بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
বরকত মানুষের জন্য জরুরি বিষয়। এমন
অনেক মানুষ আছেন, যারা দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন, সে হিসেবে ধন-সম্পদ,
সন্তান-সন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতেও
বরকত নেই। আবার অনেকে কঠোর পরিশ্রম করেন কিন্তু প্রাপ্তি সেভাবে আসে না। কাজে কোনো
বরকত নেই। পক্ষান্তরে এমন অনেক লোক আছেন, যারা কম হায়াত পেয়েছেন কিন্তু ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি,
আমল-ইবাদতে বরকত লাভ করেছেন।
অনেক অল্প পূজিতে ব্যবসা এবং অল্প বেতনে চাকরি করার পরও তার রিজিকের অভাব নেই। পরিবারে
অফুরন্ত বরকত।
সুতরাং সব কাজে বরকত অনেক জরুরি বিষয়।
আর বান্দার রিজিক বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়গুলো হলো-
১. তাওবাহ-ইসতেগফার: হরজত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যারা বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করে; তাদের সামনে যত সংকটই (অভাব) থাকুক না কেন, মহান আল্লাহ তাআলা তা সমাধান করে দেন।’ (মুসতাদরেকে হাকেম) সুতরাং বেশি বেশি তাওবাহ-ইসেতগফার করা।
২. তাকওয়ার ওপর অটল থাকা: আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাকে ভয় করলে তিনি বান্দার প্রতি
বরকত বা কল্যাণ দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّهٗ
مَخۡرَجًا - وَّ یَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ
لَا یَحۡتَسِبُ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ ؕ اِنَّ
اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ ؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِکُلِّ شَیۡءٍ قَدۡرًا
‘আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস
হতে রুযী দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ
করবেনই। আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)
সুতরাং শিরক, কুফর ও নেফাক থেকে নিজেদের ঈমানকে হেফাজত করতে হবে। সব হারাম
থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহকে সব বিষয়ে বেশি বেশি ভয় করতে হবে। তবেই আল্লাহ তাআলা
ওই বান্দার জন্য আসমানি ও জমিনের সব রিজিকে বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন।
৩. আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক
রাখা: আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ
নেমে আসে। এটি অনেক পরীক্ষিত একটি আমল। আত্মীয়-স্বজন তথা মা-বাবা, ভাই-বোন তথা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা।
হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে,
তার রিজিক বাড়াতে চায়
বা প্রশস্ত করতে চায়; তার হায়াত বা আয়ুকে দীর্ঘ
করতে সে যেন আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক
রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৪. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা
করা: অভাব থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে,
রিজিকে বরকত পেতে চাইলে
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়ার বিকল্প নেই। যে কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার
কথা মহান আল্লাহ এভাবে বলেছেন-
وَ قَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ
دٰخِرِیۡنَ
‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক,
আমি তোমাদের ডাকে সাড়া
দেব। যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ,
ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে
প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির/মুমিনুন : আয়াত ৬০)
৫. ইবাদতের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখা: ইবাদত তথা নামাজে
খুব বেশি মনোযোগী হওয়া। নিজে যেমন প্র্যত্যেক ওয়াক্তর নামাজ পড়তে হবে তেমনি পরিবারের
লোকদের নামাজ পড়ানো ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। আর তাতে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে
দেবেন বলে এভাবে ঘোষণা করেছেন-
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের
আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমি আপনাকে
রিজিক দেই এবং আল্লাহকে ভয় করার পরিণাম শুভ তথা কল্যাণকার।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১৩২)
