস্যা সমাধানে  মাদ্রাসার একজন সম্মানিত আলেমের শরণাপন্ন হলে তিনি অন্যান্য চিকিৎসার সাথে সাথে চিকিৎসা হিসে তাবিজ দিতে চাইলে,রোগীর অভিভাবক তাবিজ না নিয়ে পানি ও তেল পড়া দেওয়ার অনুরোধ করলেন।হুজুরের চিকিৎসার পুরো প্রসেসটা টা দেখে  পরবর্তীতে স্পষ্টটই মনে হয়েছে উনি সরাসরি জ্বীনের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করান।যা কিনা একেবারের স্পষ্ট। এটা বুঝার পর পরবর্তীতে আর হুজুরের কাছে যাওয়া হয়নি।(পোস্ট বড় হয়ে যাওয়ার আশংখায় চিকিৎসার নমুনাটা দেওয়া এখানে সম্ভব হচ্ছে না)


জানার বিষয় হলো,যে কোন সমস্যায় কিংবা উপরোক্ত সমস্যা সমাধানে তাবিজ ব্যবহার কিংবা সরাসরি জ্বীনের  সাহায্য নিয়ে করা চিকিৎসা গ্রহন করা কি কোনভাবে বৈধ হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কয়েক প্রকার তাবিজ,ঝাড়ফুক জায়েজ নয়। যথা-

১-কুরআন হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুক দেয়া ছাড়া শুধু তামা, পিতল বা লোহা দ্বারা তাবিজ বানিয়ে লটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ শুধু এগুলো লটকানো দ্বারাই রোগমুক্ত হওয়া যাবে বিশ্বাস করে তা লটকানো নাজায়িজ।

২-এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দুআয়ে মাসূরা ব্যতিত শিরকী কথা লিপিবদ্ধ থাকে।

৩-তাবীজকে মুয়াসসার বিজজাত তথা তাবীজ নিজেই আরোগ্য করার ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাবিজ লটকানো। এ বিশ্বাস জাহেলী যুগে ছিল, বর্তমানেও ইসলাম সম্পর্কে কিছু অজ্ঞ ব্যক্তিরা তা মনে করে থাকে।

৪-যে কালামের অর্থ জানা যায় না এমন শব্দ দ্বারা তাবিজ লেখা।

৫-আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাবিজ লেখা।

এ সকল সুরতে সর্বসম্মত মতানুসারে নাজায়িজ ও হারাম এবং শিরক। এতে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু তাবিজে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুআয়ে মাসুরা বা শিরকমুক্ত অর্থবোধক থাকলে তা  জায়িজ।  কেননা এসব তাবিজের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত তথা আরোগ্যের ক্ষমতা আল্লাহ তাআলাকেই মনে করা হয়। যেমন ডাক্তার প্রদত্ত ঔষদের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত আল্লাহকে মনে করার কারণে তা নাজায়িজ নয়। যদি মুয়াসসার বিজজাত ঐ ঔষধকে মনে করলে ঔষধ সেবনও হারাম হবে।
.
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعَلِّمُهُمْ مِنَ الْفَزَعِ كَلِمَاتٍ: «أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ» وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ يُعَلِّمُهُنَّ مَنْ عَقَلَ مِنْ بَنِيهِ، وَمَنْ لَمْ يَعْقِلْ كَتَبَهُ فَأَعْلَقَهُ عَلَيْهِ

আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন,তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে,সে যেন  أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৯৫}

এ হাদীস স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ তাঁর অবুঝ সন্তানদের জন্য তাবীজ লিখে তা লটকিয়ে দিতেন।

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ উল্লেখ করেন-

إنما تكره العوذة إذا كانت بغير لسان العرب ، ولا يدرى ما هو ولعله يدخله سحر أو كفر أو غير ذلك ، وأما ما كان من القرآن أو شيء من الدعوات فلا بأس به

নিশ্চয় নিষিদ্ধ তাবীজ হল যা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় লিখা হয়, বুঝা যায় না তাতে কি আছে? অথবা যাতে জাদু, কুফরী ইত্যাদি কথা থাকে। আর যেসব তাবীজে কুরআন বা দুআ সম্বলিত হয় তা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। {ফাতওয়ায়ে শামী- এইচ এম সায়ীদ ৬/৩৬৩}
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আকীদা বিশুদ্ধ রেখে সুস্থতার নিয়তে সেই পান খাওয়া জায়েজ হবে।

তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে যেহেতু এ পুরা বিষয়ই নাজায়েজ, তাই তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন,কোনো সমস্যা নেই। 

আরো জানুনঃ   

(০২)
যেকোনো সমস্যার কারনে উপরে উল্লেখিত নিয়মাবলির আলোকে তাবিজ দেয়া হলে আকীদা বিশুদ্ধ রেখে সেটি ব্যবহার করলে সেটির ব্যবহার জায়েজ হবে।
,
★জ্বীনের সাহায্য নেয়ার ক্ষেত্রে জীন যদি কুরআন হাদীসের আলোকে কাজ করে,কোনো কুফরি শিরকি কিছু না করে,কাহারো ক্ষতি ইত্যাদি না করে,তাহলে সেক্ষেত্রে জীনের সাহায্য নেয়ার অনুমতি রয়েছে। 

নতুবা জায়েজ হবেনা।

فتسخیر الجن ان کان بالعزائم الشرکیۃ أو غیر مفہومۃ المعنی لایجوز مطلقا وان کان بکتاب اللہ تعالی أو أسمائہ ، فان کان دفعا للمضر ۃ وازالۃ لمکائد الجن وأذاہ عن نفسہ أو عن غیرہ جاز الخ ۔ (احکام القرآن: ۳/۵۱۴، اشرفیہ ، دیوبند
সারমর্মঃ-
জীনকে বশিভূত করা,নিজ কাজে নিয়োজিত করা, যদি শিরকি বাক্য বা অর্থবোধক নয়,এমন বাক্য দ্বারা হয়,তাহলে কোনোভাবেই তাহা জায়েজ নেই।
আর যদি আল্লাহর কিতাব,বা আল্লাহর নাম দিয়ে হয়,আর তাহা যখন ক্ষতি দূরকরনের জন্য হয়,এবং জীনদের কষ্ট,চক্রান্ত ইত্যাদি দূর করনের জন্য হয়,তাহলে তাহা জায়েজ আছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...