বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
খুনছা(হিজড়া)দুই প্রকার যথাঃ-
(১)মুশকিল
(২)গায়রে মুশকিল।
গায়রে মুশকিল হল,যার মধ্যে অনায়াসে পুরুষ বা মহিলা নির্ণায়ক আলামত বিদ্যমান রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বুঝা যায় যে, সে পুরুষ বা মহিলা।এটা নির্ধারণ করা এত মুশকিল ব্যাপার নয়।
বরং সে এমন একজন পুরুষ যাতে অতিরিক্ত সৃষ্ট রয়েছে।অথবা সে এমন একজন মহিলা যাতে কিছু অতিরিক্ত সৃষ্ট রয়েছে।এ সমস্ত হিজড়াদের ওরাছত বা সম্পদপ্রাপ্তিসহ বিবিধ হুকুম-আহকাম প্রযোজ্য করার ব্যাপারে তার কাছ থেকে প্রকাশিত(নারী-পুরুষ নির্ণায়ক) আলামতই এক্ষেত্রে ধর্তব্য হবে।
★খুনছা মুশকিলঃ
যার কাছে পুরুষ বা মহিলার কোনো আলামত প্রকাশ হয়নি।এবং এটাও জানা যায়নি যে,সে আসলে পুরুষ নাকি মহিলা?
অথবা উভয় আলামত-ই তাতে বিদ্যমান রয়েছে।
মোটকথা বুঝাগেল খুনছাও দু-প্রকার।
(ক)যার মধ্যে দুটি লিঙ্গই রয়েছে,তবে দুটিই বরাবর।
(খ)যার মধ্যে কোনো লিঙ্গই নেই।বরং তাতে একটি ছিদ্র রয়েছে।(২০/২১)
খুনছা(হিজরা) পুরুষ নাকি মহিলা না সে খুনছা মুশকিল?তার পরিচায়ক আলামত সমূহ কি কি?এসম্পর্কে বিস্তারিত মূলনীতিমূলক আলোচনা হচ্ছে,
ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦُ ﺃَﻣْﺮُ ﺍﻟْﺨُﻨْﺜَﻰ ﻗَﺒْﻞ ﺍﻟْﺒُﻠُﻮﻍِ ﺑِﺎﻟْﻤَﺒَﺎﻝ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺘَّﻔْﺼِﻴﻞ ﺍﻵْﺗِﻲ : ﺫَﻫَﺐَ ﺟُﻤْﻬُﻮﺭُ ﺍﻟْﻔُﻘَﻬَﺎﺀِ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﺨُﻨْﺜَﻰ ﻗَﺒْﻞ ﺍﻟْﺒُﻠُﻮﻍِ ﺇِﻥْ ﺑَﺎﻝ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺬَّﻛَﺮِ ﻓَﻐُﻼَﻡٌ، ﻭَﺇِﻥْ ﺑَﺎﻝ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﺮْﺝِ ﻓَﺄُﻧْﺜَﻰ، ﻭَﺇِﻥْ ﺑَﺎﻝ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻓَﺎﻟْﺤُﻜْﻢُ ﻟِﻸْﺳْﺒَﻖِ، ﻭَﺇِﻥِ ﺍﺳْﺘَﻮَﻳَﺎ ﻓَﺬَﻫَﺐَ ﺍﻟْﻤَﺎﻟِﻜِﻴَّﺔُ ﻭَﺍﻟْﺤَﻨَﺎﺑِﻠَﺔُ ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻳُﻮﺳُﻒَ ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻨَﻔِﻴَّﺔِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻋْﺘِﺒَﺎﺭِ ﺍﻟْﻜَﺜْﺮَﺓِ، ﻭَﺣُﻜِﻲَ ﻫَﺬَﺍ ﻋَﻦِ ﺍﻷْﻭْﺯَﺍﻋِﻲِّ، ﻷِﻥَّ ﺍﻟْﻜَﺜْﺮَﺓَ ﻣَﺰِﻳَّﺔٌ ﻹِﺣْﺪَﻯ ﺍﻟْﻌَﻼَﻣَﺘَﻴْﻦِ، ﻓَﻴُﻌْﺘَﺒَﺮُ ﺑِﻬَﺎ ﻛَﺎﻟﺴَّﺒْﻖِ، ﻓَﺈِﻥِ ﺍﺳْﺘَﻮَﻳَﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﺣِﻴﻨَﺌِﺬٍ ﻣُﺸْﻜِﻞٌ،
ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﺒُﻠُﻮﻍِ ﻓَﻴَﺘَﺒَﻴَّﻦُ ﺃَﻣْﺮُﻩُ ﺑِﺄَﺣَﺪِ ﺍﻷْﺳْﺒَﺎﺏِ ﺍﻵْﺗِﻴَﺔِ :ﺇِﻥْ ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﻟِﺤْﻴَﺘُﻪُ، ﺃَﻭْ ﺃَﻣْﻨَﻰ ﺑِﺎﻟﺬَّﻛَﺮِ، ﺃَﻭْ ﺃَﺣْﺒَﻞ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً، ﺃَﻭْ ﻭَﺻَﻞ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ، ﻓَﺮَﺟُﻞٌ، ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻇُﻬُﻮﺭُ ﺍﻟﺸَّﺠَﺎﻋَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻔُﺮُﻭﺳِﻴَّﺔِ ﻭَﻣُﺼَﺎﺑَﺮَﺓِ ﺍﻟْﻌَﺪُﻭِّ ﺩَﻟِﻴﻞٌ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﺟُﻮﻟِﻴَّﺘِﻪِ ﻛَﻤَﺎ ﺫَﻛَﺮَﻩُ ﺍﻟﺴُّﻴُﻮﻃِﻲُّ ﻧَﻘْﻼً ﻋَﻦِ ﺍﻹْﺳْﻨَﻮِﻱِّ، ﻭَﺇِﻥْ ﻇَﻬَﺮَ ﻟَﻪُ ﺛَﺪْﻱٌ ﻭَﻧَﺰَﻝ ﻣِﻨْﻪُ ﻟَﺒَﻦٌ ﺃَﻭْ ﺣَﺎﺽَ، ﺃَﻭْ ﺃَﻣْﻜَﻦَ ﻭَﻃْﺆُﻩُ، ﻓَﺎﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟْﻮِﻻَﺩَﺓُ ﻓَﻬِﻲَ ﺗُﻔِﻴﺪُ ﺍﻟْﻘَﻄْﻊَ ﺑِﺄُﻧُﻮﺛَﺘِﻪِ، ﻭَﺗُﻘَﺪَّﻡُ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻤِﻴﻊِ ﺍﻟْﻌَﻼَﻣَﺎﺕِ ﺍﻟْﻤُﻌَﺎﺭِﺿَﺔِ ﻟَﻬَﺎ , ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟْﻤَﻴْﻞ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳُﺴْﺘَﺪَﻝ ﺑِﻪِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻌَﺠْﺰِ ﻋَﻦِ ﺍﻷﻣَﺎﺭَﺍﺕِ ﺍﻟﺴَّﺎﺑِﻘَﺔِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻣَﺎﻝ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝ ﻓَﺎﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻭَﺇِﻥْ ﻣَﺎﻝ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻓَﺮَﺟُﻞٌ، ﻭَﺇِﻥْ ﻗَﺎﻝ ﺃَﻣِﻴﻞ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻤَﺎ ﻣَﻴْﻼً ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ، ﺃَﻭْ ﻻَ ﺃَﻣِﻴﻞ ﺇِﻟَﻰ ﻭَﺍﺣِﺪٍ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﻓَﻤُﺸْﻜِﻞٌ , ﻗَﺎﻝ ﺍﻟﺴُّﻴُﻮﻃِﻲُّ : ﻭَﺣَﻴْﺚُ ﺃُﻃْﻠِﻖَ ﺍﻟْﺨُﻨْﺜَﻰ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔِﻘْﻪِ، ﻓَﺎﻟْﻤُﺮَﺍﺩُ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﻤُﺸْﻜِﻞ
ভাবার্থঃ-
★বালিগ হওয়ার পূর্বে হিজড়া সন্তান প্রস্রাবের মাধ্যমে পুঃ বা মহিলা নির্ধারিত হবে।নিম্নবর্ণিত আলোচনা লক্ষণীয়। জামহুর উলামায়ে কেরামদের মতে যদি হিজড়া সন্তান পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পূর্বে পুঃলিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে বালক/পুরুষ।
আর যদি সে স্ত্রীঃলিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে নারী হিসেবে গণ্য হবে।কিন্তু যদি সে উভয়টা দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সর্বাগ্রে যেটা দিয়ে প্রস্রাব বের হবে সেটার ধর্তব্য হবে।
