بسم الله الرحمن الرحيم
চেহারা আল্লাহ তাআলার নেআমত, তাঁর বিশেষ দান। আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর
চেহারা দিয়েছেন মানুষকে। মানুষের মাঝে সবচেয়ে সুন্দর চেহারা দিয়েছেন নারীকে। সাদা-কালো, ধূসর, বাদামী কত রঙের, কত বর্ণের মানুষ। কত মানুষের কত রূপ। কোটি
কোটি মানুষের মাঝে একজনের চেহারা আরেকজনের সাথে মেলে না। এটা আল্লাহর কুদরত, তাঁর কুদরতের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন,
وَمِنْ
آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ
وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী
ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন
রয়েছে। (রূম ৩০ : ২২)
স্বভাবতই মানুষ আয়না দেখে। আয়না দেখা ও পরিপাটি থাকা রাসুল
(সা.)-এর সুন্নত। প্রতিটি মানুষের উচিত চেহারা দেখে আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করা।
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে যেন ভুলে না যাই। এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম কি? তা শিখিয়েছেন নবী মুহাম্মদ সা.।
আয়না দেখার সময় কী দোয়া পড়তে হয়- এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা
রয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আয়না দেখার সময় এই দোয়া পড়তেন-
اللهم أنت حسّنت خلقي فحسن خُلقي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা হাস্সানতা খালক্বি, ফাহাসসিন খুলুক্বি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারায় সৌন্দর্য দিয়েছেন। অতএব
আমার চরিত্রেও সৌন্দর্য দান করুন। (আহমদ, হাদিস : ২৪৩৯২; আবু ইয়ালা, হাদিস : ৫০৭৫)
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলতেন-
اللهُمَّ أَحْسَنْتَ خَلْقِي ، فَأَحْسِنْ
خُلُقِي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহসানতা খালক্বি, ফাআহসিন খুলুক্বি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারা সুন্দর করেছেন। অতএব
আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন। (সহিহুল জামে, হাদিস : ১৩০৭)
আলি ইবনে আবি তালিব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেন
তখন বলতেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ ، اللَّهُمَّ كَمَا
حَسَّنْتَ خَلْقِي فَحَسِّنْ خُلُقِي
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতা খালক্বি ফাহাসসিন
খুলুক্বি।
অর্থ : আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা, হে আল্লাহ আপনি আমার অবয়ব সুন্দর করেছেন, অতএব আমার আচরণও সুন্দর করে দিন। (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হাদিস : ১৬৩)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন আয়না দেখতেন তখন তিনি
বলতেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي حَسَّنَ خَلْقِي
وَخُلُقِي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি হাসসানা খালক্বি ওয়া খুলুক্বি; ওয়া যানা মিন্নি মা শানা মিন গাইরি।
অর্থ : আল্লাহর শোকরিয়া, যিনি আমার চেহারা ও আচরণে সৌন্দর্য দিয়েছেন
এবং আমাকে অন্য কারো অসৌন্দর্য থেকে রক্ষা করে সুন্দর করেছেন। (আবু ইয়ালা, হাদিস : ২৬১১)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেন, তখন তিনি বলতেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَوَّى خَلْقِي
فَعَدَلَهُ ، وصَوَّرَ صُورَةَ وَجْهِي فَحَسَّنَهَا، وَجَعَلَنِي مِنَ
الْمُسْلِمِينَ
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি সাওয়া খালক্বি ফাআদালাহু, ওয়া সাওয়ারা সুওরাতা ওয়াজহি ফাহাসসানাহা, ওয়া জাআলানি মিনাল মুসলিমিন।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে ন্যায়সঙ্গতার সঙ্গে
পূর্ণতা দিয়েছেন। আমার মুখাবয়ব সুন্দরভাবে তৈরি করেছেন এবং আমাকে মুসলিম বানিয়েছেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) হাতে আয়না নিয়ে তাতে তাকিয়ে
বলতেন,
الحمد لله ، أكمل خلقي ، وحسن صورتي ، وَزَانَ
مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহ, আকমালা খালক্বি, ওয়া হাস্সানা সুওরাতি, ওয়া যানা মিন্নি মা শানা দত গাইরি।
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার অঙ্গ-সৌষ্ঠবের পূর্ণতা দিয়েছেন
এব আমার অবয়ব সুন্দর করেছেন। অন্যের অসুন্দরতা থেকে আমাকে রক্ষা করে সৌন্দর্য দিয়েছেন।
(জাওয়ায়েদুজ জুহদ : ১১৭৪)
★প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনি ভাই/বোন!
আয়নায় মুখ দেখা বিষয়ক যেসব দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে হাদিস বিশারদের বিভিন্ন মতামত
রয়েছে। তারা হাদিসগুলো নির্ণয় করে বেশ কিছুকে দুর্বল হাদিস সাব্যস্ত করেছেন। তবে আমলের
ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস অনুসরণে অসুবিধা নেই। সুতরাং আয়না দেখার প্রচলিত দোয়া
যে, পড়া যাবে না বিষয়টি এমন নয়।