আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
306 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (23 points)
1.আমার চোখের কিভবে হেফাজত করবো?  আমি বার বার চেষ্টা করার পরেউ শয়তান খুব সহজেই আমাকে হারিয়ে দেয়, (আমি অনেক ক্লান্ত) মনে হয় আমি এই গুনাহ আর কখনো ছাড়তে পারবো না

2.হারাম রিলেশন থেকে কিভাবে বাঁচব?
৩. আমার বোন যদি কোনে গুনাহ করে, হারাম রিলেশন করে এর গোনাহ কি আমার হবে?

৪.নিজের নাফসে কিভাবে বস করবো?

৫.শুধু ছোটো একটি পেন পরে ঘোমানো যাবে?

1 Answer

0 votes
by (566,790 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
নজরের হেফাজতের ব্যাপারের ইসলামী স্কলারগন কিছু উপায় বলেছেন,যাহা নিম্নরুপঃ-

১) সবসময় মনে রাখা যে আল্লাহ আপনাকে দেখছেন, আপনি যেখানেই যান আল্লাহ আপানার সঙ্গেই আছেন (তাঁর সর্বময় জ্ঞানের মাধ্যমে) হতে পারে আপনি লুকিয়ে আপনার পাশের জনকে দেখছেন যা সে জানে না, কিন্তু আল্লাহ তা জানছেন। চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন। [সূরা গাফিরঃ১৯]
২) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, মিনতি সহকারে তাঁকে ডাকা। আল্লাহ বলেন: তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [সূরা গাফিরঃ৬০]
৩) সবসময় মনে রাখবেন, আপনি যা যা নেয়ামত উপভোগ করছেন তার সবই আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছেন, আর এ জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহর দেওয়া দৃষ্টির নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে আপানাকে আপনার চোখ দুটিকে সে সব জিনিস দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে যা যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। ভাল কাজের প্রতিফল কি ভাল ছাড়া কিছু হতে পারে? তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। [সূরা নামলঃ৫৩]
৪) নিজের সাথে সংগ্রাম করা, দৃষ্টি নত রাখার জন্য নিজে নিজে অভ্যাস করার চেষ্টা করা এবং এ কাজে ধৈর্যশীল হওয়া ও হাল ছেড়ে না দেওয়া। আল্লাহ বলেন: যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [সূরা আনকাবুতঃ ৬৯]
৫) এমন সব স্থান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা যেখানে নিষিদ্ধ দৃষ্টির প্রলোভনে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে হয়। যেমন, মার্কেট, বিপনী বিতান, পর্দাহীন দাওয়াতের আসর, রাস্তা ঘাটে অলস আড্ডা, ইন্টারনেটে অহেতুক ঘাঁটাঘাঁটি ইত্যাদি। রসুল (সাঃ) বলেছেন: তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা আর এখানেই আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তিনি বললেন, “যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবা রাস্তার হক আদায় করবে।” তারা বলল, রাস্তার হক কি? তিনি (সাঃ) বললেন, ‘দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজে নিষেধ করা।’[বুখারী ২৩০৩; ইফা]
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই হাদিসটি প্রযোজ্য। এখানেও নিজের দৃষ্টিকে (নিষিদ্ধ সাইট, অন্যের প্রোফাইল অকারণে দেখার মাধ্যমে) যত্রতত্র নিক্ষেপ করা, কাউকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করা, অর্থহীন আলোচনায় লিপ্ত হওয়া অনুমোদনযোগ্য নয়।
৬) সবসময় এটা মনে রাখা যে, পরিস্থিতি যেমনই হোক, নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ বা প্রলোভন যতই বড় হোক, আপনার মনের ভেতরে যতই আবেগের তাড়না আসুক, এই ব্যপারে আপনার আর কোন পথ খোলা নেই। আপনাকে সব জায়গায়, সব সময় নিষিদ্ধ জিনিস থেকে দৃষ্টি সংযত করতেই হবে। আশেপাশের কলুষিত পরিবেশের অজুহাত দিয়ে বা আপনি প্রলোভনের শিকার হয়েছেন এসব কথা বলে নিজের দোষের সপক্ষে যুক্তি দেখানোর কোন অবকাশ নেই।
৭) বেশী বেশী করে নফল ইবাদত করা, কারণ নিয়মিত ফরজ এবাদতের সাথে সাথে নফল ইবাদত করে নিজের শারীরিক কার্যাবলীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন, “আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকবে। আমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী শোনে)আমিই তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী দেখে) আমিই তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হাত দিয়ে কাজ করে) আমিই তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী চলে) সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাঁকে আশ্রয় দেই।” [সহীহ বুখারী ৬০৫৮]
৮) এটা মনে রাখা যে আমরা যে জমীনের উপর গুনাহ করি, সেই জমীন আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের গুনাহের সাক্ষী দেবে। আল্লাহ বলেনঃ সেদিন সে (পৃথিবী) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। [সূরা জিলজালঃ ৪]
৯) যে আয়াত দৃষ্টিকে এদিক সেদিক অযথা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি নিক্ষেপ করতে নিষেধ করে তা মনে করা। যেমনঃ “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে (নিষিদ্ধ জিনিস দেখা হতে) এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” [সূরা নুরঃ৩০]
১০) অপ্রয়োজনীয় এদিক সেদিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা, শুধুমাত্র যা দেখা প্রয়োজন সেদিকে তাকানো; বিশেষ করে এমন জায়গায় অযথা দৃষ্টি না ফেরানো যেখানে এমন প্রলোভনের আশঙ্কা থাকে যা থেকে সহজে মুক্ত হওয়া কঠিন। হতে পারে সেটা আপনার আশেপাশের দৃশ্যে,  বা কোন ম্যাগাজিনে, টিভিতে, অথবা ইন্টারনেটে।
১১) বিয়ে হল একটি কার্যকরী প্রতিকার। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন: “হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে; এবং যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা, রোজা তার যৌনতাকে দমন করবে।” [সহীহ বুখারী ৪৬৯৬, ইফা]
১২) বেহেশতের হুরদের কথা মনে করা; আল্লাহ আপনাকে যা নিষেধ করেছেন তা দেখা হতে নিজেকে বিরত রাখতে উৎসাহিত করবে, যাতে আল্লাহর এই নেয়ামতের পাওয়ার আশা করতে পারেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন: ‘জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সমস্ত দুনিয়া আলোকিত ও খুশবুতে মোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর নাসীফ (ওড়না) দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।’ [সহীহ বুখারী ৬১২১; ইফা]
১৩)  যার প্রতি আকৃষ্ট বোধ করছেন তার ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা করা।
১৪)  যত্রতত্র দৃষ্টি নিক্ষেপের কুফল, এর শাস্তি ও তার যন্ত্রণার কথা চিন্তা  করা।
১৫) দৃষ্টি অবনত রাখার সুফল সম্পর্কে চিন্তা করা।
১৬)  মানুষের সঙ্গে আলচনার আসরে, জনসমাবেশে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা, এর কুফল সম্পর্কে ব্যখ্যা করা।
১৭) যেসব পোষাকে, চালচলনে, কথাবার্তায় সৌন্দর্য প্রদর্শিত হয় ও অন্যকে আকৃষ্ট করে এমন সব কিছু পরিহার করতে নিজের পরিবার ও আত্মীয়দেরকে উপদেশ দেওয়া।
১৮) যেসব কুচিন্তা ও শয়তানের ওয়াসওয়াসা মনে জাগে তা আপনাকে কাবু করে সেই অনুযায়ী কাজে পরিণত করার আগেই সাথে সাথে তা ঝেরে ফেলা। যে প্রথম দৃষ্টিতেই নিজেকে সংযত করে নেয় সে অনেক সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে; কিন্তু যে নিজেকে এই কাজেই লিপ্ত রাখে সে কখনও দৃঢ়তার সাথে মন থেকে এর কুপ্রভাব দূর করতে পারে না।
১৯) মৃত্যুর সময় নিজের কর্ম নিয়ে গভীর অনুশোচনার কথা জীবন থাকতেই চিন্তা করা ও এই করুন পরিনতির কথা চিন্তা করে ভীত হওয়া।
২০) সৎসঙ্গে থাকা। কারন মানুষ যাদের সাথে চলাফেরা করে তাদের বৈশিষ্ট্য দিয়েই প্রভাবিত হয়।
(সংগৃহীত)