যদি দুটি থেকে একসাথে প্রস্রাব বের হয় তাহলে মালিকী ও হাম্বলী উলামায়ে কেরামসহ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রাহ এর মতে অধিকাংশের উপর ভিত্তি করে নারী-পুরুষ নির্ধারিত হবে।এবং ইহা ইমাম আওযায়ী রাহ থেকেও বর্ণিত আছে।কেননা দুটি আলামতের মধ্যে একটিতে অধিকাংশ সময়ে প্রস্রাব আসাটার আলাদা একটা প্রভাব অবশ্যই রহিয়াছে।সুতরাং অধিকাংশকে অগ্রগামীর মত মূল্যায়ন করা হবে।
যদি এতেও বরাবর থাকে তাহলে মুশকিল বলেই গণ্য হবে।
★আর বালেগ হওয়ার পর নিম্নোক্ত আলামত সমূহের মাধ্যমে হিজড়া বিষয়টির হুকুম-আহকাম নির্ণীত হবে।
যদি তার দাড়ি উঠে যায়,বা পুঃলিঙ্গ দিয়ে বীর্য বের হয় বা সে কোনো মহিলাকে গর্ভবতী করে দিতে সক্ষম হয় বা মহিলার সাথে সঙ্গম করতে সক্ষম হয়,তাহলে সে পুরুষ।ঠিকতেমনিভাবে যদি কারো কাছ থেকে সাহসিকতা,গোড়সওয়ারের যোগ্যতা ও প্রবণতা এবং শত্রুর সামনে ধর্য্য ধারণের প্রবণতা প্রকাশ পায়,তাহলেও তা তার পুরুষত্বের উপর প্রমাণ করবে।যেমন ইমাম সুয়ূতী রাহ আল্লামা ইসনাওয়ী রাহ থেকে বর্ণনা করেন।
কিন্তু যদি হিজড়া সন্তার বালেগ হওয়ার পর স্তন প্রকাশ পায় এবং তার থেকে দুধ বাহির হয়,বা উক্ত মহিলা হায়েযা হয়ে যায়,এবং পুরুষ তার নির্দিষ্ট স্থানে সঙ্গম করতে সম্ভব হয়,(বা সে পুরুষের সাথে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সঙ্গম করতে সক্ষম হয়)
তাহলে সে নারী।বিশেষ করে সন্তান জন্ম দেয়া বা গর্ভধারণ করা কারো নারী হওয়ার বড় প্রমাণ।
যদি উপরোক্ত কোনো আলামতই পাওয়া না যায়,তাহলে সর্বশেষ আকৃষ্ট প্রবণতার মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্ধারণ করা হবে।যদি সে পুরুষের দিকে আকৃষ্টতা অনুভব করে তাহলে সে মহিলা।আর যদি সে মহিলার দিকে আকৃষ্টতা অনুভব করে তাহলে সে পুরুষ।
যদি সে নারী-পুরুষ উভয়ের দিকেই আকৃষ্ট হয় বা নারী-পুরুষ কারো দিকে আকৃষ্টতা অনুভব না করে, তাহলে সে "খুনছা মুশকিল"।ইমাম সুয়ূতী রাহ বলেন,ফেকাহর কিতাবে যেখানেই খুনছা(হিজড়া)র আলোচনা এসেছে সেখানেই খুনছা মুশকিল উদ্দেশ্য।(২০/২১)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)
হিজড়া জান্নাতে যাওয়ার পর,তাদের সকল ইচ্ছাকে পূর্ণ করা হবে।যদি তারা হুর চায় তাদেরকে দেয়া হবে।খুছা গায়রে মুশকিল হলে,তাদেরকে বিপরীত লিঙ্গের হুর গিলমান দেয়া হবে।আর মুশকিল হলে,জান্নাতে তাদের লিঙ্গকে নির্ধারণ করে বিপরীত লিঙ্গের হুর গিলমান দেয়া হবে।
(২)
খুনছা গায়রে মুশকিল হলে,শিশুবেলায়,তাদের লিঙ্গকে নির্ধারণপূর্বক অতিরিক্ত বিপরীত লিঙ্গের আ'লামত সমূহকে সার্জারীর মাধ্যমে দূর করার রুখসত রয়েছে।