৬. কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো: কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক
বাড়ানো খুবই জরুরি। কুরআন তেলাওয়াত,
অধ্যয়ন এবং কুরআন অনুযায়ী
জীবন গড়া। যে যতবেশি কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াবে তার জন্য ততবেশি বরকত নেমে আসবে।
যে ঘরে কুরআন তেলাওয়াত হবে, কুরআনের চর্চা হবে,
কুরআনের ওপর আমল করা হবে, সে ঘরেই নেমে আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও কল্যাণ। আল্লাহ
তাআলা একাধিক আয়াতে বলেন-
وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ
وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
‘এটি এমন একটি কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি,
খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয়
কর; যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৫৫)
অর্থাৎ যা কুরআনুল কারিমে অনুসরণ করবেন, তাদের জন্য এ কিতাব হবে বরকতের কারণ। আর যারা এ থেকে দূরে সরে
যাবে তা হবে তাদের জন্য অমঙ্গলজনক হওয়ার কারণ।
৭. সকালবেলা কাজ শুরু করা: দিনের শুরুতে কাজ শুরু করা। যদি কারো অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য একটু বেলা করে হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং
নিজ ঘরের কাজ দিয়ে হলেও সকাল সকাল কাজ শুরু করা। কেননা সকালবেলার কাজে আল্লাহ তাআলা
বরকত দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا
হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে সকালবেলা
বরকত দান করবেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে- তিনি
বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য সকালবেলার সময়টাতে বরকত দেয়া হয়েছে।
সুতরাং কেউ যদি সকালের সময়টিতে ঘুমিয়ে
থাকে তবে কিভাবে বরকত আসবে। এ কারণেই দিনের শুরুতে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু
করার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ করা জরুরি।
৮. আল্লাহর ওপর ভরসা করা:বরকত লাভের অন্যতম চাবি বা আমল হলো আল্লাহর ওপর ভরসা করা। মুমিন
যত বেশি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে ততবেশি তাকে সাহায্য করবেন। পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতি
আস্থা, নির্ভরতা বা ভরসা যতি বেশি কমবে, সে ততবেশি অপমাণিত ও লাঞ্ছিত হবে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন- ‘আল্লাহর প্রতি যেরকম ভরসা বা আস্থা রাখা দরকার, তোমরা যদি সেই মাপের আস্থা রাখতে পার, তাহলে আল্লাহ তাআলা পাখিকে যেভাবে রিজিক দেন তোমাদেরও সেভাবে
রিজিক দেবেন।’
৯. সালামের ব্যাপক প্রচলন করা: পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ সালামের ব্যাপক প্রচলন করা বরকত লাভের অন্যতম
মাধ্যম। পরিপূণ সালাম হলো-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَ رَحْمَةُ اللهِ وَ
بَرَكَاتُهُ
অর্থ : ‘আপনার উপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’
সুতরাং জীবনে বরকত লাভে সহজ ও প্রচলিত
এ আমলগুলোর প্রতি একটু খেয়াল রাখলেই বা যত্নবান হলেই জীবনে নেমে আসবে অবিরত রহমত, বরকত।
১০. আল্লাহর জন্য হিজরত করা: আল্লাহ তাআলা অনেক নেয়ামত দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রেখেছেন, তা অনুসন্ধানে হিজরত বা দেশে-বিদেশ ভ্রমণ করা। আল্লাহ তাআলা
দুনিয়াব্যাপী ভ্রমণ তথা রিজিকের তালাশ করা।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে
পারলে মহান আল্লাহ বান্দার সব অভাব দূর করে দেবেন। রিজিকে বরকত দেবেন। বিশেষ
করে এই দোয়াটি
পড়বেন
اللَّهُمَّ اكْفِني بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ ،
وَأغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِواكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনী বি হালালিকা
আন হারামিকা, ওয়া আগনিনী বিফাজলিকা আম্মান সিওয়াকা।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩,
আহমদ ১৩২১)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে এতটুকু পরিমাণ
হালাল রিজিক দান কর যা আমার জন্য যথেষ্ট হবে এবং হারাম অর্থের কোনো প্রয়োজন হবে না।
তুমি ব্যতীত আর সবার থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও।
সুতরাং উপরের আমলগুলি করার পাশাপাশি
সবর করবেন ও কোন রাকীর নিকট থেকে রুকইয়া শরইয়্যাহ আলোকে দিকনির্দেশনা নিতে পারেন।