আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
426 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
edited by
আসসালামু আলাইকুম, শায়েখ।

আমার করা আগের প্রশ্নগুলা দেখার অনুরোধ করছি শায়েখের
কাছে।

https://ifatwa.info/56539/

https://ifatwa.info/56343/

https://ifatwa.info/56429/

https://ifatwa.info/54940/

আমি ওসিডি বা এক প্রকার মানসিক রোগে আক্রান্ত। যার দরুন আমার মনে সবসময় বিভিন্ন ধরনের আজে বাজে খেয়াল আসে। মাঝে মাঝে এমন খারাপ কথা মনে আসে যা মুখে উচ্চারণ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। ইদানিং তালাকের কথা আমার মাথায় সবসময় ঘুরপাক খায়। মনের ভিতর সবসময় তালাক,তালাক শব্দ আসতে থাকে। অনেক সময় মনে হয় আমার মুখ দিয়ে তালাক শব্দ বের হয়ে যাবে। তখন আমি আমার মুখ চেপে ধরে রাখি। আবার কিছু সময় যেমন,  খাবার সময়, গোসল করার সময়, হাচি দেবার সময়, নামাজ পড়ার ভিতরে মনে হচ্ছে আমি তালাক শব্দ উচ্চারণ করে ফেলছি। মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হলেই মনে হচ্ছে তালাক বলে ফেললাম। এসব ভেবে ভয়ে বুকের ভিতর ধড়ফড় করে। কোন কিছুতেই শান্তি পায় না। এর আগেও আপনাদের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। আপনারা বলেছেন আপনি ওয়াসওয়াসার স্বিকার। আপনার তালাক পতিত হবে না। কিন্তু একটা বিষয় আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে তা হল :

(১) গতকাল নিঃশব্দে মুখ নাড়িয়ে ফেলেছি। ঠিক তখনি তালাকের কথা আমার মনে চলে আসায় সন্দেহ হচ্ছে আমি কি তালাক শব্দ বললাম?
তবে আমি স্পষ্টভাবে কানে তালাক শব্দ শুনিনি।
এতে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ???

(2) ওয়াইফ এর উপর হালকা রাগ করে একা একা ব্রাশ করছিলাম। ব্রাশ করতে করতে মনের ভিতর তালাক,তালাক শব্দ আসছিল। ঠিক তখনি জিব্বা নড়ে গেল।তখন আমার মনে হচ্ছে আমি তালাক বললাম মনে হয়। সন্দিহান হয়ে পড়ছি। তবে আমি কোন স্পষ্টভাবে তালাক বলা নিজের কানে শুনিনি। মনে মনে তালাক বললেও আমার কাছে এতটায় রিয়েল মনে হয় যেন আমি সত্যি সত্যি উচ্চারন করলাম মনে হয়।

এতে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ???
#আমাকে কিছু পরামর্শ দিবেন শায়েখ। যেন আমি এই মানসিক ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।

1 Answer

0 votes
by (58,500 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

তালাকের কথা চিন্তা করল কিন্তু সে শব্দ করে উচ্চারন করল নাবা তার  জিহবা নড়ল নাঅর্থাৎ সে মনে মনে বললতাহলে তালাক পতিত হবে না। কারণ শুধু অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন।

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ ".

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেননবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (সহীহ বুখারী ২৫২৮)

 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفٰى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِه„ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ

قَالَ قَتَادَةُ إِذَا طَلَّقَ فِي نَفْسِه„ فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেনযতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে।

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেনঃ মনে মনে তালাক দিলে তাতে কিছুইতালাক হবে না। [বুখারী শরীফ ৫২৬৯.২৫২৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৮৩ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮)

 

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ-   

قال في الدر فلو طلق أو استثنی ولم یسمع نفسہ لم یصح في الأصح (درمختار شامی: ۱/۳۹۵)

সারমর্মঃ কেহ যদি তালাক দেয়,বা ইস্তেছনা করে,নিজে নিজে যদি তাহা শুনতে না পারে,তাহলে উক্ত তালাক সহীহ হবেনা।

 

তালাক দেওয়ার অধিকার শুধু স্বামীর। তবে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার দিয়ে দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে স্ত্রী সে তার নিজের নফসের উপর তালাক দিতে পারবে। এভাবে বললে (আমি আমার নিজের উপর তালাক দিলাম) তালাক হবে। অন্যথায় স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে যে, ‘আমি তোমাকে তালাক দিলাম’। তাহলে এতে কোনো তালাক পতিত হয় না।

ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমলঃ 

ইবনে হাজার আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯) এসেছেতাঁকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت لذلك لم يثبت بل يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها وعمل بقضيتها فإنها لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم

অর্থাৎএর ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াএমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবেযেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবেএক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।

 

এর সর্বোত্তম প্রতিকার হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করাلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ পড়াআউযুবিল্লাহ্ পড়া তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

 

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة

সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’ (নাসাঈ )

 

ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان

ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হলএকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াএমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

 

১-২না, এতে কোনো সমস্যা হবে না এবং এর দ্বারা আপনার স্ত্রীর কোনো তালাক পতিত হবে না। তবে আর তালাক নিয়ে কোনো চিন্তা ফিকির করবেন না এগুলো চিন্তা থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলবেন। কারণ, ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হলএকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াএমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...