বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
শরীয়ত অনুমোদিত প্রয়োজনে যদি কোনো মহিলা ঘর থেকে বের হন,এবং নামাযের কোনে জায়গা না পান,তাহলে ইশারা করে নামায পড়বেন।পরবর্তীতে যখন সুযোগ হবে তখন আবার উক্ত নামাযকে দোহরিয়ে পড়ে নিবেন।
জরুরী অবস্থায় নামায সম্পর্কে ফাতওয়ায়ে রাহমানিয়াতে(১/৩৪৮পৃঃ) সবিস্তারে বর্ণিত আছে,প্রয়োজনীয় কিছু অংশ নিচে উল্লেখ করছি......
এখানে তিনটি বিষয় জেনে রাখার দরকারঃ
- দাঁড়িয়ে নামায পড়া ।
- কিবলার দিকে মুখ রাখা ।
- নিয়ম মুতাবিক রুকু-সিজদা সহ নামায পড়া । অর্থাৎ, ইশারায় রুকূ সিজদা না করা ।
যদি ট্রেন বা লঞ্চে বা বাসে উল্লেখিত তিনটির কোন একটি করা সম্ভব না হয়, তাহলে সে নামায ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে নিবে । কিন্তু পরে দোহরানো জরুরী ।
গাড়ীতে লঞ্চে বা বাসে নামায পড়ার নিয়ম এই যে, প্রথমে দাঁড়িয়ে তাহরীমা বাঁধার পর পড়ে যাওয়ার ভয় থাকলে হেলান দিয়ে বা কোন কিছুকে ধরে দাঁড়াবে । মনে রাখতে হবে- হাত বাঁধা সুন্নাত । কিন্তু দাড়ানো ফরয । কাজেই প্রয়োজনের সময় সুন্নাত তরক করে ফরয আদায় করতে হবে । গাড়ী, লঞ্চ ও বাস কিবলা থেকে ঘুরতে থাকলে মুসল্লীও ঘুরবে এবং সর্বদা কিবলামুখী থাকবে । সিজদার সময় পিছনের সিটে পা ঝুলিয়ে বসে সামনের ছিটে কম করে ১ তাসবীহ পরিমাণ সময় সিজদা করবে । আর খালি জায়গা পেলে লঞ্চে, বাস বা ট্রেনের ফ্লোরে সিজদাহ করবে । আর যদি সিজদা করার মত কোন খালি জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলে ইশারায় রুকূ-সিজদা করে নামায পড়ে নিবে । তবে এ ক্ষেত্রে গন্তব্যে স্থলে পৌঁছে নামায দুহরিয়ে পড়তে হবে । তবে যানবাহনে যদি কেউ বিনা ওযরে বসে নামায পড়ে বা কিবলা থেকে চেহারা ফিরে যায়, তাহলে নামায দুহরিয়ে নিতে হবে ।[প্রমাণঃ আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৮৮, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াহ ২/১২০]সফরের অবস্থায় নামায আদায়- পুরুষ-মহিলা যার যেভাবে সম্ভব সে সেভাবেই আদায় করবে।পুরুষ যেভাবে আদায় করবে,মহিলারাও ঠিক সেভাবেই আদায় করবে।
বি:দ্রঃ নিয়মিত জরুরী অবস্থার নামায পড়া যাবে না।যদি চাকুরীর ধরুণ এমন করতে হয়,এবং চাকুরী করা অতিপ্রয়োজনীয় হয়, তাহলে এমন চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ইবাদত পালনযোগ্য এমন কোনো বৈধ চাকুরী খুজে নিতে হবে।প্রতিটি রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নারী-পুরুষ উভয়ের বিশেষকরে নারীদের নামাযের ব্যবস্থা রাখা হুকুমতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।যাতে পথচারী তার ইবাদতকে প্রশান্তির সাথে পালন করতে পারে।পুরুষের নামাযের ব্যবস্থা অনেক জায়গায় পাওয়া গেলেও নারীদের কোনো ব্যবস্থা নেই।হুকুমতের টনক নড়াতে মুসলমানদের সজাগ হতে হবে।আল্লাহ মুসলিম জনতা এবং সরকার সবাইকে যার যার দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুক।ওজুর স্থান না পেলে তায়াম্মুম করে নিবেন।সাথে একটি পাথর রাখতে পারেন।যা দ্বারা মাসেহ করা যায়।মাথার চার ভাগের একভাগ ওজুতে মাসেহ করা ফরয।সুতরাং হিজাব খুলেই মাসেহ করতে হবে।
