আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
174 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তাদ,

১. 'ওয়াহিদ সাদিক' নামের অর্থ কি?এই নাম রাখা জায়েজ? জায়েজ না হলে এখন কি করা যেতে পারে?

২. এই যুগের ব্রাশ কি মিসওয়াক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে?

৩. "এক দিঘল দিনে নবিজি ﷺ " বইয়ে নবিজি ﷺ এর দিনের ২৪ ঘন্টা কিভাবে কাটাতেন তার উপর লেখা।  উক্ত বইয়ে দেয়া যে, ইশার সালাতের পর পরেই রাসুলাল্লাহ ﷺ ঘুমাতেন না। তিনি উম্মুল মু'মিনিনদের সময় দিতেন এবং আবু বাকার ও উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমার সাথে খিলাফতের নানা বিষয়ে আলাপ করতেন। এক্ষেত্রে আমাদের প্রতিদিনের আমল কিরূপ হবে? ইশার সালাত পরে সাথে সাথেই ঘুম দিবো নাকি অন্য কিছু দীনি কাজ করে ঘুম দিব?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
ভালো নাম রাখা পিতা-মাতার সর্বপ্রথম দায়িত্ব। আমরা এভাবেও বলতে পারি যে, পিতা-মাতার উপর সন্তানের সর্বপ্রথম হক হচ্ছে, তার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

من حق الولد على الوالد أن يحسن اسمه ويحسن أدبه.

অর্থ : সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক। -মুসনাদে বাযযার (আলবাহরুয যাখখার), হাদীস ৮৫৪০

হযরত আবুদ দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ، وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ.

কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে ডাকা হবে- অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখ। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৪৮
,
আরো জানুনঃ 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
وَاحِد ج وُحْدَان [وحد]
[ওয়াহিদ] শব্দের অর্থঃ-
এক
একক
একজন
একটি
একই
অনন্য
একবচন 


صَادِق [صدق]
[ছাদিক,সাদিক] শব্দের অর্থঃ-
সত্য
সৎ
সত্যবাদী
খাঁটি
প্রকৃত
আন্তরিক

যে আসমায়ে হুসনা শুধুমাত্র আল্লাহ তা'আলার সিফাতে মাখছুছ(বিশেষত সিফাত) অর্থে ব্যবহৃত হয়।সেই আসমায়ে হুসনা সমূহকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য ব্যবহার করা জায়েয হবে না। বিস্তারিত জানুন- 463


তবে সেই নাম বা সিফাতের দিকে কোনো নামকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা জায়েয আছে।যেমন আব্দুল ওয়াহিদ।এখানে আবদ অর্থ গোলাম।যাকে ওয়াহিদ সিফাতের দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে।

আপনার বর্ণনাকৃত নাম,'ওয়াহিদ সাদিক' এখানে সম্বন্ধ করা হয়নি,তাই এ রকম নাম রাখা জায়েয হবে না।

(০২)
এই ব্যাপারে ইসলামী স্কলারদের বিভিন্ন রকমের মতামত রয়েছে।

কেহ কেহ বলেন,
মিসওয়াকের সুন্নতের দুটি দিক আছে। এক. দাঁতের পরিচ্ছন্নতা; যেমনঃ-
কয়েক দিন মিসওয়াক না করার দরুন মুখে দুর্গন্ধ হলে তা মাকরুহ। দুই. আরেকটি দিক হলো মিসওয়াক করার মাধ্যম, যার দ্বারা দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে।

টুথপেস্ট, ব্রাশ ও মাজন দিয়ে মিসওয়াক করার ক্ষেত্রে মিসওয়াকের সুন্নতের প্রথম দিকটি আদায় হবে। ইমাম নববী (রহ.) বলেন,  দাঁতের দুর্গন্ধ ও ময়লা দাগ পরিষ্কার করার জন্য যেকোনো জিনিস দিয়ে মিসওয়াক করলেই দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত করার সুন্নত আদায় হয়ে যায়। (শরহে মাজহাব ১/২৮১)

কিন্তু দ্বিতীয় সুন্নতটি আদায় তখনই হবে, যখন মিসওয়াকটি রাসুল (সা.)-এর মিসওয়াকের মতো (লাকড়ির) হবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল ১/৬৫)

চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলে ব্রাশ মেসওয়াকের সমপর্যায়ের না। আসলে প্রায় সব টুথপেস্টই দাঁতের ক্ষতি করে। এমন টুথপেস্ট কমই আছে যেটা দাঁতের ক্ষতি করে না এবং দাঁতের জন্য উপকারী।

এছাড়াও আমরা যখন মেসওয়াক করি তখন মেসওয়াক দাঁত দ্বারা চিবিয়ে নেই। আর দাঁতের মাধ্যমে চিবিয়ে মেসওয়াক করা সুন্নত। ডাক্তাররা বলেছেন, দাঁতে জীবাণুর কারণে মাড়ির দাঁতে রক্ত সঞ্চালন হয় এবং মেসওয়াকের দ্বারা দাঁতের মুখগুলো খুলে যায়। এছাড়াও মেসওয়াক দাঁতের জন্য নানাভাবে ব্রাশের তুলনায় উপকারী ।

ব্রাশ কখনো চাবানো হয় না তাই কৃত্রিম ব্রাশ কখনো অকৃত্রিম মেসওয়াকের সমপর্যায়ের হতে পারেনা। 

★শায়েখ উছায়মীন রহঃ বলেন, ব্রাশ-পেস্ট ব্যবহার করায় সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কারণ এর ছওয়াব বস্ত্তর কারণে নয়, বরং কাজ ও তার ফলাফলের উপর। আর শুধুমাত্র মিসওয়াক ব্যবহারের চেয়ে ব্রাশ-পেস্ট ব্যবহারে অনেক বেশী ফলাফল অর্জিত হয় (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, ৭/২)।

কেউ কেউ বলেন,  মিসওয়াকের সুন্নত তো সুনিশ্চিতভাবে মিসওয়াক দ্বারাই আদায় হবে। এজন্য যে যে ক্ষেত্রে মিসওয়াক সুন্নত সেখানে মিসওয়াকই করা উচিত। এক্ষেত্রে অন্য কিছুকে মিসওয়াকের নিশ্চিত বিকল্প বলা যায় না। হাঁ ব্রাশ দ্বারা যেহেতু দাঁত পরিস্কার হয় তাই কেউ যদি ব্রাশ করতে চায় তাহলে ঘুমানোর আগে বা ভারি খাবারের পর করতে পারে।  দ্বিতীয়ত ব্রাশ তো করা হয়ে থাকে সাধারণত এক-দু’বার। সকালে ও রাতে। ওযুর সাথে পাঁচ ওয়াক্ত ব্রাশ করার জন্য পকেটে ব্রাশ ও পেস্ট রাখে কে? তাই মিসওয়াকের সাথে ব্রাশের প্রসঙ্গ টেনে আনা কোনোভাবেই ঠিক নয়। সুন্নাহ্র উপর আমল সুন্নাহসম্মত পদ্ধতিতে হওয়া চাই। তবেই পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ সুন্নাহ পালনের নূর ও বরকত।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উপরোক্ত সকল মতামতকে সামনে রেখে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে টুথব্রাশ দিয়ে মিসওয়াক করলে পরিপূর্ণ সুন্নত আদায় হবে না।

(০৩)
অন্য কোনো দ্বীনি জরুরি কাজ থাকলে সেটি করে ঘুমানো যাবে।
এতে সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...