(০২)
বিবাহ বহির্ভূত সব রিলেশন হারাম ও একপ্রকার ব্যভিচার বিধায় এ ধরণের রিলেশনের প্রতিটি ধাপেই রয়েছে পাপ ও ভয়ানক শাস্তি। 

★সুতরাং আপনার প্রধান কাজ তো হল আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা করা।
আর যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন। এক কথায়, মেয়েটির সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিন। যোগাযোগ বন্ধ করার কারণে মেয়েটি যদি মনোকষ্ট নেয় তাহলে আপনার কোনো গুনাহ তো হবেই না; বরং নিজে গুনাহ থেকে বাঁচার এবং মেয়েটিকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর সাওয়াব পাবেন। 

★আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে। 

★নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য উপরোক্ত চেষ্টার পরেও সফল না হলে  আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে- সামর্থ থাকলে বিবাহ করুন। 

বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। নতুবা রোযা রাখুন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (বুখারী ৫০৬৬)

(০৩)
আপনি যথাসাধ্য তাকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন।
শত চেষ্টার পরেও কাজ না হলে আপনার দায়িত্ব আদায় হবে,তাই গুনাহ হবেনা।

(০৪)
নজর হেফাজত করতে হবে।
নাটক সিনেমা ইত্যাদি দেখা থেকে দূরে থাকতে হবে।
যিকির আযকার করতে হবে।
সৎ সঙ্গীদের সাথে উঠাবসা করতে হবে।
আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

কোনো হক্কানী শায়েখের কাছেও যেতে পারেন।
তার পরামর্শ মাফিক নিজেকে চালাতে পারেন।

(০৫)
রুমে আর কেউ না থাকলে,এবং কাহারো দেখার সম্ভাবনা না থাকলে এভাবে ঘুমানো যাবে।
তবে অনুত্তম। 

এক্ষেত্রে অনুত্তম হলেও একাকী বা শুধু স্ত্রীর সামনে ঘুমানো জায়েজ আছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...