বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
(১) তাওবা ও ইস্তিগফার মুমিন জীবনের সার্বক্ষণিক ওযীফা।
আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন,
قُلْ يَاعِبَادِي الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”।(সূরা যুমার ৫৩)
হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে সত্তর থেকে এক শতবার তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৩০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭০২)
রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করে-
التائب من الذنب كمن لا ذنب له
অর্থঃ গুনাহ থেকে তাওবাকারী ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার কোন গোনাহ নেই।–সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৪২৫০
খাঁটিভাবে তাওবা করলে আল্লাহ্ তাআলা অতীতের ছোট বড় সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তবে বান্দার কোন হক নষ্ট করে থাকলে তাওবার পাশাপাশি তাকে তার হক তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বা মাফ চেয়ে নেওয়া জরুরী।
তাওবা তিনটি জিনিসের সমন্বয়-
এক. পূর্বের গোনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। আর অপরের হক নষ্ট করলে তা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বা মাফ চেয়ে নেওয়া।
দুই. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
তিন. আল্লাহ্ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আর ইস্তেগফার হল শুধু মৌখিকভাবে আল্লাহ্ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
তওবা করার শুরুতে ২ রাকাত তাওবার নফল নামাজ পড়ার পর তওবা করা উত্তম, সুন্দর পদ্ধতি , এটাই বুযুর্গানে দ্বীনদের বাতলিয়ে দেওয়া আমল। তবে এটা জরুরী নয়৷ বরং উপরে উল্লেখিত তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে তওবা করলেও যথেষ্ট হবে৷
(২) কারোর নিকট বান্দার হক পাওনা থাকলে, প্রথমে উক্ত হক পরিশোধের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। সাধ্যমত চেষ্টা করার পরও যদি সেই হককে আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে উক্ত প্রাপ্য হক্বকে সেই ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিবে এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট খালিছ নিয়তে তাওবাহ করবে। আল্লাহ তা'আলা কারো প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলে নিজ পক্ষ্য থেকে বান্দার হককে আদায় করে দিবেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ حَدَّثَنَا سَعِيدٌ الْمَقْبُرِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ ২৪৪৯.৬৫৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ক, আপনি প্রথমে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার রেখে যাওয়া জিনিসটা ফিরিয়ে দিবেন৷ এটা যদি কোনো ভাবেই সম্ভব না হয় এবং সে অপরিচিত হয়ে থাকে তাহলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া ঐ রেখে যাওয়া জিনিসটা গরীব কাউকে সদকাহ করে দিবেন৷
খ, আপনি প্রথমে মূল মালিকের কাছেই ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন অর্থাৎ যার টাকা চুরি করেছেন তার কাছেই৷ যদি সরাসরি চুরি সম্পদ বলে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা লাগে তাহলে তাকে হাদিয়া বা গিফটের কথা বলেও ফিরিয়ে দিতে পারেন৷ এটা যদি কোনো ভাবেই সম্ভব না হয় এবং সে অপরিচিত হয়ে থাকে তাহলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব কাউকে সদকাহ করে দিবেন৷
অতঃপর তওবা করলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন৷
তওবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- ifatwa.info/5905/