بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
নির্দিষ্ট একটি
কিতাবেই সকল হাদীস বিদ্যমান নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন কিতাব অধ্যায়ন করতে হবে।
হাদীসের কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী-উল্লাহ মুহাদ্দিসে
দেহলবী রহ. তাঁর ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ নামক কিতাবে এরূপ পাঁচ স্তরের কথা উল্লেখ
করেছেন।
প্রথম স্তর: এ
স্তরের কিতাবসমূহে কেবল সহীহ হাদীসই রয়েছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটি- মুয়াত্তায়ে
ইমাম মালিক, বুখারী
শরীফ ও মুসলিম শরীফ। সকল হাদীস বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে,
এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদীসই সহীহ।
দ্বিতীয় স্তর:
এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারনত সহীহ ও হাসান
হাদীসই রয়েছে। ضعيف حديث এতে খুব কম। নাসাঈ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ এ স্তরের কিতাব। সুনানে-দারামী,
সুনানে ইবনে মাজাহ এবং শাহ ওয়ালি-উল্লাহ
রহ.-এর মতে মুসনাদে ইমাম আহমাদও এ স্তরের অন্তভুক্ত। এই দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল
মাজহাবের ফকীহগণ নির্ভর করে থাকেন।
তৃতীয় স্তর: এ
স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান,যাঈফ, মা’রুফ ও মুনকারসহ সকল প্রকারের হাদীসই রয়েছে। মুসনাদে
আবী ইয়া’লা, মুসনাদে
আবদুর রাযযাক, বায়হাকী,
ত্বাহাবী ও ত্বাবরানী রহ.-এর কিতাবসমূহ
এ স্তরেরই অন্তর্ভুুক্ত।
চতুর্থ স্তর: হাদীস
বিশেষজ্ঞদের বাছাই ব্যাতিত এ সকল কিতাবের হাদীস গ্রহণ করা হয় না। এ স্তরের কিতাবসমূহে
সাধারণত যঈফ হাদীসই রয়েছে। ইবনে হিব্বান রহ. এর كتاب
الضعفاء, ইবনুল-আছীর রহ. এর كامل
ও খতীবে বাগদাদী,
আবূ নুআইম-এর কিতাবসমূহ এই স্তরের কিতাব।
পঞ্চম স্তর: উপরের
স্তরেগুলোতে যে সকল কিতাবের স্থান নেই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।
সহীহাইনের বাইরেও
সহীহ হাদীস রয়েছে
বুখারী ও মুসলিম
শরীফ সহীহ হাদীস এর কিতাব। কিন্তু সমস্ত সহীহ হাদীসই যে বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে তা
নয়। ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন: ‘আমি আমার এ কিতাবে সহীহ ব্যতীত অন্য কোন হাদীস গ্রহণ
করিনি এবং বহু সহীহ হাদীসকে আমি বাদও দিয়েছি।’
ইমাম মুসলিম রহ.
বলেন: ‘আমি এ কথা বলি না যে, এর বাইরে যে সকল হাদীস রয়েছে সেগুলো সব যঈফ হাদীস।’ সুতরাং এ
দুই কিতাবের বাইরেও সহীহ হাদীস ও সহীহ কিতাব রয়েছে। শায়েখ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী
রহ. এর মতে সিহাহ সিত্তাহ, মুয়াত্তা
ইমাম মালিক ও সুনানে দারামী ব্যতীত নিম্নোক্ত কিতাবসমূহও সহীহ,
যদিও বুখারী ও মুসলিমের পর্যায়ের নয়।
১. সহীহ ইবনে খুযায়মা-
আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (৩১১ হি.) এর কিতাব।
২. সহীহ ইবনে হিব্বান-
আবূ হাতিম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান (৩৫৪ হি.) এর কিতাব।
৩. আল মুসতাদরাক-
হাকিম-আবূ আবদুল্লাহ নিশাপুরী (৪০২ হি.) এর কিতাব।
৪. আল-মুখতারাহ-
যিয়াউদ্দীন আল-মাকদিসী (৭০৪ হি.) এর কিতাব।
৫. সহীহ আবূ আ’ওয়ানা-
ইয়াকুব ইবনে ইসহাক (৩১১ হি.) এর কিতাব।
৬. আল-মুনতাকা-
ইবনুল জারুদ আবদুল্লাহ ইবনে আলী।
এছাড়াও মুহাম্মাদ
ইবনে মুহাম্মাদ রাজা সিন্ধি (২৮৬ হি.) এবং ইবনে হাযাম জাহেরী (৪৫৬ হি.) এরও এক একটি
সহীহ কিতাব রয়েছে বলে কোন কোন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ এগুলোকে
সহীহ বলে গ্রহণ করেছেন কি না বা কোথাও এগুলোর পান্ডুলিপি বিদ্যমান আছে কি না তা জানা
যায়নি।