ولو ترك تحويل وجهة الى القبلة وهو قادر عليه لا يجزيه
যদি কেউ কিবলামুখী হয়ে নামায পড়ার সামর্থ্য থাকাবস্থায়ও কিবলামুখী না হয়, তাহলে তার নামায হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৪৪)
إذا منعه الكافر عن الوضوء والصلاة يتيمم ويصلى بالإيماء ثم يعيد إذا خرج وكذا الرجل إذا قال لغيره أن توضأت حبستك أو قتلتك فإنه يصلي بالتيمم ثم يعيد كذا في فتاوى قاضي خان المحبوس في السجن يصلي بالتيمم ويعيد بالوضوء لأن العجز إنما تحقق بصنع العباد وصنع العباد لا يؤثر في إسقاط حق الله تعالى ولو حبس في السفر يتيمم ويصلي ولا يعيد لأنه انضم عذر السفر إلى العجز الحقيقي والغالب في السفر عدم الماء فتحقق العدم من كل وجه كذا في محيط السرخسي والأصل انه متى امكنه استعمال الماء من غير لحوق ضرر في نفسه أو ماله وجب استعماله
যদি কোনো কাফির কোনো মুসলমানকে নামায ও অজু থেকে বাধা প্রদান করে, তাহলে সে তায়াম্মুম করে ইশারায় নামায পড়ে নেবে, অতঃপর নামাযকে দোহড়িয়ে পড়ে নেবে যখন সে সেখান থেকে বের হবে।ঠিকতেমনি কেউ যদি অন্য কাউকে বলে, যদি তুমি অজু কর তাহলে তোমাকে বন্দী করা হবে বা হত্যা করা হবে! তাহলে এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নেবে অতঃপর নামাযকে দোহড়িয়ে পড়ে নেবে। (কাযীখান) জেলবন্ধী ব্যক্তি নামায পড়ে নেবে তারপর অজু সহ উক্ত নামাযকে দোহড়িয়ে পড়ে নেবে।কেননা এখানে বান্দার পক্ষ্য থেকে অপারগতা এসেছে, আর বান্দার পক্ষ্য থেকে অপারগতা আল্লাহর বিধান পালনে কোনো প্রভাক ফেলবে না। সফর অবস্থায় পানি না থাকলে, তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নেবে, উক্ত নামাযকে আর দোহড়াতে হবে না, কেননা এখানে এমন অপারগতা যা আল্লাহর পক্ষ্য থেকে, সুতরাং তা আল্লাহর বিধানে প্রভাব ফেলবে। সফরে পানি না পাওয়া যাওয়াই মূল বিধান। সুতরাং সফর অবস্থায় পানি না পাওয়া গেলে অক্ষমতা সকল দিক থেকেই প্রমাণিত হবে।(মুহিত) মোটকথাঃ- যখনই নিজ জান ও মালের ক্ষতি ব্যতিত পানি ব্যবহার সম্ভব হবে, তখন পানি ব্যবহার করতেই হবে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৮)
বিস্তারিত জানতে পড়ুন-ইমদাদুল ফাতওয়া-১/৫২৪-৫৭২
আরো দেখা যেতে পারে,
(১)ফাতওয়ায়ে শামী-২/৪৯১,২/১০৮(২)ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/২৮,১৪৪(৩)আল বাহরুর রায়েক-২/১১৫, ১/১৪৪(৪)ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/৬০৮-৬০৯