জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হ্যা সে আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষনকারী ও তাওয়াকক্বুলকারী হিসেবে গন্য হবে।
আবার কিছু দোয়া আল্লাহ তায়ালা এইভাবে কবুল করেন যে সেটার বিনিময়ে দুনিয়াতে কিছু দেননা,তবে আখেরাতে অনেক নিয়ামত দেন।
যা দেখে মুমিনরা বলবে যে হায় আমার সব দোয়াই যদি দুনিয়াতে কবুল না করা হতো!
,
(০২)
হ্যাঁ উক্ত ছুরতেও সে আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষনকারী হতে পারবে।
তবে শর্ত হলো ধৈর্য ধারন করতে হবে।
মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরনের বিপদ আসে। কখনো রোগ-শোকে কাতর হয়ে যায় মানুষ। কখনো অর্থ-কষ্টে জর্জরিত হয় জীবন। বিপদ যেমনই আসুক- মুমিন ধৈর্য ধারণ করে। কারণ, মুমিন যদি বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ এর বিনিময় দান করেন এবং এর কারণে গোনাহ মাফ করেন। এমনকি শরীরে কাঁটা ফুটলেও এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা গোনাহ মাফ করেন।
সায়েব ইবনে খাল্লাদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ شَيْءٍ يُصِيبُ الْمُؤْمِنَ حَتّى الشّوْكَةِ تُصِيبُهُ إِلّا كَتَبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةً أَوَ حَطّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً.
মুমিন যে ধরনের বিপদেই আক্রান্ত হোক না কেন, এমনকি কাঁটা ফুটলেও এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা একটি নেকি লেখেন অথবা একটি গোনাহ মাফ করে দেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৫৬০; সহীহ মুসলিম (আয়েশা রা. থেকে), হাদীস ২৫৭২
একবার নবীজী প্রচ- জ্বরে কাঁপছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. নবীজীর কাছে হাজির হলেন। একপর্যায়ে নবীজী বললেন-
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى إِلّا حَاتّ اللهُ عَنْهُ خَطَايَاهُ، كَمَا تَحَاتّ وَرَقُ الشّجَر.
মুমিন যখন কোনো (বিপদ বা) কষ্টে নিপতিত হয় তখন আল্লাহ এর বিনিময়ে তার গোনাহগুলো (ঝরিয়ে দেন) মাফ করে দেন যেমন (শীতকালে) গাছের পাতা ঝরে পড়ে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৪৭
বিপদে মুমিন শুধু ধৈর্য ধারণই করে না; বরং আল্লাহ যে অবস্থায় রেখেছেন তার উপরই শুকরিয়া আদায় করে, ফলে আল্লাহ তার গোনাহগুলো এমনভাবে মাফ করেন, যেন সে সদ্যভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশু, যার কোনো গোনাহই থাকে না। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করলে সুস্থ অবস্থায় সে যে নেক আমল করত তার সওয়াবও দান করা হয়।
শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. ও সুনাবিহী রা. এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন? তিনি উত্তরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন, বললেন, আল্লাহর নিআমতের মধ্যে আছি। তা শুনে শাদ্দাদ রা. বললেন, তুমি গোনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنِّي إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنًا، فَحَمِدَنِي عَلَى مَا ابْتَلَيْتُهُ، فَإِنّهُ يَقُومُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمّهُ مِنَ الْخَطَايَا، وَيَقُولُ الرّبّ عَزّ وَجَلّ: أَنَا قَيّدْتُ عَبْدِي، وَابْتَلَيْتُهُ، فَأَجْرُوا لَهُ كَمَا كُنْتُمْ تُجْرُونَ لَهُ وَهُوَ صَحِيحٌ.
আমি যখন আমার কোনো মুমিন বান্দাকে বিপদে আক্রান্ত করি আর এ অবস্থার উপরও সে আমার প্রশংসা করে তখন সে (রোগের) বিছানা থেকে সেদিনের মত পাপমুক্ত হয়ে ওঠে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। এবং আল্লাহ ফিরিশতাদের বলেন, আমিই আমার বান্দাকে (আমল থেকে) বিরত রেখেছি এবং পরীক্ষায় নিপতিত করেছি; সুতরাং সে সুস্থ অবস্থায় যে নেক আমল করত এ অসুস্থ অবস্থায়ও সে নেক আমলের সওয়াব লিখতে থাক। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১১৮
মানুষের বিপদ কখনো হয় শারীরিক অসুস্থতার দ্বারা, কখনো সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে, আবার সন্তান-পরিবার আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমেও বিপদ আসে। তো যে ধরনের বিপদেই মুমিন আক্রান্ত হোক না কেন, এর বিনিময়ে তার গোনাহ মাফ হতে থাকে। গোনাহ মাফ হতে হতে একপর্যায়ে সে গোনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে। তাই যে কোনো ধরনের বিপদেই মুমিন হতাশ হয়ে যায় না; ধৈর্য ধারণ করে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُؤْمِنِ أَوِ الْمُؤْمِنَةِ، فِي جَسَدِهِ، وَفِي مَالِهِ، وَفِي وَلَدِهِ، حَتّى يَلْقَى اللهَ وَمَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيئَةٍ.
মুমিন পুরুষ, মুমিন নারী বিপদাক্রান্ত হতে থাকে; সে বিপদে কখনো আক্রান্ত হয় শরীর, কখনো সম্পদ, কখনো সন্তান-সন্ততি। (এসকল বিপদে মুমিন ধৈর্য ধারণ করে, ফলে আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করতে থাকেন।) একপর্যায়ে সে গোনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৮৫৯
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি, হাদিস : ৬৩৪০)