বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।(সূরা নিসা-৩৪)
(১)
স্ত্রী দ্বীন পালনে উদাসীন হলে,
প্রথম পদক্ষেপ,
উপদেশ দেওয়া :
এ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে, বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। স্বামী যে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায় কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে পারে না। স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ
বিছানায় পরিত্যাগ করা :
একই বিছানায় তার থেকে আলাদাভাবে শয়ন করা। এমন কথা নয় যে, তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতে নির্দেশিত বিছানায় পরিত্যাগ করারব্যাখ্যায় বলেছেন,
عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ»
হাকীম ইবন মুআবিয়া রহ. তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! স্বামীদের উপর স্ত্রীদের কী হক? তিনি বলেন, “যা সে খাবে তাকেও (স্ত্রী) খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর তার (স্ত্রীর) চেহারার উপর মারবে না এবং তাকে গালাগাল করবে না। আর তাকে ঘর হতে বের করে দিবে না। [আবু দাউদ: হাদীস নং ২১৪২।]
বিছানায় আলাদা করে রাখার অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তার সাথে তার বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তারসাথে সহবাস করবে না। তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে শয়ন করবে। অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস বলেন, তার সাথে স্বাভাবিক কথা ছাড়া আর কিছু বলবে না। [তাফসীর ইবন কাসীর, সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর।]
ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, স্বামীর প্রতি যদি স্ত্রীর ভালোবাসা থাকে তাহলে এ অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয়ও কষ্টকর হবে, ফলে সে সংশোধন হবে। কিন্তু ভালোবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল থাকবে-সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে না। [তাফসীরে কুরতুবী, সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর।]
তৃতীয় পদক্ষেপ
মৃদু প্রহার করা :
এটি হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আল্লাহ্ বলেন, وَاضْرِبُوهُنَّ এবং তাদেরকে প্রহার করবে। এর তাফসীরে হাফেয ইবন কাসীর [রহ.] বলেন, যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোনো কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ»
তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে, তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে। [মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।] (সংগৃহিত)
(২)
দ্বীন পালনের প্রতি স্ত্রীকে মনযোগী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করার পরও যদি স্ত্রী দ্বীন পালনের প্রতি মনযোগী হয়না,বরং ফরয ওয়াজিবের প্রতি উদাসীন থাকে,তাহলে তাকে সরি বা বেত দ্বারা অবস্থাবেধে সর্বোচ্ছ ১০টা বেত্রাঘাত করা যাবে।যেমন হাদীস শরীফে এসেছে......
ﺃﺑﻲ ﺑﺮﺩﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﻻ ﻳﺠﻠﺪ ﻓﻮﻕ ﻋﺸﺮ ﺟﻠﺪﺍﺕ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺣﺪ ﻣﻦ ﺣﺪﻭﺩ ﺍﻟﻠﻪﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﺪﻭﺩ » ﺑﺎﺏ ﻛﻢ ﺍﻟﺘﻌﺰﻳﺮ ﻭﺍﻷﺩﺏ
তরজমা- নবী কারীম সাঃ বলেনঃ-
শিষ্টচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্ছ দশটা বেত্রাঘাত করা যাবে তবে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রান্ত হওয়ার হলে এর থেকেও বেশী শাস্তি দেওয়া যাবে।(যেমন ব্যবিচারির শাস্তি ১০০বেত্রাঘাত)
শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে বেত্রাঘাত ব্যতীত অন্যান্য সব রকম চেষ্টাই যখন ব্যর্থ হবে সব রকম চেষ্টাই বিফল যাবে,তখন বেত্রাঘাত করার হুকুম শরীয়ত কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে প্রদান করে।
- (১)দশের উর্দে হতে পারবে না।
- (২)চেহারায় প্রহার করা যাবে না।নবীজি সাঃ বলেনঃ-
ﺇﺫﺍ ﺿﺮﺏ ﺃﺣﺪﻛﻢ، ﻓﻠﻴﺠﺘﻨﺐ ﺍﻟﻮﺟﻪ، ﻭﻻ ﻳﻘﻞ ﻗﺒﺢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺟﻬﻚ " ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﻫﻮ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﻴﻦ ﺑﺄﻟﻔﺎﻅ ﺃﺧﺮﻯ
তরজমা- যখন শরয়ী প্রয়োজনে কেউ প্রহার করবে তখন সে যেন চেহারায় প্রহার করা থেকে বিরত থাকে,এবং সে যেন তাকে (রাগবশত)এ কথা না বলে যে,আল্লাহ তোমার চেহারাকে (সমস্ত বরকত থেকে বঞ্চিত করে)অমঙ্গল করুক।
- (৩)বিশেষ এমন কোন স্থানে প্রহার করা যাবে না যেখানে বেশী ব্যথা পাওয়া যায় বা অন্য কোন সমস্যার সম্ভাবনা থাকে,যেমনঃ পেট,লজ্জাস্থান,ইত্যাদি।
- (৪)রাগান্বিত অবস্থায় প্রহার করা যাবে না।
সালামা কালাম ও কুশল বিনিময় পর্ব সামপ্ত করার পর যখন দেখবেন যে সে আপনার কথা শুনার জন্য মুখিয়ে আছে বা মানষিক ভাবে প্রস্তুত আছে,তখনই আপনি দাওয়াতের কথা শুরু করবেন।তখন আপনার দাওয়াত ফায়দা দায়ক হবে।